অ্য়াডলফ হিটলারের সঙ্গে পুতিনের অনেক মিল! তবে কি সেই একই পরিণতি হতে চলেছে পুতিনেরও


ODD বাংলা ডেস্ক: ইউক্রেনে রুশ অভিযানের যৌক্তিকতা দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রায়ই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানির কাছে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয়ের কথা তুলে ধরেন। বার্লিনে নিজের বাঙ্কারে মাথায় গুলি করে আত্মঘাতী হয়েছিলেন অ্যাডলফ হিটলার। ইউক্রেনের যুদ্ধের শেষে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনেরও একই পরিণতি হতে চলেছে কি না, এখন সেই প্রশ্ন উঠছে। ইউক্রেনে পুতিন হিটলারের করা ভুলগুলো পুনরাবৃত্তি করছে কি না, তা নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম CNN এক ব্যাখ্যামুলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। 

এর জন্য ফিরে যেতে হবে ইতিহাসের পাতায়। ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল। রুশ সেনারাই ঘিরে ফেলেছে হিটলারের গোপন ডেরা। শত্রুর হাতে তার ধরা পড়া প্রায় নিশ্চিত। সেই অপমানের হাত থেকে রেহাই পেতে আত্মহত্যা করেছিলেন হিটলার। সেই ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে বহু বছর। ২০২২ সালের এপ্রিলে রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার দ্বিতীয় মাসে পা দিয়েছে।  তবে এতো বছর পর এই সময়ে এসে পুতিনও হিটলারের মতো নিজের পাতা ফাঁদে জড়িয়ে যাচ্ছেন বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

প্রশ্ন উঠেছে হিটলারের সঙ্গে পুতিনে মিল কোথায়? কারণ খালি চোখে যে নাৎসিদের পুতিন কার্যত ঘৃণা করেন, যে হিটলারের সোভিয়েত আক্রমণের দৌলতে পুতিন তার পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন, যেখানে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণার যুক্তি হিসেবে তিনি ইউক্রেনকে নাৎসিপন্থী বলে তকমা দিতে দ্বিধা করেননি, সেই নাৎসি নেতা হিটলার এবং পুতিনের পরিণতি কেন এক হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে! আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, মুখে নাৎসিদের নিন্দা করলেও আদতে কাজে অবিকল জার্মান একনায়ককেই অন্ধ অনুকরণ করছেন পুতিন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অনুকরণই কাল হতে চলেছে পুতিনের জন্য। পুতিন সেই ভুলগুলোই করে চলেছেন যা সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের সময় হিটলার করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে সব সিদ্ধান্ত হিটলারের দুর্ভাগ্য ডেকে এনেছিল বলে মনে করা হয়, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধেও পুতিন সেই ভুলগুলো করছেন। 

পুতিনের ঘনিষ্ঠ অনেকেই জানিয়েছেন, পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের সিদ্ধান্ত ছিল অযৌক্তিক। অথচ পুতিন যে ধরনের ঠান্ডা মাথার মানুষ তাতে এই অযৌক্তিকতা তার সঙ্গে একেবারেই খাপ খায় না। এ ব্যাপারে রাশিয়া বিশেষজ্ঞ এক ইতিহাসবিদ পিটার টি ডিসিমোনের বলেন, পুতিন যে রকম ভয়ঙ্কর মানুষ, তাতে তিনি যুক্তি-বুদ্ধিহীন কাজ করবেন এটা ভাবা যায় না। কিন্তু তার কর্মকাণ্ড ইঙ্গিত দিচ্ছে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উদাহরণ তিনি প্রায়ই বিভিন্ন প্রসঙ্গে টেনে আনেন, সেই যুদ্ধ থেকে তিনি কোনো শিক্ষাই নেননি।

পিটার বলেছেন, গত এক মাস ধরে আমি ওঁর সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে যুক্তি খোঁজার চেষ্টা করেও পাইনি। পুতিনের নেওয়া এর আগের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে তুলনা করে পিটার বলেন, পুতিন অতীতে যা করেছেন তার সঙ্গে এখনকার কাজকর্মের কোনো মিলই নেই। আর এই অমিলটি যত স্পষ্ট করে চোখে পড়ছে, তত ভয় হচ্ছে।

পুতিন ঠিক কী কী ভুল করেছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা? 
বিশেষজ্ঞদের মতে,  পুতিন যুদ্ধের সাধারণ নিয়মনীতিগুলোই মানছেন না। তিনি যুদ্ধে সেনাবাহিনী পাঠিয়েছেন, এদিকে সেনাবাহিনীর জন্য যে সরবরাহ প্রয়োজন, তার যোগানের ব্যবস্থা রাখেননি। হিটলারের সঙ্গে তুলনা করে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারও এই একই ভুল করেছিলেন। বস্তুত সোভিয়েত দখল করতে এসে জার্মান বাহিনীর পতনের একটি বড় কারণও ছিল সেটিই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিটলারের হাতে সেই সময় যে অস্ত্র আর সেনা ছিল তাতে তিনি ধরেই নিয়েছিলেন সোভিয়েত জয় করতে তার বেশি সময় লাগবে না। ঠিক যেমন পুতিন ভেবেছিলেন তিনি এক সপ্তাহের মধ্যেই ইউক্রেন দখল করে নিতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবে দুজনেই ভুল প্রমাণিত হয়েছেন। 

ইউক্রেনের যুদ্ধ এত দীর্ঘ দিন ধরে চলবে তা আন্দাজ করতে পারেননি পুতিন। ফলে তার ট্যাঙ্ক বাহিনীর জন্য জ্বালানি প্রস্তুত ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের যে ট্যাঙ্ক বাহিনীকে দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন সেনারা, সেই ট্যাংক বাহিনী ইউক্রেনের যুদ্ধে তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে না। তার অবশ্য দুটি কারণ। প্রথমত ট্যাংক ধ্বংসকারী অস্ত্র নিয়ে রাশিয়ার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে ইউক্রেন সেনারা। আর যেগুলো বেঁচে আছে সেগুলো জ্বালানির অভাবে অকেজো হয়ে পড়ছে দ্রুত। ঠিক যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান ট্যাংকের জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছিল হিটলারবাহিনী।

যুদ্ধক্ষেত্রে সরবরাহ পৌঁছনোর পরিকল্পনার অভাবের আরও একটি খেসারত দিতে হয়েছিল হিটলার বাহিনীকে।  সেনাবাহিনীকে যুদ্ধে পাঠালেও তাদের শীতবস্ত্র দিতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। শেষে রাশিয়ার ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে প্রায় আড়ই লাখ জার্মান সৈনিক মারা যান। অনেক সেনা ফ্রস্টবাইটে আক্রান্ত হন।

দুই রাষ্ট্রনেতার ভুলের মিল তুলে ধরে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধবিদ্যায় অনভিজ্ঞরাই যুদ্ধনীতি নিয়ে ভাবেন। তবে যারা দূরদর্শী তারা প্রথমে ভাবেন যুদ্ধের সরবরাহ নিয়ে। তবে সরবরাহ নীতির ব্যর্থতা ছাড়াও আরও ভুল করেছেন পুতিন। তার পরের ভুলটি হল ইউক্রেনে থাকা রাশিয়ার সমর্থকদের দূরে ঠেলে দেওয়া। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই মুহূর্তে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে একটিই আবেগ কাজ করছে। আর তা হল, ঘৃণা। যে ভাবে ইউক্রেনের হাসপাতাল, শপিংমলে বোমা ফেলেছে রাশিয়া, বসতি এলাকাগুলিকে বিস্ফোরণে ছারখার করে দিয়েছে, তাতে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে গিয়েছেন ইউক্রেনের মানুষ। এমনকি তারাও এখন রাশিয়ার বিরদ্ধে চলে গিয়েছেন যাদের আত্মীয়রা রাশিয়ায় আছেন। যদিও তারা প্রথমদিকে রাশিয়ারই সমর্থক ছিলেন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা জানান, যুদ্ধক্ষেত্রে মাত্রাছাড়া হিংসা অনেক সময়েই বিপদ ডেকে আনে। পুতিনেরও তাই হয়েছে। এই একই ভুল হিটলারও করেছিলেন। প্রথম দিকে সোভিয়েতের অনেকেই হিটলারকে মুক্তিদাতা ভেবে তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কারণ তারা সেই সময়ের শাসক স্টালিনের অত্যাচার থেকে মুক্তি চাইছিলেন। ইউক্রেনের প্রায় ৪ লাখ মানুষ সে সময় অভুক্ত থেকে মারা গিয়েছিলেন স্তালিনের নীতির কারণে। কিন্তু তারাই যখন দেখলেন, হিটলারও দেশের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছেন, তখন হিটলারের বিরুদ্ধে চলে যান তার সমর্থকরা।

হিটলারের যুদ্ধের বক্তৃতায় ব্যবহৃত শব্দের সঙ্গে পুতিনের কথাবার্তারও মিল পেয়েছেন অনেকে। এমনকি বিশেষজ্ঞরা এমনও দাবি করেছেন যে, হিটলারের আত্মজীবনী ‘মেইন ক্যাম্ফ’ থেকে লাইনও বহু বার উঠে এসেছে পুতিনের বক্তৃতায়। হিটলার জার্মানির পুরনো ইতিহাস নিয়ে গর্ব করতেন। এমনকি যুদ্ধের পর জার্মানির হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনার কথাও বলতেন। পুতিনও জানিয়েছেন, রাশিয়ার পুরনো এবং ভাল সময় নতুন করে ফিরিয়ে আনতে হলে তাদের ইউক্রেনকে চাই।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.