বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রিত ১০ বস্তু!
ODD বাংলা ডেস্ক: আপনি কি জানেন নিলামে বিক্রি হওয়া বিশ্বের সবচেয়ে দামি চিত্রকর্মটি নিজেই একটা বড় বিবাদের উৎস? অথবা সেই চিত্রকর্ম বা ভাস্কর্যটি এর স্রষ্টার আদি চিন্তাপ্রসূত নয়? সবচেয়ে দামি কয়েন থেকে শুরু করে অন্তর্বাস কিংবা কারো চুল... বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রিত ১০টি বস্তুর তালিকা থাকছে আজ পাঠকের জন্য।
১. সবচেয়ে দামি পান্ডুলিপি: দ্য কোডেক্স লিচেস্টার
নিলামে বিক্রি হওয়া, বিশ্বের সবচেয়ে দামি পান্ডুলিপি ছিল লিওনার্দো দা ভিঞ্চির নিজের হাতে লেখা অজস্র বৈজ্ঞানিক সূত্র ও স্কেচ সম্বলিত নোটবুক 'দ্য কোডেক্স লিচেস্টার'। লিচেস্টারের আর্ল এবিং এই নোটবুকের প্রাক্তন মালিক থমাস কোক এর নামানুসারে পান্ডুলিপিটির এই নাম রাখা হয়। ১৯৯৪ সালে ৩০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যে এটি কিনে নেন মার্কিন ধনকুবের ও বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বিলিয়নিয়ার বিল গেটস।
দ্য কোডেক্স লিচেস্টার লেখা হয়েছে ভিঞ্চির বিখ্যাত 'মির্-রাইটিং' স্টাইলে এবং এই নোটবুক থেকে তার অদ্বিতীয় চিন্তাভাবনার আঁচ পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, পর্বতচূড়ায় প্রাপ্ত সামুদ্রিক জীবাশ্ম সম্পর্কে ইতোপূর্বে বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, এগুলো সম্পূর্ণ অজৈব। কিন্তু ভিঞ্চি সেই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে যুগান্তকারী নতুন তথ্য দেন। আবার ভিঞ্চির নোটবুক থেকে জানা যায়, তিনি ভেবেছিলেন যে চাঁদ জল দিয়ে ঢাকা! কিন্তু মাত্র ৩০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে সব ধারণাই জয়ী হবে, তা তো চলবে না!
২. সবচেয়ে দামি চিত্রকর্ম: সালভাটর মুন্ডি
পান্ডুলিপির পর সবচেয়ে দামি চিত্রকর্মের স্রষ্টার ভূমিকায়ও লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। যীশু খ্রিস্ট নিজের হাতে একটি ক্রিস্টালের গোলক ধরে রেখেছেন- এমন দৃশ্যই ভিঞ্চি একেছেন সালভাটর মুন্ডি নামক এই পেইন্টিংয়ে। পাঠক জেনে অবাক হবেন, ১৯৫৮ সালে মাত্র ৪৫ ডলারে বিক্রি হয়েছিল কালজয়ী এই চিত্রকর্ম! কিন্তু ২০০৫ সালে শিল্প সংগ্রাহক রবার্ট সিমন ও আলেক্সান্ডার পারিশ এটি কিনে নেওয়ার পর তারা আবারও চিত্রকর্মটি মূল্যায়ন করেন। ফলে দেখা যায়, এটি সত্যিই ভিঞ্চির নিজ হাতে আকা ছবি! ব্যাস, শুরু হয়ে গেল হইচই আর ক্রেতার আগ্রহ! ২০১৭ সালে এই সালভাটর মুন্ডিই বিক্রি হয় ৪৫০ মিলিয়ন ডলারে, ভারতীয় মুদ্রায় যা ৩৮৮১ কোটি টাকারও বেশি!
৩. সবচেয়ে দামি ভাস্কর্য: এল অম আ দুয়া (L'homme au doigt)
সুইস ভাস্কর আলবার্তো গিয়াচোমেত্তির 'এল অম আ দুয়া' বা 'ম্যান পয়েন্টিং' নামক ভাস্কর্যটি এযাবত বিক্রিত সবচেয়ে দামি ভাস্কর্য। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, শিল্পী প্রাথমিকভাবে চেয়েছিলেন এই ভাস্কর্যে দ্বিতীয় আরেকটি ফিগার যুক্ত করতে যাকে নিজের বাহুতে আগলে থাকবেন ভাস্কর্যের মূল ব্যক্তিটি। যদিও সেই পরিকল্পনা পরে বাতিল করেন আলবার্তো, কিন্তু তাতে ভাস্কর্যের সৌন্দর্য্য বা মূল্য একটুও মলিন হয়নি। কয়েক দশক পরে আমেরিকান হেজ ফান্ড মুঘল স্টিভ কোহেন এই নিঃসঙ্গ পয়েন্টারকে রেকর্ড ১৪০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেন।
৪. সবচেয়ে দামি ক্রীড়া দল: দ্য নিউইয়র্ক মেটস
স্টিভ কোহেনের আরও একটি কীর্তি হচ্ছে 'দ্য নিউইয়র্ক মেটস' বাস্কেটবল দল। ২০২০ সালে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে তিনি এই দলটি কিনে নেন, যা যেকোনো পেশাদার ক্রীড়া দলের মধ্যে সর্বোচ্চ দামি।
৫. সবচেয়ে দামি সাম্রাজ্য: রোমান সাম্রাজ্য
এবার একটু পুরাতনের দিকে যাওয়া যাক। রোমান সাম্রাজ্যকে সবচেয়ে দামি সাম্রাজ্য বলা হয়তো আজকের দিনের হিসেবে খানিকটা বাহুল্য হবে। কারণ আমরা স্পষ্ট জানি না এর চেয়ে বেশি দামি কিছু ছিল কিনা। কিন্তু আপনি কি জানেন, রোমান সাম্রাজ্য নিলামে বিক্রি হয়েছিল প্রতি সৈন্যের জন্য ২৫,০০০ সেস্টারেস মূল্য ধরে?
পূর্ববর্তী সম্রাট পার্টিনাক্সকে হত্যা করেছিল প্রিটোরিয়ান প্রহরী। নিলামে সবচেয়ে বেশি দাম হেঁকেছিলেন দিদিয়াস জুলিয়ানাস এবং তাকেই পরে রাজ্যের প্রধান বানানো হয়। কিন্তু শীঘ্রই গৃহযুদ্ধ বেধে যায় সাম্রাজ্যে এবং তাকে শিরশ্ছেদ করা হয়।
৬. সবচেয়ে দামি বন্দুক: জর্জ ওয়াশিংটনের পিস্তল
জর্জ ওয়াশিংটন।
অনেকের কাছেই হয়তো এ তথ্য এতদিন ছিল অজানা। এক নিলামে রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছিল জর্জ ওয়াশিংটনের স্যাডল পিস্তল সেট। ২০০২ সালে ২ মিলিয়ন ডলারে এটি বিক্রি হয়। তবে পিস্তলগুলো কয়েক বছর অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের আয়ত্তে ছিল কিছুদিন। কিন্তু এই পিস্তলগুলোর আসল মালিক ছিলেন সবার প্রিয় ফ্রেঞ্চম্যান মার্কি দু লাফাইয়েত।
৭. সবচেয়ে দামি অন্তর্বাস: রাণী ভিক্টোরিয়ার অন্তর্বাস
আজ পর্যন্ত যত অন্তর্বাস কেনা হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে দামি অন্তর্বাসের খেতাবটি দখল করেছে রাণী ভিক্টোরিয়ার কেনা ১৬,০০০ ডলারের আন্ডারপ্যান্ট! রাণীর নাম ভিক্টোরিয়া রেজিনার আদ্যক্ষর 'ভিআর' লেখা এই অন্তর্বাসের আরও একটি বিশেষ দিক হলো, এটি দর্জির কাছে নিয়ে চাহিদামাফিক আকৃতি পরিবর্তন করা যেতো।
৮. সবচেয়ে দামি চুল: এলভিস প্রিসলির চুল
২০০২ সালের নভেম্বরে ১ লাখ ১৫ হাজার ডলারে নিলামে বিক্রি হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামি চুল, আর তা ছিল মার্কিন গায়ক ও অভিনেতা এলভিস প্রিসলির। জানা যায়, প্রিসলির চুল কেনার কয়েক মাস পরে ২০০৩ সালের এপ্রিলে একই নিলাম হাউজে এলভিস প্রিসলির চুল হিসেবে দাবি করে আরও চুল বিক্রি করা হয়! কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষার পর দ্বিতীয়বার বিক্রিত চুলগুলোর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। ফলে ক্রেতাকে তার টাকা ফিরিয়ে দেয় নিলাম হাউজ। শুধু তাই নয়, এ ঘটনার জেরে নিলাম হাউজের চেয়ারম্যানকে ২০ মাসের কারাদন্ডও দেওয়া হয়েছিল।
৯. সবচেয়ে দামি টাইপরাইটার: করম্যাক ম্যাককার্থির টাইপরাইটার
হাতে লেখা চিঠির টাইপরাইটারের যুগের একটি টাইপরাইটার ১ লাখ ৪০ হাজার ডলারে বিক্রি হয় ২০১৯ সালে। কিন্তু সেটিই সবচেয়ে দামি টাইপরাইটার নয়। তারও আগে ২০০৯ সালে মার্কিন লেখক করম্যাক ম্যাককার্থির হালকা নীলরঙা 'ওলিভেত্তি লেটেরা ৩২' টাইপরাইটারটি বিক্রি হয়েছিল মিলিয়ন ডলারের চার ভাগের এক ভাগ দামে।
১০. সবচেয়ে দামি কয়েন: দ্য ১৯৩৩ ডাবল ঈগল কয়েন
বিশ্বের সবচেয়ে দামি এই কয়েনের যাত্রা শুরু হয়েছিল থিওডর রুজভেল্টকে দিয়ে। ২০ ডলারের ডাবল ঈগল কয়েনটির নকশা করেছিলেন ভাস্কর অগাস্টাস সেইন্ট-গডিনস। রুজভেল্টের সহায়তায় কয়েনটি থেকে 'ইন গড উই ট্রাস্ট' লেখাটি প্রাথমিক নকশা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
স্বর্ণের ডাবল ঈগল কয়েনের উৎপাদন যখন বন্ধ করে দেওয়া হয়, কিছু কয়েন তখনো গোপনে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল। ফেডারেল এজেন্টরা সেগুলো খুঁজে বের করে এবং ১০টির মধ্য থেকে ৯টি ধ্বংস করে ফেলে। বাকি এই একটি কয়েন সংগ্রহ করেন মিশরের রাজা ফারুক। ফারুকের কাছ থেকে এটি একসময় ব্রিটিশ কয়েন ডিলার স্টিফেন ফেন্টনের কাছে চলে আসে। এরপর তিনি ১৯৯৬ সালে এটি নিউইয়র্কে বিক্রি করে দেন। ফেন্টনের কাছ থেকে এটি আবার যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আসে এবং ২০০২ সালে ৭.৬ মিলিয়ন ডলার রেকর্ড দামে নিলামে বিক্রি হয়। ২০২১ সালে ডাবল ঈগল কয়েন আবার নিলামে তোলা হয়। এবার এটি বিক্রি হয় ১৮.৯ মিলিয়ন ডলার মূল্যে!
Post a Comment