পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ ব্ল্যাক মাম্বা! যার এক ছোবলেই...


ODD বাংলা ডেস্ক: সাপ দেখে ভয় পান না এমন মানুষ খুব কমই আছেন। আর যদি সেই সাপটি হয় ব্ল্যাক মাম্বা, তবে ভয়টা আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কারণ ব্ল্যাক মাম্বা হলো এমন একটি বিষাক্ত সাপ যা পৃথিবীর সবথেকে বিষাক্ত সাপ গুলির তালিকায় প্রথম পাঁচ এর মধ্যে রয়েছে। যদি এই সাপটি কোনও মানুষকে কামড়ায় তবে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে। এই সাপটির গতি, বিষের তীব্রতা, শিকার করার পদ্ধতি অন্যান্যদের তুলনায় অনেক আলাদা।   
 
পৃথিবীতে সাপের মোটামুটি ৩,৬০০ প্রজাতি আছে, তার মধ্যে ৩৭৫ প্রজাতির সাপ এমন আছে যেগুলি বিষাক্ত। এদের মধ্যেই একটি হল ব্ল্যাক মাম্বা। আফ্রিকার জঙ্গলে পাওয়া এই সাপ গুলি সেখানকার মানুষের সাপের কামড়ে মৃত্যুর জন্য বেশি দায়ী। এরা গাছের ডালে, কুঠুরিতে ও পাথরের ভাজ গুলিতে থাকতে বেশি পছন্দ করে। আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় এই সাপগুলি অন্যান্য প্রজাতির থেকে বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়। এদের অতিরিক্ত গতি, আক্রমণাত্মক স্বভাব এদেরকে আরও বেশি মারাত্মক করে তোলে। এরা এদের শিকারকে তাড়া করে এবং মেরে ফেলে। এদের বিষ অতিরিক্ত মাত্রায় বিষাক্ত হওয়ায় এদের হাত থেকে কোন শিকারই বেচে ফিরতে পারে না।

ব্ল্যাক মাম্বা সাপ এর অবস্থান:

ব্ল্যাক মাম্বা উপ সহরান আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে থাকে। এর সীমানা রয়েছে ইরিত্রিয়া, ক্যামেরুন, কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়া, তানজানিয়া, উগান্ডা, বুরুন্দি, রুয়ান্ডা, মোজাম্বিক, মালাভি, সোয়াজিল্যান্ড ও পশ্চিম আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ।  

ব্ল্যাক মাম্বা সাপের চরিত্রিক বৈশিষ্ট্য:

এই সাপটি খুবই রাগি প্রকৃতির এবং আক্রমণাত্মক স্বভাবের। যদি কেউ এই সাপটির খুব কাছাকাছি চলে আসে তবে এর আক্রমণের হাত থেকে বেঁচে ফেরা টা প্রায় অসম্ভব। দক্ষিণ আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বাস করা এই সাপটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে আক্রমনাত্মক সাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আফ্রিকা যত প্রজাতির সাপ দেখা যায় তাদের মধ্যে সবথেকে লম্বা ও বিষাক্ত সাপ এটি। এই সাপটি লম্বায় প্রায় ১৪ ফিট পর্যন্ত হয়ে থাকে।  

সবচেয়ে দ্রুতগতির বিষাক্ত সাপ:

এই সাপটির দ্রুতগতির চলাচল বাকি সাপদের পিছনে ফেলে দিতে পারে। এই সাপটি ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। অন্য কোন সাপ এত গতিতে ছুটতে পারে না, সে কারণে এটিকে সবচেয়ে দ্রুতগতির বিষাক্ত সাপ বলা হয়। এই গতির কারণে এরা শিকারকে পিছন থেকে ধাওয়া করে ধরতে পারে।  

ব্ল্যাক মাম্বা সাপের নামকরণ:

অনেকেই ভেবে থাকেন যে এই সাপটির নাম তাদের কালো শরীরের জন্য হয়ে থাকে, তবে এটা একেবারেই ঠিক নয়। এরকম নামকরণের কারণ এর মুখের ভেতরে কালো রঙের জন্য। যখন এরা তাদের মুখ খোলে স্বীকার করার জন্য, তখন এদের কালো মুখটি দেখা যায় বলেই এমন নামকরণ।

ব্ল্যাক মাম্বা সম্পর্কে অদ্ভুত অজানা তথ্য:

এই সাপটি অন্যান্য সাপগুলো থেকে আলাদা ও আকর্ষণীয়ও বটে। এরা নিজের দেহের থেকে চার গুণ বড় প্রাণী খেতে সক্ষম। আক্রমণের সময় এরা দেহের ৪০ শতাংশ এর বেশী উপরের দিকে সোজা দাঁড়াতে পারে এদের লেজের ওপর ভর করে। যে কারণে এদের দ্বারা আক্রমণ করা মানুষদের দেহে কামড়ের দাগ বেশিরভাগই উপরের দিকে হয়। এরা প্রজনন এর সময় প্রায় ৬ থেকে ২৫ টি ডিম দিয়ে থাকে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো কথিত আছে, এরা ডিম দেওয়ার পরে দ্বিতীয়বার কখনো তাদের ডিম গুলির দিকে ঘুরে তাকায় না।

ব্ল্যাক মাম্বা সাপের শিকার পদ্ধতি:

এই সাপটির শিকার করার পদ্ধতি অন্যদের থেকে আলাদা হয়। যখন এরা বিপদে আছে বলে মনে করে তখন ১০ থেকে ১২ বার বিষ নির্গত করে। এটা নিউরোটক্সিন বিষ মানবদেহে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ঢেলে দেয়। এই বিষ এতটাই বিষাক্ত যে এর এক ফোটা একটি মানুষকে মেরে ফেলতে সক্ষম। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে এর বিষের ওষুধ বের হলেও পূর্বে এর কামড়ে মৃত্যু অনিবার্য ছিল। যদিও বা কেউ বেঁচেও যায় তবে এর বিষের প্রভাবে শরীরে প্যারালাইসিস হয়ে যায়। এরা যখন শিকার করে তখন সেই প্রাণীর দেহে বিষ ঢেলে দেয় এবং ছেড়ে দেয়। তারা তাদের শিকারকে ততক্ষণ পিছু করতে থাকে যতক্ষণ না এরা মারা যায়। তারপরে যখন এদের বিষের প্রভাব দেখা দিতে থাকে শিকারের শরীরে, তখন এরা সেটিকে খেয়ে ফেলে।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.