প্লেনের ভেতরে কুড়াল রাখা হয় কেন জানেন?
ODD বাংলা ডেস্ক: ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে সুইজ এয়ারপ্লেন-৩৩৩ রাত ৮.৩৩ মিনিটে এয়ারপোর্ট থেকে টেকঅফ করে। এর একঘণ্টা পরই প্লেনের ভেতরে ধোঁয়ায় ভরে যায়। কেউই ঠিক বুঝতে পারছিল না যে, এই ধোয়া আসলে আসছে কোথা থেকে। এমন বিপদের মুহূর্তে যে ইলেক্টিক সিস্টেমগুলো খুববেশি কাজে আসছিল না সেগুলোকে বন্ধ করে দেয়া হয়। এমনকি অটো পাইলট এবং রেগুলেশন ফ্যানগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর পাইলট নিজেই ম্যানুয়াল প্লেন চালাতে থাকে। কিছুক্ষণ পর প্লেনের ভেতরের গরম ধোঁয়া আগুনে রূপ নিতে থাকে। আগুনে প্লেনের ভেতরে ছেয়ে যেতে থাকে। তখন প্লেনটি ছিল মাটি থেকে ১০ হাজার ফিট উচ্চতায়।
প্লেন যখন ম্যানুয়াল মুডে চলছিল সেসময় পাইলট প্লেন চালাতেই ব্যস্ত। ভেতরের আগুন থেকে তখনো বেশ খানিকটা দূরে ছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই পাইলটের কক্ষে এসে যায় আগুন। এরপরই ঘণ্টায় ৫৫০ মিটার গতিবেগে প্লেনটি সমুদ্রে ক্রাশ করে। এরজন্য দায়ী ছিল প্লেনের কিছু ত্রুটি। না যান্ত্রিক নয়, পরিকল্পনায় ভুল ছিল। মুহূর্তেই লাখো টুকরায় পরিণত হয় প্লেনটি। প্লেনের এসব টুকরোগুলো একত্র করতে সময় লেগেছিল দুই বছর।
এর সবচেয়ে বড় ত্রুটি ছিল ধোঁয়া অপসরণ করতে না পারা। যদি কোনোভাবে ককপিটের ধোঁয়া অপসারণ করা যেত। তাহলে যাত্রীরা হয়তো বেঁচে যেতে পারতেন। পাইলট পার্শ্ববর্তী কোনো দ্বীপ বা রানওয়েতে প্লেন ল্যান্ড করতে পারতেন। আর এমনটা হলে বেঁচে যেত আরো কিছু প্রাণ। কেননা প্লেন থেকে বের হওয়ার জন্য যাত্রীদের ইমার্জেন্সি দরজা থাকে। পাইলটের জন্য থাকে তার ঠিক মাথার উপরে একটি ছোট্ট দরজা। তবে এই দরজা এতোটাই ছোট থাকে যে পাইলট ঠিকভাবে বের হতে পারেন না। এজন্য পাইলটের আসনের পাশে রাখা হয় একটি কুড়াল। যেন সে যে কোনো কিছু ভেঙে প্লেন থেকে বের হতে পারে। যেমন- দরজা, জানালা বা কোনো গাছ। গাছ বলতে বোঝানো হচ্ছে ধরুন প্লেন কোনো জঙ্গলে ক্রাশ করল। সেখানে সামনে থাকা গাছ পালা কেটে যাতে পাইলট বের হতে পারেন।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন, কুড়ালের সুবিধা শুধু পাইলটের জন্যই কেন? যাত্রীরা এই সুবিধা পাবে না কেন? এর কারণ হচ্ছে যাত্রীদের এমন বিপদের মুহূর্তে বাইরে বের করার জন্য অনেক উপায় রয়েছে। ইমার্জেন্সি দরজা, জানালা কিন্তু পাইলটের জন্য সেই সময়ও থাকে না। যখন যাত্রীদের বাচানোর কাজ চলতে থাকে সেই মুহূর্তে পাইলট তার আসনে বসে শেষ চেষ্টা করছিলেন। এমনকি পাইলটের ককপিটে ইমার্জেন্সি কোনো জানালা বা দরজা থাকে না। এজন্যই পাইলটের কাছে এই সময় কুড়াল থাকা খুবই জরুরি।
অনেক প্লেনের বাইরেও কুড়াল রাখা থাকত। যাতে করে প্লেন ক্রাশ করলে উদ্ধার কর্মীরা সহজেই কুড়াল ব্যবহার করে তাদের কাজ করতে পারে। তবে এও কুড়ালের অবস্থান গোপন রাখা হত। তবে কুড়ালের অবস্থান জানাতে ব্যবহার হতো একটি প্রতীকী চিহ্ন। এছাড়াও প্লেনে থাকা সার্ভাইভাল ব্যাগে থাকে বিভিন্ন সরঞ্জাম। যাতে বিপদের সময় যাত্রীদের বাঁচে থাকতে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো হাতের কাছেই পাওয়া যায়।
তবে ১৯৯৮ সালের সেই দুর্ঘটনার পর সুইজ এয়ারপ্লেন-৩৩৩ এয়ারলাইন্স তাদের প্লেনের ডিজাইনে পরিবর্তন আনে। বেশিরভাগ প্লেনের মতোই এতে সংযুক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন সুবিধা। প্লেনে আগুন লাগলে তা দ্রুত বাইরে বের করে দেয়ার স্বয়ংক্রিয় উপায় বের করেছেন ডিজাইনাররা। সেই মতো কাজও করেছেন। এখন প্লেনে ধোঁয়ার সৃষ্টি হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাইরে বেরিয়ে যাবে। আগুন নিয়ন্ত্রণের উপায়ও আছে।
Post a Comment