স্টোনহেঞ্জ: প্রাচীন এক সৌর ক্যালেন্ডার



 ODD বাংলা ডেস্ক: আজকের দিনে সৌর ক্যালেন্ডারের সঙ্গে মানুষের তেমন একটা পরিচয় নেই। তবে এককালে প্রাচীন মিসরে সৌর ক্যালেন্ডারের ব্যবহার করা হতো। এমন একটি প্রাচীন সৌর ক্যালেন্ডার সাক্ষ্য দেয় যুক্তরাজ্যের উইল্টশায়ারের স্টোনহেঞ্জ। 


স্টোনহেঞ্জ ঘিরে মানুষের ধারণা রয়েছে একাধিক। কোন কারণে বিশাল আকৃতির পাথর দিয়ে বৃত্ত রচনা করা হয়েছিল, তা যুগ যুগ ধরে জানার চেষ্টা চলছে। তবে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে নতুন তথ্য। বলা হচ্ছে, স্টোনহেঞ্জ আদতে ছিল বছরের মাস ও দিনের হিসাব রাখার সৌর ক্যালেন্ডার। এমন খবর জানিয়েছে সিএনএন।


স্টোনহেঞ্জ নিয়ে নতুন এ গবেষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের বোর্নমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক টিমোথি ডারভিল। বছরের মাস আর দিন থেকে শুরু করে অধিবর্ষের (লিপইয়ার) হিসাবও কীভাবে স্টোনহেঞ্জের মাধ্যমে করা হতো, গবেষণায় তুলে ধরেছেন তিনি।

গবেষণা বলছে, স্টোনহেঞ্জে দুই ধরনের পাথর রয়েছে। লম্বা আকৃতির সরসেন স্টোন (বিশেষ ধরনের পাথর) ও ছোট আকৃতির ব্লুস্টোন। ধারণা করা হয়, ওয়েলস থেকে আনা ব্লুস্টোনগুলো পাঁচ হাজার বছর আগে প্রথম স্থাপন করা হয়েছে। কয়েকশ বছর পর সরসেন স্টোন বসানো হয়। এই পাথরগুলো স্টোনহেঞ্জের কাছ থেকেই সংগ্রহ করা।


প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটির সবচেয়ে বাইরের দিকের বৃত্তটি তৈরি করা হয় সারি করে বসানো ৩০টি সরসেন স্টোন দিয়ে। এগুলোর ওপর সাজানো ছিল ৩০টি পাথর। মাসের ৩০ দিন গণনা করতেই সরসেন স্টোনগুলো ব্যবহার করা হতো। স্টোনহেঞ্জে প্রতি মাসকে ভাগ করা হয়েছিল তিন সপ্তাহে। প্রতি ১০ দিনে এক সপ্তাহ গণনার জন্য সরসেন স্টোনগুলোর মধ্যে তিনটি নির্দিষ্ট করা ছিল। মাসে ৩০ দিন করে ধরলে ১২ মাসে ৩৬০ দিন হয়। তবে অধিবর্ষ ছাড়া সৌর বছরে মোট দিনের সংখ্যা ৩৬৫। 


অধ্যাপক ডারভিল বলছেন, স্টোনহেঞ্জের বাইরের বৃত্তের ভেতরে পাঁচ জোড়া সরসেন স্টোন ঘোড়ার খুরের আকৃতিতে সারি করে বসানো ছিল। সেগুলো বাড়তি পাঁচদিন গুনতে ব্যবহার করা হতো। এছাড়া বৃত্তের বাইরে বেশ খানিকটা দূরে চার কোনায় চারটি ছোট পাথর ছিল। প্রতি চার বছর পর অধিবর্ষ আসে। অধিবর্ষের বাড়তি এক দিনের হিসাব রাখতেই ব্যবহার করা হতো ওই চার পাথর।


গবেষণায় ডারভিল জানান, খাড়া করে রাখা সরসেন স্টোনগুলো যুক্তরাজ্যের একই স্থান থেকে সংগ্রহ করে স্টোনহেঞ্জে একই সময় স্থাপন করা হয়। যদিও এখন পাথরগুলোর ৩০টি মধ্যে মাত্র ১৭টির অস্তিত্ব আছে। আর সেগুলোর ওপর রাখা ২২টি পাথরের খোঁজ মেলেনি। তারপরও প্রাচীন এ নিদর্শন নিয়ে কাজ করার পর এটাই বোঝা যায়, প্রাচীন নির্মাতারা স্টোনহেঞ্জের কাজ পুরোপুরি শেষ করেছিলেন। বাকি পাথরগুলো সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেছে।


ডারভিল জানিয়েছেন, পূর্ব ভূমধ্যসাগর ঘিরে বিভিন্ন স্থানে এর ব্যবহার ছিল। হতে পারে এসব এলাকার মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করার পরই যুক্তরাজ্যে স্টোনহেঞ্জ তৈরি করা হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.