ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের নরম সুর, যুদ্ধ কি থেমে যাবে?
ODD বাংলা ডেস্ক: রাশিয়ার সঙ্গে বিধ্বংসী যুদ্ধের মধ্যে নরম সুরের ইঙ্গিত দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার জন্য তিনি আর চেষ্টা করবেন না। অথচ তার দেশে রাশিয়ার হামলার প্রধান কারণ হচ্ছে এটি।
এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।
তার এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এবার থামতে পারে রাশিয়া। বন্ধ হতে পারে যুদ্ধ। কারণ, এর আগে পুতিনও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনার জন্যই তিনি মূলত ইউক্রেনের প্রতি কঠোর হয়েছেন। এখন যেহেতু ন্যাটোতেই যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউক্রেন সেহেতু রাশিয়া এবার যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। এছাড়াও রাশিয়ার প্রতি সুর নরম করে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট দুই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র দেওয়ার বিষয়টিও মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
জেলেনস্কি বলেন, দোনেস্ক ও লুহানস্কের বিষয়েও ছাড় দিতে রাজি আছেন তিনি। অর্থাৎ এ দুই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাশিয়ার যে দাবি, সেটি তিনি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত ইউক্রেনে ক্রমেই আক্রমণ বাড়িয়েছে রাশিয়া। বিভিন্ন শহর-নগর অবরুদ্ধ করে অগ্রসর হচ্ছে রুশ বাহিনী। বাড়ছে যুদ্ধের তীব্রতা, বিপন্ন হচ্ছে মানবিকতা। সহিংসতা থেকে বাঁচতে জীবন নিয়ে পালাচ্ছে মানুষ।
বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে দিতে উভয় পক্ষ পাঁচ শহরে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আতঙ্কে শহর ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে অনেকে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্তত ২০ লাখ ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়েছেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ১৩তম দিন রাজধানী কিয়েভ, চেরনিহিভ, সুমি, খারকিভ ও মারিউপোলের বেসামরিক বাসিন্দাদের সরে যেতে মানবিক করিডোর ঘোষণা করে রাশিয়া। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে এ যুদ্ধবিরতি।
সাময়িক যুদ্ধবিরতি শুরুর পরই সকাল থেকে সেসব শহর ছাড়তে শুরু করেন স্থানীয়রা। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি ইউক্রেনের শরণার্থী পরিস্থিতিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে থাকা শরণার্থী সংকট বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এর আগে বেসামরিক লোকজনকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিরাপদে সরে যেতে দেওয়ার জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রমের প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস। সেই সঙ্গে সংঘাতকবলিত এলাকাগুলোয় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য উভয় পক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি।
পরে রাশিয়া ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। এর পরই ওই পাঁচ শহর ছাড়া শুরু করেন বাসিন্দারা। ১৩ দিন ধরে ইউক্রেনের শহরগুলোয় ভারী গোলাবর্ষণ চালিয়ে আসছে মস্কো বাহিনী। ফলে বেসামরিক বাসিন্দার অনেকে যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়তে পারেননি। এর আগেও যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে গোলাবর্ষণ না থামায় তা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। এরই মধ্যে অবরুদ্ধ মারিউপোল শহর থেকে বেসামরিক লোকদের বের করে নিয়ে যাওয়ার পথে রুশ বাহিনী গোলাবর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত এক হাজার ২০৭ জন বেসামরিক লোক হতাহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনার লিজ থ্রোসেল বলেন, এর মধ্যে ৪০৬ জন নিহত ও ৮০১ জন আহত হয়েছেন। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। বেশিরভাগই বিমান হামলা ও বিস্ফোরণে হতাহত হয়েছেন। লাখ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছেন।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, সোমবার পর্যন্ত পোল্যান্ডে ১২ লাখ চার হাজার ইউক্রেনীয় আশ্রয় নিয়েছেন; হাঙ্গেরিতে এক লাখ ৯১ হাজার, স্লোভাকিয়ায় এক লাখ ৪১ হাজার, মালদোভায় ৮৩ হাজার, রোমানিয়ায় ৮২ হাজার, রাশিয়ায় ৯৯ হাজার ৩০০ ও বেলারুশে গেছেন ৪৫৩ জন। এসব দেশে পৌঁছানোর পর এক লাখ ৮৩ হাজার ইউক্রেনীয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চলে গেছেন।
Post a Comment