জানেন, আজ শিব-সতীর বিবাহ তিথি, কেন তাৎপর্যপূর্ণ আজকের দিন

ODD বাংলা ডেস্ক: বাংলায় শৈব ধর্মের শিকড় অনেক গভীরে। সামান্য কিছু বৈদিক প্রভাব ছাড়া বাংলার সংস্কৃতি মূলত বৈদিক পূর্ববর্তী সংস্কৃতিতে সম্পৃক্ত। তেমনই শৈব ধর্ম একটি অবৈদিক বা বেদ পূর্ববর্তী যুগের সংস্কৃতি। বঙ্গদেশে প্রচলিত শৈব ধর্মীয় অনুষ্ঠান গুলির মধ্যে গাজন, চরক, শিবের বিয়ে, শিবরাত্রি বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এদের মধ্যে শিবের বিয়ে একটি বিশেষ উৎসব। 

নবদ্বীপের এই উৎসবের প্রাচীনত্ব বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞগণ এটিকে অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ বছরের প্রাচীন উৎসব বলে মনে করেন। তবে নবদ্বীপ খুবই বন্যা প্রবণ একটি অঞ্চল হওয়ায়, এত পুরোনো পুঁথিপত্রের মাধ্যমে সঠিক বয়স নির্ণয় করা সম্ভব হয় নি। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে বিশেষকগণ এটিকে সাড়ে তিনশ বছরের প্রাচীন উৎসব বলে চিহ্নিত করেছেন।

সমগ্র বঙ্গদেশের মতো নবদ্বীপেও বাংলা দিনপঞ্জি অনুযায়ী চৈত্র মাসের শুক্ল ষষ্ঠি, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও বিজয়া দশমী তিথি মেনে সাড়ম্বরে পাঁচদিন বাসন্তী দুর্গা পুজো অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু, নবদ্বীপের বাসন্তী পুজোয় অতিরিক্ত সংযোজন হলো এই শিবের বিয়ের অনুষ্ঠান। বাসন্তী পুজোর শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয় শিবের বিয়ের অনুষ্ঠানটি। বাসন্তী পুজো সমাপ্ত হলে, পাঁচ দিন ধরে অনুষ্ঠিত হওয়া বাসন্তী পুজোর সুসজ্জিত মহিষাসুরমর্দিনী প্রতিমার সাথে নবদ্বীপের মন্দিরে অধিষ্ঠিত শিবের বিবাহ সম্পন্ন হয়। 

বাসন্তী পুজোর ভোরে শিবের মুখোশ তৈরি করে সেটিকে চতুর্দলায় সাজিয়ে নিয়ে বর সাজানো হয়। অন্যদিকে দুর্গা ওরফে বাসন্তী ঠাকুরকে দোলায় সাজিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে অবশেষে পোড়ামা তলায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে বাঙালি হিন্দু বিবাহ রীতি মেনে শিব ও মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গার বিয়ে দেওয়া হয়। সাতপাকে ঘোরা থেকে শুরু করে মালা বদল জলসাজ সবই হয়। এর পর আতশবাজির বাজির প্রদর্শনীর অনুষ্ঠান করা হয়।

এই বিয়েতে নানা উপহারের ব্যবস্থাও করা হয়। শহরের বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানের শ্রেষ্ঠ সামগ্ৰী এই বিয়ের যৌতুক হিসাবের দেন। খাট বিছানা আলমারী থেকে শুরু করে সাইকেল বাইক সবই দেওয়া হয়। নবদ্বীপ শহরের বিশিষ্ঠ ব্যক্তিরা বিয়ের পর আগত দর্শনার্থীদের জন্য খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করেন। লুচি-আলুদম, মিষ্টি, খিচুড়ি ইত্যাদি খাওয়ানো হয়। আজও এই প্রাচীন ধারা একই ভাবে পালিত হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.