প্রথম দেখা জায়গাও কেন চেনা মনে হয়?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: এটা একটা অদ্ভূত অনুভূতি। মনে হবে এ জায়গাটায় আপনি যেন আগেও এসেছিলেন। অথবা এরকম কথা-বার্তা যেন আগেও কোথায় শুনেছেন।


কিন্তু আপনি আবার জানেন, এটা হতেই পারে না। ইংরেজিতে এই অনুভূতিটাকে বলে ‘দেজা ভু’।


বাংলায় এক শব্দে এই অনুভূতি প্রকাশ করা কঠিন। কিন্তু ‘দেজা ভু’ আসলে কেন হয়, কখন আমরা এরকম অনুভূতির মুখোমুখি হই?


১. বেড়াতে গেলে ‘দেজা ভু’ হয়


সাধারণত কোনো জায়গায় বেড়াতে গেলেই আমরা ‘দেজা ভু’র মতো অনুভূতির মুখোমুখি হই।


‘দেজা ভু’ গবেষক ক্রিস মোলিনের মতে, যখন আমরা যখন একেবারে নতুন কোন জায়গা বা অভিনব কোনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই, তখনই এই অনুভূতিটা সবচেয়ে প্রবল হয়।


তার মতে, একেবারে অপরিচিত জায়গায় গিয়ে যখন আমাদের জায়গাটা চেনা বলে মনে হতে থাকে, আবার এটাও জানি যে সেখানে আমরা আগে কখনো যাইনি, তখন এই দুয়ের মধ্যে একটা বিরাট দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।


গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ যত বেশি ভ্রমণ করে, তত বেশি ‘দেজা ভু’র অনুভূতি হয়।


২. তরুণ বয়সীদের বেশি ‘দেজা ভু’ হয়


যখন আপনার বয়স কম থাকে, তখন আপনার অনেক বেশি ঘন ঘন ‘দেজা ভু’ হয়। তবে সাধারণত মাসে একবারের বেশি নয়।


যখন আপনার বয়স যখন ৪০ বা ৫০ এর কোঠায়, তখন ‘দেজা ভু’র এই হার কমে আসে। আর বয়স ৬০ পেরিয়ে গেলে আপনার যদি বছরেও একবার ‘দেজা ভু’ হয়, তাহলে আপনাকে সৌভাগ্যবানই বলতে হবে।


৩. অনেক মানুষের দিনভর ‘দেজা ভু’ হয়


বেশিরভাগ মানুষের জন্য এই দেজা ভু হচ্ছে এক বিরল এবং খুবই ক্ষণস্থায়ী একটি মুহূর্তের অভিজ্ঞতা। তবে এমন বিরল ঘটনাও আছে, যেখানে কোনো কোনো মানুষের জন্য এই ‘দেজা ভু’ এক মারাত্মক সমস্যা।


যুক্তরাজ্যের মানচেস্টারের বাসিন্দা লিসা সেরকম একজন। লিসার বয়স যখন ২২ বছর, তখন থেকে তিনি দীর্ঘসময়ের জন্য ‘দেজা ভু’র মুখোমুখি হতে শুরু করেন। তার ‘দেজা ভু’ হতো সারাদিন ধরে।


‘সকালে ঘুম ভাঙ্গার পরই আমার কোনো কোনো দিন দেজা ভু শুরু হতো, আমার মনে হতো যা কিছু ঘটছে তার সবই যেন আগেও ঘটেছে’ বলছিলেন তিনি।


লিসা আরও ঘনঘন ‘দেজা ভু’র মুখোমুখি হতে শুরু করেন। তার সমস্ত ইন্দ্রিয়ের ওপর এর প্রভাব পড়ে। লিসা পরে জানতে পারেন তার এই ঘনঘন ‘দেজা ভু’র সঙ্গে সম্পর্ক আছে বিরল এক ধরনের ‘এপিলেপসি’ বা মৃগি রোগের। এটিকে বলা হয়, ‘টেম্পোরাল লোব এপিলেপসি’। পরে অবশ্য তিনি এর চিকিৎসা নিতে পেরেছিলেন।


৪.মস্তিস্কের ভুল সংকেতের কারণে ঘটে ‘দেজা ভু’


যারা নিয়মিত এবং প্রবল ‘দেজা ভু’র মুখোমুখি হন, তাদের ওপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা এর সম্ভাব্য কারণ বুঝতে পেরেছেন।


বিজ্ঞানীদের ধারণা, আমাদের এই ‘দেজা ভু’র অনুভূতির জন্য দায়ী হচ্ছে মস্তিস্কের এমন একটি অংশ, যার নাম ‘টেম্পোরাল লোব’ মস্তিস্কের এই অংশটির কোনো সার্কিট থেকে যখন কোনো স্মৃতির সংকেত দেয়া হয়, যেটা আসলে তখন দেয়ার কথা নয়, তখনই ঘটে ‘দেজা ভু’। এটাই আমাদের মধ্যে কোনো স্থান বা অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিভ্রম তৈরি করে। মনে হয় কোথায় যেন দেখেছি আগে!


তবে এ নিয়ে আরও নানা তত্ত্ব আছে। যেমন কারও কারও মতে, দুটি সমান্তরাল মহাবিশ্বের (প্যারালাল ইউনিভার্স) সংঘাতে ‘দেজা ভু’ হয়! আর কেউ কেউ তো এটিকে ‘পুনর্জন্মের’ তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চান।


৫. মস্তিস্কের ‘তথ্য যাচাই ব্যবস্থা’ আমাদের ফিরিয়ে আনে বাস্তব জগতে


বিজ্ঞানীদের ধারণা, আমাদের মস্তিস্কে দ্বিতীয় একটি ব্যবস্থা সক্রিয় যেটি আসলে ‘টেম্পোরাল লোবে’ কী ঘটছে তার ওপর নজর রাখে। এটাকে বর্ণনা করা হচ্ছে এক ধরনের ‘তথ্য যাচাই ব্যবস্থা’ হিসেবে।


‘দেজা ভু’ হওয়ার পর যখন আমরা বিভ্রান্তিতে ভুগি, তখন মস্তিস্কের এই অংশটি সেই বিভ্রান্তি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।


৬. আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে আপনি ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা


খুব প্রবল কোন ‘দেজা ভু’র সময় আপনার হয়তো এমন মনে হতে পারে যে ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা আপনি বলে দিতে পারেন।


গবেষক ক্রিস মোলিন বলছেন, আমাদের মস্তিস্ক আসলে আমাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে ধারণা দিতে সাহায্য করে।


‘আমাদের স্মৃতি তো থাকে এই কারণেই। একই ভুল আমরা যাতে বার বার না করি এবং কী ঘটতে যাচ্ছে সেটা যেন আমরা আঁচ করতে পারি’ যোগ করেন তিনি।


কাজেই যখন আপনার ‘দেজা ভু’র সময় মস্তিস্কের আরও অনেক অংশে এর প্রভাব পড়ে, তখন এটি আপনার আবেগকে স্পর্শ করতে পারে। আপনার স্মৃতিতে জমা ছবি এরকম একটা ধারণা আপনাকে দিতে পারে যে, আপনি জানেন এর পর কী ঘটতে চলেছে!


৭. ‘দে জাভু’র বিপরীত অনুভূতির নাম ‘জামাইস ভু’


অনেক সময় কোনো পরিচিত কিছু দেখেও আমাদের অদ্ভূত অনুভূতি হয়, এটাকে বলা হয় ‘জামাইস ভু’।


পরিচিত কোনো মানুষের চেহারা দেখে আপনার এরকমটা মনে হতে পারে। আপনার মনে হতে পারে লোকটি আপনার অপরিচিত।


৮. ‘দে জাভু’ শব্দটি যিনি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন


একজন প্যারা-সাইকোলজিস্ট এমিল বইরাচ ‘দেজা ভু’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। ১৮৭৬ সালে তিনি একটি চিঠি লেখেন ফরাসী জার্নাল ‘ফিলোসফিকে’। সেখানে তিনি এই ‘আগে যেন দেখেছি’র অনুভূতি বর্ণনা করেছিলেন ‘দেজা ভু’ শব্দটি দিয়ে।


বহুদিন পর্যন্ত ‘দেজা ভু’কে একটি প্যারা-নরমাল বা ‘অস্বাভাবিক’ অভিজ্ঞতা বলে মনে করা হতো।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.