মানি ফর নাথিং: অদৃশ্য শিল্পকর্মের রসিদ বিক্রি সাড়ে ১০ কোটি টাকায়!

 


ODD বাংলা ডেস্ক: কোনোকিছু না কিনেই আপনি কত টাকা দিতে রাজি? 


ইউরোপের জনৈক শিল্প সংগ্রাহক দিয়েছেন ১.২ মিলিয়ন ডলার। হ্যাঁ,  ভারতীয় মুদ্রায় তা ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকারও বেশি! সম্প্রতি প্যারিসে সোথবি'স এর নিলামে ফরাসি শিল্পী ইভস ক্লেইনের নিজ হাতে লেখা রসিদের জন্য ঠিক এই অংকের বিনিময়মূল্যই পরিশোধ করেছেন ওই সংগ্রাহক। ক্লেইন এই রসিদ লিখেছিলেন তার একজন ক্রেতার জন্য, যিনি ক্লেইনের কাছ থেকে 'অদৃশ্য শিল্পকর্ম' কিনেছিলেন। 


ষাটের দশকে ফরাসি নব্য-বাস্তববাদ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং পারফরমেন্স আর্টের পথিকৃৎ ছিলেন ইভস ক্লেইন। ১৯৫৮ সালে 'দ্য ভয়েড' শিরোনামে প্যারিসে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন ক্লেইন। সেখানে সম্পূর্ণ ফাঁকা কক্ষের মধ্যে একটি ক্যাবিনেট রেখে দেন তিনি। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, এই ফাঁকা ঘর দেখতেই হাজার হাজার দর্শক ভিড় জমান প্রদর্শনীতে! 


এর পরপরই ক্লেইন ঘোষণা দেন, শিল্প সংগ্রাহকরা গোল্ড বুলিয়নের বিনিময়ে 'ইনভিজিবল জোন বা অদৃশ্য স্থান' কিনতে পারবেন। ক্লেইনের 'জোনস অব ইমম্যাটেরিয়াল পিক্টোরিয়াল সেন্সিবিলিটি'র প্রতিটি অংশ কেনার সাথে সাথে ক্রেতাকে একটি রসিদ দেওয়া হতো ক্লেইনের পক্ষ থেকে। কিন্তু এখানেও আছে রহস্য, ক্লেইন তার ক্রেতাদের বলতেন সেই রসিদ পুড়িয়ে ফেলতে! 


স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনের দেওয়া তথ্যমতে, রসিদ পুড়িয়ে ফেলার বিষয়টি একটি আচার-অনুষ্ঠানের অংশ! এই আচার পালনের মাধ্যমে শিল্প সংগ্রাহকরা ওই 'জোন' এর নিশ্চিত মালিকে পরিণত হতো বলে দাবি করতেন ক্লেইন। এরপর ক্লেইন নিজের প্রাপ্ত গোল্ড বুলিয়নের অর্ধেক সিন নদীতে ফেলে দিতেন এবং সাক্ষী সামনে রেখে রসিদ পুড়িয়ে ফেলতেন!


কিন্তু সংগ্রাহকদের একজন, জ্যাকস কুগেল তার রসিদ পোড়াতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে ক্লেইনের সেই রসিদ আজ হয়ে উঠেছে এক ঐতিহাসিক নিদর্শন। ইতোমধ্যেই প্যারিসের সেন্টার পম্পিদ্যু এবং লন্ডনের হেওয়ার্ড গ্যালারিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়েছে এই বিখ্যাত রসিদ।


অবশেষে সাবেক গ্যালারি মালিক লইস ম্যালে এই রসিদটি কিনে নেন এবং সম্প্রতি নিজের অন্যান্য ব্যক্তিগত সংগ্রহের সাথে এটিও নিলামে তোলেন। ৮ ইঞ্চির কম চওড়া এই রসিদটি দেখতে অনেকটা ব্যাংক চেকের মতো। রসিদের ডানদিকে একদম নিচে আছে ক্লেইনের নিজের স্বাক্ষর; তারিখ লেখা ৭ ডিসেম্বর, ১৯৫৯।


এদিকে সোথবি'স বলছে, ক্লেইনের এই 'জোন অব সেন্সিটিভিটি' বিক্রি এবং রসিদ দেওয়ার উপায়কে অধুনা এনএফটি'র পূর্বসূরি বলা যায়। তাই এটি অনেক মানুষ পছন্দ করেছেন।


সোথবি'স এর ক্যাটালগে আরো বলা হয়, "ক্লেইনের সারা জীবনের ইচ্ছা ছিল এই যে, তিনি 'চিত্রকর্মের ক্ষমতা'কে অন্যের মধ্যে দিয়ে যাবেন। কিন্তু সেটা হবে কোনো শিল্পকর্মকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার ছাড়াই। এই 'জোন বা স্থান' কিভাবে বিক্রি করা যায় তা নিয়েও বহুদিন চিন্তাভাবনা করেছেন ক্লেইন। বর্তমানে আমরা যে এনএফটির মাধ্যমে ডিজিটাল আর্ট বিক্রি করতে দেখি, ক্লেইন ষাটের দশকেই সেই বিক্রয় পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন। আর এই রশিদ দেওয়ার মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ রাখার একটা চমৎকার ব্যবস্থা করে গেছেন তিনি, যা এখন আলাদা এক শিল্পকর্মই হয়ে উঠেছে!" 


তবে এবারই প্রথমবারের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিল পরিশোধের সুযোগ চালু হলো সোথবি'স-এ। স্মিথসোনিয়ান জানিয়েছে, রসিদের দাম ৩-৫ লাখ ডলার ধরা হলেও, তা সবার কল্পনাকে ছাড়িয়ে গেছে; অজ্ঞাতপরিচয় এক ক্রেতা এটি কিনে নিয়েছেন ১.২ মিলিয়ন ডলারে!   

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.