যৌন সুখের অপার আনন্দ আনে অর্গাজম, এই লক্ষ্যে পৌঁছতে জি-স্পটকে কীভাবে খুঁজে পাবেন

 


ODD বাংলা ডেস্ক: সম্পর্কের কমিটমেন্টকে আজও সারাক্ষণ যৌন সম্পর্কের নিরিখে বিচার করা হয়। যেন এক পর্বতারোহী যেমন এভারেস্টে না চড়লে কল্কে পাবেন না, অনেকটা ওই রকম ব্যাপার। মানে সম্পর্কের কমিটমেন্টে পাশ করলেই তবে মিলবে যৌন জীবন- এমন এক অলিখিত চুক্তি স্বাক্ষর করে বসেন প্রেমিক-প্রেমিকারা। আর পরিণাম যৌন জীবন নিয়ে তৈরি করে অজ্ঞতা।


সময় অনেক এগিয়েছে। প্রযুক্তির বিকাশও হয়েছে। সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে সমকাম থেকে লিভ-ইন। কিন্তু যৌনতার তৃপ্তির কথা শুনলেই ঘাম ছুটে যায় আম-বাঙালির। আজও যৌনজীবন নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে ডরায় ৯০ শতাংশের বেশি বাঙালি। সেক্স-কে আজও বাঙালি এক ট্যাবু হিসাবেই দেখে যায়। কিন্তু, প্রাপ্ত বয়স্ক জীবনে যৌনতা যে জীবনের একটা উপযোগী চাহিদা- তা নিয়ে আজও রয়ে গিয়েছে ঢাক গুড়গুড়। সম্পর্কের কমিটমেন্টকে আজও সারাক্ষণ যৌন সম্পর্কের নিরিখে বিচার করা হয়। যেন এক পর্বতারোহী যেমন এভারেস্টে না চড়লে কল্কে পাবেন না, অনেকটা ওই রকম ব্যাপার। মানে সম্পর্কের কমিটমেন্টে পাশ করলেই তবে মিলবে যৌন জীবন- এমন এক অলিখিত চুক্তি স্বাক্ষর করে বসেন প্রেমিক-প্রেমিকারা। আর পরিণাম যৌন জীবন নিয়ে তৈরি করে অজ্ঞতা। ভারতবর্ষে আজও বয়ঃসন্ধিকাল মানে যৌনজীবনের অধিকার পাওয়ার সেলিব্রেশন নয়, আরও বেশি করে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া অযৌনজীবনের খোলসে। এমন এক পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবে অর্গাজম, জি-স্পট-র মতো যৌন নির্ধারক শব্দ বিস্ফোরণের মতোই শোনায়। কিন্তু, যৌনজীবনের সুখ পেতে গেলে যে অর্গাজম এবং জি-স্পট রহস্যভেদ হওয়াটা দরকার তা নিয়ে কজন খোঁজ রাখেন! 


অর্গাজমে পৌঁছনোর সিড়ি হল জি-স্পট

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অর্গাজম শুধুই যে শারীরিক যৌনতার পরিতৃপ্ত করার একটা সুখ তা নয়। অর্গাজম-এর মধ্যে দিয়ে মানসিক চাপ বা হতাশা যেমন দূর হয়, তেমনি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাওয়া থেকে মন এবং শরীরের সুস্বাস্থ্য-কে ধরে রাখতেও সাহায্য করে। আর এই অর্গাজমের রাস্তাটা তখনই সফল হয় যখন জি-স্পট বা গ্রাফেনবার্গ স্পট-এর যৌন সুখকে একটা অপরিসীম আনন্দের জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। 


শুধুমাত্র যৌন সম্ভোগেই মহিলাদের অর্গাজম পাওয়া অসম্ভব

অনেক মহিলাই মনে করেন যে শুধুমাত্র ইন্টারকোর্স বা যৌন সম্ভোগের মধ্যে দিয়েই অর্গাজম পাওয়া সম্ভব। এই ধারনা ঠিক নয় বলেই মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কারণ, তাঁদের মতে ভ্যাজাইনাল পেনিট্রেশন যৌন সম্পর্ক স্থাপনের রাস্তা, কিন্তু যৌনতার সুখ পাওয়াটা পুরোপুরি একটা মানসিক প্রক্রিয়া যা কতগুলি জিনিসের উপর নির্ভর করে। সেই বিষয় সম্পর্কে যদি কারও পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকে তাহলে অর্গাজম সম্পর্কে অবগত থাকাটা তাঁর কাছে অনেকটাই ধোঁয়াশার মতো মনে হবে। কারণ, অর্গাজম শুধুমাত্র যোনিতে কোনও কিছুর পেনিট্রেশনের উপর নির্ভর করে না, এটা যে কোনও ধরনের পেনিট্রেশন ছাড়াই হয় এবং মূলত স্পর্শ-এর উপরে এর নির্ভরশীলতা অনেকবেশি। এমন এক স্পর্শ যা প্রেমিক-প্রেমিকা উদ্বুদ্ধ করে এক অপরিসীম আনন্দ এবং ইজাকুলেশনের দিকে নিয়ে যেতে।



ভ্য়াজাইনাল অর্গাজমকেও অনেকে অর্গাজম পুরোটাই বলে মনে করেন

যোনিতে যখন লিঙ্গের পেনিট্রেশন হয় তখন অনেকেই মনে করেন যে এই পেনিট্রেশনের জেরে দুই অঙ্গের ঘর্ষণে যে অনুভূতি তৈরি হচ্ছে সেটাই অর্গাজম। আসলে যোনির অগ্রভাগে থাকে ক্লিটোরিস। এর সঙ্গে একটা হালকা সংঘর্ষ হয় লিঙ্গের। এই ক্লোটারিস আসলে তৈরি হয়েছে যৌন সুখের আনন্দকে বাড়িয়ে তুলতে। কিন্তু, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্লিটোরিস ভ্যাজাইনাল অর্গাজমের একটা রাস্তা হতে পারে কিন্তু তা বলে পুরো বিষয় নয়। আর অধিকাংশ প্রাপ্ত বয়স্করাই জানে না যে ক্লিটোরিসকে কীভাবে জাগ্রত করতে পারলে যৌনসুখ বৃদ্ধি পেতে পারে। এই প্রসঙ্গে এই সব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একটি গবেষণাপত্রেরও উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ সালে প্রকাশিত এই গবেষণায় নাকি দাবি করা হয়েছে ভ্যাজাইনাল অর্গাজমের মজাটা উপভোগ করতে পেরেছেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া মাত্র ১৮ শতাংশ মহিলা। এর দ্বারা প্রমাণিত যে শুধুমাত্র ভ্যাজাইনাল পেনিট্রেশন অর্গাজমের রাস্তা নয়। এমনকী একদল স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ তো ভ্যাজাইনাল অর্গাজমের অস্তিত্ব মানতেই অস্বীকার করেছেন। 


জি-স্পট কি? 

গ্রাফেনবার্গ স্পট বা জি-স্পট আসলে কি? এটা শরীরের কোথায় অবস্থান করে? এমন সব প্রশ্নের উত্তর হল জি-স্পট শরীরের কোথায় থাকে তা আজও কেউ হলফ করে বলতে পারে না। এটাকে শারীরিক গঠনতন্ত্রের কোনও অংশ বলা যায় না। কারণ আজও জি-স্পটের নির্দিষ্ট কোনও স্থান আবিষ্কার করা যায়নি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এক একজনের শরীরে এক-এক স্থানে জি-স্পট তৈরি হতে পারে। আর জি-স্পট কি- এর উত্তর হল- যৌন সম্ভোগের অপরিসীম সুখ যাকে পরিতৃপ্তির চূড়ান্ত পর্যায় বলে ধরা হয় সেখানে পৌঁছানোর জন্য এমন একটা স্থান যেখানে যৌন স্পর্শ একটা সিড়ি তৈরি করে দেয়। ২০১৭ সালে একটি গবেষণাও শুরু হয়েছিল জি-স্পটকে নির্ধারণ করতে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। 


কিল্টোরিস কি জি-স্পট

যোনির অগ্রভাগে থাকা ক্লিটোরিস যা সেক্সুয়াল প্লেজার তৈরির জায়গা বলে নির্ধারিত- তাকে অনেকে জি-স্পট বলে থাকেন। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে এটা জি-স্পটের নির্দিষ্ট স্থান হতে পারে না। তবে কারও শরীরে সত্যি যদি এমন কোনও স্থান না থাকে তাহলে ক্লিটোরিস-কে জি-স্পট বলা যেতে পারে। যদিও, টেকনিক্যালি তা ঠিক নয় বলেই মনে করেন যৌনজীবন নিয়ে গবেষণা করা এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 



কীভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে জি-স্পট

জি-স্পট খুঁজে পেতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কিছু উপায়ের কথা বলেছেন। আর এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল যৌন সম্ভোগের আগে শরীরকে যতটা পারা যায় আরামে রাখা, রিল্যাক্স করা। বলতে গেলে মানসিক এবং শারীরিকভাবে নিজেকে হালকা রাখা। নিজে নিজেই নিজের শরীরের উপরে বিভিন্ন যৌন সম্মোহণের স্পর্শে অনুভূতিকে যাচাই করা এবং শরীরের যে স্থান যৌন স্পর্শে সবচেয়ে বেশি সাড়া দিচ্ছে তাকে চিহ্নিত করতে পারেন। এই স্থানে যৌন স্পর্শে যদি শরীরে ইজাকুলেশন প্রক্রিয়া শুরু হয় তাহলে ওই স্থানটিকে জি-স্পট হিসাবে ধরা যেতে পারে। সময়ে সময়ে ওই স্থানের যৌন স্পর্শ পরখ করে দেখে নিলে আরও ভালো। অনেকের ক্ষেত্রে আবার জি-স্পট সমানে স্থান পরিবর্তন করে বলেও গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে। এমনকী, এই একই প্রক্রিয়া প্রেমিক-প্রেমিকা, দম্পতি নিজেদের মধ্যে পরখ করে দেখতে পারেন। মনে রাখতে হবে শরীর জুড়ে ক্লান্তি লেগে থাকলে তাহলে জি-স্পট খুঁজে পাওয়া কার্যত অসম্ভব। 


যোনি থেকে পিউবিক এরিয়া হয়ে নাভি-র কাছেও থাকতে পারে জি-স্পট

হাত বা আঙুলের স্পর্শ অথবা এমন কিছু যা আপনার যৌন ক্রীড়ার অনুভূতিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে- এমন কিছুর অবলম্বন নিন। আর যোনি থেকে পিউবিক এরিয়া এবং নাভির চারপাশে তা স্পর্শকে যতটা পারা যায় মায়াবী এবং যৌন সম্মোহনের বশবর্তী করে তুলুন এবং পরখ করে দেখুন যৌন অনুভূতি আপনার শরীরে এক অপার আনন্দ বা অর্গাজমের পরিবেশকে তৈরি করতে পারছে কি না। যদি এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে বুঝে যাবেন শরীরের এই স্থানেই রয়েছে আপনার জি-স্পট। এবার তার আরও নিখুঁত স্থান নির্ধারণ করতে বারবার এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারেন। 


থাই-এও অনেক সময় থাকে জি-স্পট

থাই-এর উপরেও হাত বা আঙুলের স্পর্শ অথবা এমন কিছু যা আপনার যৌন ক্রীড়ার অনুভূতিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে- এমন কিছুর অবলম্বন নিন। পরখ করে দেখুন যৌন অনুভূতি আপনার শরীরে এক অপার আনন্দ বা অর্গাজমের পরিবেশকে তৈরি করতে পারছে কি না। যদি এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে বুঝে যাবেন শরীরের এই স্থানেই রয়েছে আপনার জি-স্পট।


নিতম্বের দিক থেকে কোমড়ের উপরে

অনেক মহিলা আবার দাবি করেছেন যে তাঁদের এমন স্থানে যৌনতার স্পর্শ অর্গাজম-এর মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে। যার জন্য যৌন ক্রীড়ার স্পর্শের খেলায় শরীরের এই স্থানগুলিকেও পরখ করে দেখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন গবেষণাকারীরা। 


পিঠের উপরে শিরদাঁড়া জুড়েও থাকতে পারে জি-স্পট

এক টুকরো বরফ বা আঙুলের স্পর্শে যৌনতার অনুভূতি এইস্থানে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করুন। দেখুন কোনও স্বাভাবিক প্রতিবর্তক ক্রিয়ায় অর্গাজমের অনুভূতি তৈরি হচ্ছে কি না। যদি এমনকিছু অনুভূত করে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে জি-স্পটের ঠিকানা আপনার শরীরের এই অঞ্চল। 


এমনকিছু সেক্স পজিশন তা জি-স্পটকে জাগ্রত করে তুলতে পারে

কাউগার্ল- এই পজিশনকে আপনার সঙ্গীকে আধশোয়া করে দিন। এরপর তার উপরে নিজের যোনিকে স্থাপন করুন। আপ বা ডাউন ওয়েতে ওঠানামা নয়, এবার মুভ ফরোয়ার্ড এবং মুভ ব্যাক করুন। এর ফলে যোনিতে যে কর্ষণ প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে তাতে আপনার ভ্যাজাইনাল জি-স্পট চিহ্নিত হতে পারে। 


 ডগি স্টাইল- নিজেকে পিছনে ফিরে দাঁড় করান। সামনে বিছানা অথবা নিচু টেবিলের উপরে নিজের শরীরের উপরের অংশকে ঝুঁকিয়ে রাখুন। আর সঙ্গীকে বলুন পিছন থেকে যোনিতে পেনিট্রেশন বৃদ্ধি করতে। ভ্যাজাইনাল জি-স্পট খুঁজতে অনেক সময় এই প্রক্রিয়া কাজে লাগে। 



ক্লোজড মিশনারি পজিশন

 যৌন ক্রীড়ার খাতায় এই নামেই এর পরিচিতি। বলা হয় এই যৌন ক্রীড়ার প্রক্রিয়া স্টিমুলেশন বেশি হয়। প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। একদম কাছাকাছি দুজনকে মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। দুজনের পা-ই জোঁড়া থাকতে হবে। এবার যোন সম্পর্ক স্থাপনে যতটা সম্ভব পেনিট্রেশন করতে হবে। এরফলে একটা প্রবল ঘর্ষণ এবং কর্ষণে ভ্যাজাইনাল জি-স্পট জাগ্রত হতে পারে। আর অর্গাজম-এর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। 


নিজেরা যাচাই করুন এবং পরখ করুন, আর অর্গাজমের মজা নিন

অধিকাংশ সময়ই মহিলারা অর্গাজম নিয়ে কথা বলেন না। তাঁরা লজ্জা পান এই নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করতে। কিন্তু তাবলে নিজের যৌন জীবনে ম্যাড়ম্যাড়ে না করে তাকে উত্তেজক করে তুলুন। কারণ এটা আপনার অধিকারের মধ্যেই পড়ে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.