কীভাবে একটি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং রিজ্যুম লিখবেন
ODD বাংলা ডেস্ক: রিজ্যুম লেখার ক্ষেত্রে যতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত ততটা আমরা দিই না। যেকোনো চাকরিতে আবেদন করার ক্ষেত্রেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে রিজ্যুম লেখা। যদিও সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা পারফেক্ট রিজ্যুম লেখার ক্ষেত্রে ততটা সময় ব্যয় করতে চান না কিন্তু আপনি কি জানেন যে, রিক্রুটাররা গড়ে ৩.১৪ মিনিট ব্যয় করেন শুধুমাত্র রিজ্যুম পড়ে দেখতে। এমনকি প্রত্যেক ৫ জন ক্যান্ডিডেটের মধ্যে একজন ইন্টারভিউ থেকে রিজেক্ট হয় শুধুমাত্র রিজ্যুমর কারণে। চলুন তাহলে জেনে নিই, কীভাবে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার পারফেক্ট রিজ্যুম লিখবেন।
রিজ্যুম লেখার ক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন যতটা কম সম্ভব পেইজে রিজ্যুম লিখতে। কারণ রিক্রুটাররা এতটা সময় নিয়ে রিজ্যুম পড়বেন না। তাই সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন পেইজের বেশি রিজ্যুম লিখবেন না। রিজ্যুমতে একসাথে সবকিছু লিখবেন না। চেষ্টা করবেন সেকশনে ভাগ করে লিখতে। বিশেষ কিছু সেকশন হচ্ছে পার্সোনাল ইনফরমেশন, এডুকেশন, এমপ্লয়মেন্ট, প্রজেক্টস, স্কিলস ইত্যাদি। সেকশন লেখার সময় গুরুত্ব অনুসারে সেকশন লিখবেন। অর্থাৎ, শুরু করবেন পার্সোনাল ইনফরমেশন থেকে এবং তারপর সেকশনের গুরুত্ব অনুসারে লিখতে হবে। কখনোই স্কিলস কিংবা এডুকেশন দিয়ে রিজ্যুম শুরু করবেন না।
অতিরিক্ত ডিজাইন কিংবা রঙিন কোনো রিজ্যুম তৈরি করতে যাবেন না। রিজ্যুমি লেখার সময় ফন্টের দিকেও খেয়াল রাখবেন। ফন্টের ডিজাইন, স্টাইল ও সাইজের উপর রিজ্যুমর সৌন্দর্য অনেকটাই নির্ভর করবে। খেয়াল রাখবেন যাতে রিজ্যুম ডিজাইনে প্রফেশনাল লুক থাকে। রিজ্যুম লেখার ক্ষেত্রে অনেকেই নিজের নাম ছোটো করে লিখে থাকেন কিন্তু এটা করা উচিত নয়। আপনার নাম সর্বোচ্চ ফন্টে লেখার চেষ্টা করবেন যাতে রিক্রুটারকে আপনার নাম জিজ্ঞেস করতে না হয়। এক্ষেত্রে ফন্টের স্টাইলের দিকেও খেয়াল রাখবেন।
খেয়াল রাখবেন যাতে আপনার যোগাযোগের ঠিকানা নামের কাছাকাছিই অবস্থান করে। কারণ রিক্রুটার আপনার নাম দেখে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চাইতে পারে। কিন্তু যদি আপনার যোগাযোগের তথ্য তাকে খুঁজে বের করতে হয় তাহলে তিনি বিরক্ত হয়ে যেতে পারেন। শুধু যোগাযোগের ঠিকানার ডিজাইনের দিকে খেয়াল রাখলেই হবে না বরঞ্চ যোগাযোগের ঠিকানা যাতে সঠিক হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত।
অনেকেই ভাবেন যে, একই রিজ্যুম দিয়ে সব ধরণের ইন্টারভিউয়ের জন্যই আবেদন করা যায়। যদিও এটা সত্য নয়। আপনার পছন্দ করা ক্যারিয়ার, ইন্টারভিউয়ের ধরণ, রিক্রুটারদের তথ্যসব বিভিন্ন বিষয়ের দিকে খেয়াল রেখে আপনাকে রিজ্যুম তৈরি করতে হবে। রিজ্যুমতে শিক্ষাজীবনের তথ্যের যে সেকশন রয়েছে সেখানে অবশ্যই সঠিক ও উপযুক্ত তথ্য যুক্ত করবেন। এই সেকশনের নিচের সেকশনটি হওয়া উচিত কী কী সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন। প্রত্যেকটি তথ্যের পাশে যদি অতিরিক্ত কোনো তথ্য যুক্ত করতেই হয় তাহলে সেটা ব্র্যাকেটের মধ্যে যুক্ত করে দিবেন। এক্ষেত্রে খুব সহজেই সেটা রিক্রুটারের চোখে পড়বে।
একটি রিজ্যুম তৈরির সময় মূল লক্ষ্য থাকা উচিত আপনার শিক্ষা, দক্ষতা আর অভিজ্ঞতাতে। আপনি যেসব বিষয় নিয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করেন সেগুলো যুক্ত করা উচিত হবে না, যদি না আপনি সেগুলোতে প্রফেশনালি দক্ষ না হয়ে থাকেন। আপনার মূল লক্ষ্য থাকা উচিত সেসব বিষয়ের দিকে যেগুলো পড়ে রিক্রুটার খুশি হবেন। যদি আপনার জিপিএ খুবই কম হয়ে থাকে তাহলেও জিপিএ যুক্ত করতে দ্বিধাবোধ করবেন না। সেক্ষেত্রে রিজ্যুমতে যতটা সম্ভব সার্টিফিকেট যুক্ত করার চেষ্টা করবেন।
আপনি যেহেতু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাকরির জন্য রিজ্যুম লিখছেন সেহেতু আপনাকে সেই বিষয়ের সাথে যুক্ত কাজের দক্ষতা ও সার্টিফিকেট সংযোগ করতে হবে। আপনি যদি ‘সাহিত্য’ সম্পর্কে ভালো জেনে থাকেন তাহলে সেটাও যুক্ত করা উচিত হবে না, কারণ এক্ষেত্রে ইতিহাস কোনোভাবেই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাকরির জন্য উপযুক্ত নয়। কাজের দক্ষতার দিকেও মনোযোগ দিয়ে রিজ্যুম লেখা উচিত।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের যেকোনো চাকরির জন্য রিজ্যুম লেখার ক্ষেত্রে ঠিক ততটুকুই অভিজ্ঞতা যুক্ত করা উচিত যতটুকু আপনার এই চাকরির সাথে সম্পৃক্ত। অনেকেই সব ধরণের কাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে রিজ্যুম লিখে থাকেন যেটা করা উচিত নয়। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য রিজ্যুম লেখার ক্ষেত্রে আপনাকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোতে যদি অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তাহলে সেগুলোই যুক্ত করার উচিত।
একটি রিজ্যুম লেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠিন অংশ হচ্ছে যেকোনো চাকরির অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেওয়া। সেক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব পরিষ্কারভাবে ও যত বেশি সম্ভব তথ্যপূর্ণ বর্ণনা লিখতে। যদি সম্ভব হয় তাহলে সেই কোম্পানির যেকোনো উর্ধ্বতন কর্মকর্তার রেফারেন্স যুক্ত করবেন। এই অংশের বর্ণনা লেখার সময় আপনার খেয়াল রাখতে হবে যাতে রিক্রুটার আপনার পুর্ব অভিজ্ঞতা পড়ে, আপনার সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা পায়। যাতে রিক্রুটার ভাবে যে, আপনি পূর্বের চাকরিগুলোতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং আপনার কাজের এই ধারা এই কোম্পানিতেও বজায় থাকবে।
যেকোনো রিজ্যুম লেখার যত টিপস রয়েছে তার মাঝে সবসময় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত সেখানে ব্যবহৃত ভাষা ও ক্রিয়ামূলক শব্দের দিকে। সহজ ক্রিয়ামূলক শব্দ ব্যবহার না করে প্রফেশনাল ক্রিয়ামূলক শব্দগুলো ব্যবহারে আপনার ভাষার উচ্চতা ও সৌন্দর্য দুইই বৃদ্ধি পাবে।
এখানে আমি বেশ কিছু অসাধারন ক্রিয়ামূলক শব্দ দিয়ে দিচ্ছি যেগুলো ব্যবহার করে সহজেই আপনি আপনার রিজ্যুমর প্রফেশনালিজম বৃদ্ধি করতে পারবেন। এরকম কিছু ক্রিয়ামূলক শব্দ হচ্ছে Improved, Utilized, Increased, Decreased, Integrated, Implemented, Established, Developed, Incorporated, Designed, Added, Created, Piloted, Transformed, Spearheaded, Revitalized, Optimized, Shaped, Squared, United, Reduced, Redesigned, Produced ইত্যাদি।
রিজ্যুমকে ভারী করার জন্য অনেকেই ভুল ও মিথ্যা তথ্য লিখে রাখে। কখনোই এটা করবেন না। কারণ ভুল তথ্য দেয়ার কারণে আপনার রিজ্যুমির কোয়ালিটি ও সততা নষ্ট হয়ে যাবে। এতে করে ইন্টারভিউ বোর্ডে রিক্রুটারদের সামনে আপনি নিজেও মানসিকভাবে অপ্রস্তুত থাকবেন, যা আপনার আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দিতে পারে।
Post a Comment