মৃত্যুর ৩০ সেকেন্ড আগে মানুষ কী চিন্তা করে?

ODD বাংলা ডেস্ক: মৃত্যুর আগের কিছু মুহূর্তে একজন মানুষের মস্তিষ্কে কী চলে? অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই এই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। মৃত্যুর আগমুহূর্তে মানুষের মস্তিষ্ক তরঙ্গ রেকর্ড করেছেন গবেষকরা।

এই আবিষ্কার নিয়ে কোনো ধরনের আগাম প্রস্তুতি বা পরিকল্পনা ছিল না। কানাডার ভ্যানকুভার জেনারেল হাসপাতালে একদল বিজ্ঞানী এক রোগীর ইলেক্ট্রোএনকেফ্যালোগ্রাফি টেস্ট চলাকালীন সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে রেকর্ডিং করেন যে, মৃত্যুর ৩০ সেকেন্ড আগে মানুষ কী চিন্তা করে? মৃত্যুর আগে মানুষের মস্তিষ্কের এই কার্যক্রম প্রথমবারের মতো রেকর্ডিং করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ভ্যানকুভার জেনারেল হাসপাতালে মৃগীরোগে আক্রান্ত ৮৭ বছর বয়সী এক রোগীর মস্তিষ্কের তরঙ্গ পরিমাপ করছিলেন একদল বিজ্ঞানী। মস্তিষ্কের তরঙ্গ রেকর্ডিং চলাকালীন সময়ে হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান ওই রোগী। আর তার ফলেই মৃত্যুর সময় মস্তিষ্কে ঘটে চলা ঘটনাপ্রবাহ রেকর্ডিং হয়ে যায় ইলেক্ট্রোএনকেফ্যালোগ্রাফি (ইইজি) যন্ত্রে।

রেকর্ডিং পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, এ সময়ে ধরা পড়া মস্তিষ্কের তরঙ্গ সংকেত অবিকল স্বপ্ন দেখা বা স্মৃতিচারণা করার সময়ে উৎপন্ন হওয়া তরঙ্গ সংকেতের মতো। যার মানে, মৃত্যুর মুহূর্তে অতীতের স্মৃতি ফিরে আসে মানুষের মনে।

‘ফ্রন্টিয়ারস ইন এজিং নিউরোসায়েন্স’- এ প্রকাশিত গবেষণায় মস্তিষ্কের এ ধরনের কার্যক্রমকে জীবনের ‘অন্তিম স্মৃতিচারণ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন গবেষকরা।

গবেষণার সহ-লেখক ড. আজমল জেমার বলেন, ‘অপ্রত্যাশিতভাবে পাওয়া এই রেকর্ডিং হলো মৃত্যুকালীন কোনো মানুষের মৃস্তিষ্কের প্রথম রেকর্ডিং। এটা আসলে ভাগ্যক্রমে পেয়ে গেছি আমরা। এ ধরনের গবেষণা করার বা মস্তিষ্কের এই সিগন্যাল রেকর্ড করার পরিকল্পনা আমাদের ছিল না।’

তার মানে কি জীবনের শেষ সময়টায় আমরা প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটানো, সুন্দর স্মৃতিগুলো এক ঝলক দেখতে পাবো? ড. জেমারের মতে, এখনই তা বলে দেওয়া সম্ভব নয়। হতে পারে মস্তিষ্ক সম্ভবত খারাপ স্মৃতির চাইতে ভালো স্মৃতিই মনে করিয়ে দিতে চাইবে। কিন্তু ব্যক্তিভেদে স্মৃতিচারণের ধরন আলাদা হয়।

ডা. জেমার আরও জানান, মৃত্যুর ৩০ সেকেন্ড আগে ওই রোগীর হৃদযন্ত্র থেকে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। স্বপ্ন দেখা বা স্মৃতিচারণের সময় আমাদের মস্তিষ্ক যে প্যাটার্নে কাজ করে, ওই মুহূর্তে ওই রোগীর মস্তিষ্কের তরঙ্গও সেই একই প্যাটার্ন অনুসরণ করেছে। রোগীর হৃদস্পন্দন বন্ধ হবার পরেও ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত এই অবস্থা চলমান ছিল।

এদিকে নতুন এই গবেষণা নতুন একটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, তা হলো- মানুষের মৃত্যু আসলে কখন হয়? যখন হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায় তখন? নাকি যখন মস্তিষ্কের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়?

ডা. জেমারের মতে, মাত্র একটি গবেষণা থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব না। তাছাড়া ওই রোগী ছিলেন মৃগীরোগী; তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল যা বিষয়গুলোকে আরও জটিল করে তোলে।

গবেষক দলটির প্রত্যাশা, তাদের প্রকাশিত গবেষণার হাত ধরে মানুষের জীবনের অন্তিম মুহূর্ত সম্পর্কে নতুন এক জ্ঞানের দ্বার উন্মোচিত হবে। ড. জেমার বলেন, ‘আমার মনে হয় মৃত্যুর কাছাকাছি সময়ের যে অভিজ্ঞতা খুব রহস্যময় এবং আধ্যাত্মিক। আর এরকম চমকপ্রদ কিছু আবিষ্কার করাটা এমন একটা মুহূর্ত- যার জন্যই বিজ্ঞানীরা বেঁচে থাকেন।’

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.