আজও বন্ধ দ্বিতীয় ভল্ট, মন্দিরের কোটি টাকার সম্পত্তি পাহারা দিচ্ছেন স্বয়ং নাগদেবতা

ODD বাংলা ডেস্ক: বিশ্বের সবচেয়ে ধনী হিন্দু মন্দির হিসাবে বিবেচিত হয় তিরুবন্তপুরমের শ্রী পদ্মনাভ স্বামী মন্দির। এখানে দেবতা বিষ্ণুর পুজো করা হয়। তবে এই মন্দিরের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছিল, তা সঠিকভাবে জানা নেই, কিন্তু 'সঙ্গম' তামিল সাহিত্যে-সহ প্রাচীন বহু গ্রন্থে এই মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়। 

মন্দিরের ভেতরে ভগবান বিষ্ণুর একটি মূর্তিও রয়েছে। কেরলের অন্যান্য ঐতিহ্যপূর্ণ মন্দিরের পাশাপাশি শ্রী পদ্মনাভ স্বামীর মন্দিরটিও ত্রিবাঙ্কুরের একটি রাজ পরিবারের তরফে নিয়ন্ত্রিত একটি ট্রাস্টের দ্বারা পরিচালিত হয়। যানা যায়, মন্দিরের ভেতরে ছ-ছটি গোপন কক্ষ রয়েছে। লোহার দরজার পিছনে এই ছয়টি গুপ্ত কক্ষ বা ভল্টগুলিকে ইংরেজি বর্ণমালার এ থেকে এফ বর্ণের সাহায্যে চিহ্নিত করা হয়।

জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে দেশের শীর্ষ আদালতের তরফে মন্দিরের সুবিশাল ধন-সম্পত্তির হিসাব করার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি দল গঠন করে। এবং প্রাক্তন কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল বিনোদ রাই-কে মন্দিরের ধন-সম্পত্তির হিসাব-নিকাশ রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাদের ওপরেই ভার ছিল সেইসব ভল্টগুলি খুলে দেখা। তাঁরা একে একে সবকটি ভল্ট খুলতে পারলেও দুই নম্বর ভল্টটি কিন্তু তারা খুলতে পারেননি। রাজ পরিবার এবং মন্দিরের কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয় যে, কোনও এক অজানা মন্ত্রবলে মন্দিরের ভেতরের ওই দুই নম্বর ভল্টটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেটি খোলা হলে হয়তো দেবত রুষ্ট হবেন বা দেবতার কোনও কোপও পড়তে পারে। আর এই ভল্ট বি-এর দরজায় রয়েছে একটি সাপের প্রতিকৃত।

বিনোদ রাইয়ের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি মন্দিরের যে অডিট রিপোর্ট পেশ করেছিল, তাতে দেখা গিয়েছে যে, ওইসমস্ত ভল্টে ৭৬৯ ঘড়া সোনা রয়েছে, যার মূল্য ১৮৬ কোটি টাকা। কিন্তু উদ্ধার হওয়া সোনা পরিশোধনের সময়ে ২৬৩ কেজি ওজনের সোনা নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলেও জানা যায়। 

তবে এই মন্দিরের ভল্ট খোলাকে কেন্দ্র করে একাধিক কুসংস্কার জড়িয়ে, যেগুলির মধ্যে অন্যতম হল 'অভিশাপ'। এই বিষয়ে ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রথমে একটি এক পিটিশন দায়ের করেন অ্যাডভোকেট টি পি সুন্দরাজন। সেই বছরই জুলাই মাসে মারা যান তিনি। তাঁর এই অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর ঘটনা থেকে অনেকে মনে করেন, কোনওরকম পুজার্চনা ছাড়াই এই ভল্টের দরজা খোলাতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। 

এর পাশাপাশি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল 'সর্প দেবতা তত্ত্ব'। ভল্ট বি-এর গায়ে আঁকা সাপের চবি দেখে অনেক মুনি-ঋষি এমন ধারণা পোষণ করে গিয়েছেন, যে একটি বিশালাকার গোখরো সাপ ওই মন্দিরের ভল্টটি পাহারা দিচ্ছে। সেই কারণেই এই ভল্টের দরজা খোলা সম্ভব নয়। তবে একমাত্র 'গড়ুর মন্ত্র' উচ্চারণের মধ্যে দিয়েই এই দরজা খোলা সম্ভব। 

এই নিয়ে আরও একটি উল্লেখযোগ্য তত্ত্ব রয়েছে, যা হল 'সমুদ্র তত্ত্ব'। এই তত্ত্ব অনুসারে বলা হয় য়ে, আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগেও নাকি এই ভল্টের দরজা ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তা করতে গিয়েই মাঝপথে থামতে বাধ্য হন তাঁরা, কারণ সেখান থেকে নাকি প্রবল জলস্রোতের শব্দ ভেসে আসছিল। সেই থেকেই ধারণা করা হয় যে, ভল্টটির সঙ্গে আরব সাগরের সরাসরি যোগ রয়েছে। তাই একবার তার দরজা খোলা হলে আরব সাগরের জলে প্লাবিত হতে পারে গোটা শহর।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.