বিশ্বে প্রথম কোথায় ট্রেন চালু হয় জানেন? আবিষ্কারের ইতিহাস জানলে চমকে যাবেন

ODD বাংলা ডেস্ক: বর্তমান যুগের অন্যতম বাহন রেলগাড়ি আবিষ্কারের পিছনে রয়েছে এক মজার ঘটনা।

ফ্রান্সে নিকোলাস-জোসেফ কুগনোট নামে ছিল এক ইঞ্জিনিয়ার। ইঞ্জিনের সাহায্যে গাড়ি চালানো যেন পেয়ে বসলো তাকে। শেষে একদিন আবিষ্কার করলেন একটি তিন চাকার গাড়ির। সামনে বয়লার রেখে বয়লারের বাষ্পকে নিয়োগ করলেন চাকা ঘোরানোর কাজে। কুগনোটের দীর্ঘকালের প্রচেষ্টা সফল হলো। গাড়িটি ঘণ্টায় চার মাইল গতিবেগে চলতে শুরু করলো। উৎসাহিত কুগনোট একদিন দুই একজন বন্ধুকে নিয়ে চেপে বসলেন গাড়িতে। তবে দুর্ভাগ্যবশত গাড়ি চলতে চলতে একসময় ধাক্কা খেলো রাস্তার ধারের একটি দেয়ালে। বয়লার গেলো ফেটে এবং কুগ নোট সহ যাত্রীরা ছিটকে পড়লেন। আঘাত গুরুতর না হওয়ায় সেদিন প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন সবাই। তবে সংবাদটা ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিলেন অনেকেই। ধারণা করেছিলেন, গাড়ি একটা বিপজ্জনক জিনিস। গাড়িতে আরোহণ করলে যেকোনো সময়ে বেঘোরে প্রাণ যাবে। 

কুগনোটের ঐ গাড়ি চালানোর ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত সরকার অবধি গড়িয়েছিল এবং সরকার জনমতের চাপে গাড়ি তৈরির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আর বেচারা কুগনোট, শুধু তার গাড়িটাকেই বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। তাকেও পুরে দেয়া হয়েছিল জেলখানার ভিতরে। 

কুগনোটের পরে আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার আরেকটি বিশেষ ধরনের গাড়ির ইঞ্জিন তৈরি করলেন। ইঞ্জিনিয়ারের নাম উইলিয়াম মারডক। এটি ছিল কুগনোটের ইঞ্জিনের চেয়ে অনেক উন্নত এবং এটিকে রেল ইঞ্জিনের প্রাথমিক রূপ বলা যায়।  গাড়ির প্রতি জনসাধারণের ভীতির জন্য মারডক দিনের বেলায় তার ইঞ্জিনকে বের করতে সাহস করেন নি। নিশুতি রাতে সবাই যখন ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল, ঠিক সেই সময় মারডক বের করছিলেন ইঞ্জিনকে। তবে ইঞ্জিনের প্রচণ্ড শব্দে স্থানীয় সব মানুষের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। তারা জেগে উঠে দেখে ক্রুব্ধ আকর্ষে ফুঁসতে ফুঁসতে কুচকুচে কালো বিরাট দৈত্যের মতো কি একটা গনগনে আগুন এবং রাশি রাশি গাঢ় ধোঁয়া ছড়াতে ছড়াতে এগিয়ে আসছে। দুর্ভাগ্যবশত গাড়ি চলতে চলতে একসময় ধাক্কা খেলো রাস্তার ধারের একটি দেয়ালে। দেখা মাত্রই শিউড়ে উঠেছিল সবাই। কোনো এক শয়তানের কীর্তি মনে করে তারা ঘরের দরজা বন্ধ করে কাঁপতে শুরু করেছিল। এদিকে ইঞ্জিনটা যখন বড় রাস্তা পার করে গির্জার কাছে এসে পৌঁছালো, তখন পাদ্রী সাহেবের ঘুম গেল ভেঙে। তিনি ধরে নিলেন দেশের মানুষের মধ্যে অনাচার এসেছে, তাই তাদের শায়েস্তা করার জন্য ঈশ্বর প্রেরণ করেছেন শয়তানকে। আর শয়তান মশাল জ্বালিয়ে পথ পরিক্রমা করছে। ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে না পারলে অচিরেই পৃথিবীটা একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে।

একটিবার মাত্র পথ পরিক্রমা করে মারডক ইঞ্জিন বন্ধ করে দিলেন। তবে সেই রাতে দেখা সেই ভয়ঙ্কর শয়তানের কথাই আলোচনা করতে লাগলেন সবাই। আর শয়তানটা কোথায় আত্মগোপন করেছে তা জানার জন্য সবাই উদগ্রীব হয়ে রইলো। শেষে আবিষ্কৃত হলো কাজটা শয়তানের নয়, মারডকের। তখন পাদ্রী সাহেব ধরে নিলেন মারডকের দেহে শয়তান ভর করেছে এবং মারডককে শয়তানমুক্ত করতে না পারলে দেশের চরম সর্বনাশ হবে।মারডকের পরিণাম কুগনোটের মতো না হলেও গাড়ি আর চালাতে পারলেন না তিনি। তবে যারা এই বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করলেন, তারা বুঝতে পারলেন ইঞ্জিনের দ্বারা প্রচুর মালপত্র বহন করে নিয়ে যাওয়া আদৌ কষ্টসাধ্য কোনো ব্যাপার নয়। তাছাড়া অনেক অনেক শক্তিশালী করে গড়ে তোলা যায় ইঞ্জিনকে। তাই জনগণের রোষ এবং সরকারের রোষকে তুচ্ছ করে গবেষকরা গোপনে গোপনে চালিয়ে গেলেন গবেষণা। কেটে গেল আরো কিছুদিন।

একসময় ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার থেকে লিভারপুল পর্যন্ত পাতা হল রেললাইন। উদ্দেশ্য ছিল লোহার পাতের উপর দিয়ে ঠেলাগাড়িতে একটু সহজে বয়ে নিয়ে যাবে কয়লাকে। সেখানকার কয়লার খনিতে কাজ করতেন এক ইঞ্জিনিয়ার। নাম তার জর্জ স্টিফেনসন। তিনি কর্তৃপক্ষকে জানালেন যদি আর্থিক আনুকূল্য লাভ করেন, তাহলে ইঞ্জিনের সাহায্যে তিনি অল্প সময়েই শত শত টন কয়লাকে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে আসতে পারবেন। শত শত মানুষ এবং শত শত ঠেলাগাড়ির দরকার পড়বে না। 

কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখলেন, স্টিফেনসন যদি কৃতকার্য হন তাহলে খরচ অনেক কম হবে এবং লাভের অংকটা দাঁড়াবে ২০ গুণ। তাই নির্দেশ দিলেন স্টিফেনসনকে এবং কিছু অর্থ বরাদ্দ করলেন। স্টিফেনসন একসময় গাড়ি তৈরি করে ইঞ্জিনে জুড়ে দিলেন। দিনও স্থির হয়ে গেল। তার কথাটা রটে গেলো চারিদিকে।

 শত শত টন কয়লাকে বোঝাই করে ছুটবে গাড়ি। সে আবার কেমন গাড়ি? দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শক ছুটে এলো সেই অদ্ভুত অত্যাশ্চার্য গাড়িটিকে দেখার জন্য। পথের দুইপাশে জনতার ভিড় একেবারে উপচে পড়লো। যথাসময়ে স্টিফেনসন গাড়িটাকে স্টার্ট দিলেন। হুঁশ হুঁশ করে ধোঁয়া ছড়াতে ছড়াতে এগিয়ে চলল গাড়ি। পথের জনতাকে সাবধান করে দেওয়ার জন্য সামনে লাল নিশান হাতে ঘোড়া ছুটিয়ে দিলেন এক অশ্বারোহী। কিন্তু গাড়ির গতি ধীরে ধীরে এমন বেড়ে গেল যে ঘোড়া তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারলো না। বাধ্য হয়ে অশ্বারোহীকে পথ ছেড়ে দিতে হলো। আর নির্দিষ্ট সময়ের ঢের আগেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেল গাড়ি। 

ফেরার পথে দর্শকদের আগ্রহে স্টিফেনসন বহুজনকে গাড়িতে করে নিয়ে এসেছিলেন। 

গাড়ির এমন তীব্র গতি দেখে সবাই সেদিন বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। গতির যে একটা আনন্দ আছে, তা সেদিন প্রথম বুঝতে পেরেছিল। এমন গতিসম্পন্ন গাড়িকে সেখানে মানুষ কিন্তু সহজে মেনে নিতে পারেননি। ভীত হয়ে উঠেছিলেন প্রতিটি মানুষ। এমনকি পার্লামেন্টের সদস্যরাও শঙ্কিত হয়ে উঠেছিলেন। প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন রাস্তায় ইঞ্জিন চলাচল করলে পথের দুই পাশের গ্রামগুলো পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। গরু বাছুর কাটা পড়বে। পুকুরের জল দূষিত হয়ে উঠবে এবং মাঠে ফসল ফলবে না। 

খনির মালিক এবং স্টিফেনসনের সর্বনাশা বুদ্ধির জন্য বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল সারাদেশ। দ্বিতীয়বার যাতে গাড়িটি স্টিফেনসন বের করতে না পারেন তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু গাড়ি চালানো বন্ধ করা যায়নি। আস্তে আস্তে সবাই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে রেলগাড়ির প্রচলন হয়েছিল সেই থেকেই।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.