ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য শঙ্খ
ODD বাংলা ডেস্ক: প্রাচীন আয়ুর্বেদে শঙ্খ বা CONCH অথবা সী শেল এর ভূমিকা অপরিহার্য। ভারতীয় উপমহাদেশের সৈনিকরা প্রাচীনকাল থেকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে এর ব্যবহার করে আসছে। সৌন্দর্যচর্চায় এর ভূমিকাও ঠিক তেমনটাই পুরনো। আপনারা যারা রূপচর্চায় মনোযোগী তারা নিশ্চয়ই শঙ্খের গুঁড়া এবং তার অসামান্য গুণের কথা আবছা ভাবে হলেও শুনে থাকবেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এখনো রূপচর্চায় শঙ্খের গুঁড়া কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানেন না বললেই চলে। আমাদের সেই পাঠকদের কথা ভেবেই আজকের এই আর্টিকেল।
শঙ্খকে সোজা বাংলায় বলে ‘শাঁখ’। সনাতন ধর্ম এবং জীবন প্রণালীতে এর উপস্থিতি উল্লেখ্য।
এটা মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে।
১। ডানাবর্তীঃ যেক্ষেত্রে শঙ্খের ঘূর্ণন ডানদিকে হয় এবং
২। বামাবর্তীঃ যেক্ষেত্রে শঙ্খের ঘূর্ণন বামদিকে হয়।
এই শাঁখ গুঁড়ো করলে যে সাদা পাউডার পাওয়া যায় তাই সাধারণত স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যচর্চায় ব্যবহার করা হয়। শঙ্খের সাদা এই গুঁড়ায় থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং অন্য নানা ধরনের খনিজ যেমন আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম। এসব কারণে প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন অংশে শঙ্খ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় শঙ্খঃ
-আপনার যদি কোন কারণে পেটে ব্যথা, বদহজম বা অন্ত্রের কোন ধরনের জটিলটা দেখা দেয় তবে একটি শঙ্খের শেলের মধ্যে সারারাত জল রেখে দিয়ে সকালে এই জল দুই চামচ খেলে আপনার সমস্যার উপশম হবে।
– সমপরিমাণ শঙ্খের খোলে রাখা জল এবং সাধারণ জল নিন। এই জলের মিশ্রণ দিয়ে চোখ পরিষ্কার করুন (জলের ছিটা দিন) এতে আপনার চোখের দৃষ্টি অনেকদিন ভালো থাকবে।
– শঙ্খের খোলে রাখা জল একটা পাত্রে নিয়ে তাতে মুখ ডুবিয়ে চোখ খুলে এদিক ওদিক ঘুরান। চোখের ব্যাকটেরিয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে।
– বলা হয় নিয়মিত শঙ্খ যারা বাঁজায় তাদের যেকোনো বক্ষব্যাধি এবং হার্টের সমস্যা হবার ভয় অনেকাংশে কম থাকে।
শঙ্খ ভস্মঃ
– শাঁখের শেল থেকে তৈরি এক রকম আয়ুর্বেদিক ওষুধ এই শঙ্খ ভস্ম। এটা গ্যাস্ট্রিক, পেটে ব্যথা এবং ম্যাল আবসরবসন জনিত বিভিন্ন সমস্যায় ব্যবহার করা হয়।
সৌন্দর্যে শঙ্খঃ
সৌন্দর্য চর্চায় শঙ্খের মত কার্যকরী উপাদান খুব কমই আছে। আপনি যদি আসল শঙ্খ গুঁড়ো যোগার করতে পারেন তবে তা আপনাকে ব্রণ বিহীন ত্বক থেকে শুরু করে ইনস্ট্যান্ট ফেয়ারনেস পর্যন্ত দিতে সক্ষম। চলুন দেখে নেই ত্বক ও চুলের জন্য শঙ্খ কীভাবে ব্যবহার করা যায়।
চুলের যত্নেঃ
শঙ্খের শেলে সারারাত ধরে রাখা জলের সাথে গোলাপজল মেশান। এই জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। আপনার চুলের স্বাভাবিক রঙ বজায় থাকবে আর চুল থাকবে মসৃণ।
ত্বকের যত্নেঃ
-পরিষ্কার শঙ্খের ভেতরে রাখা জল দিয়ে প্রতিদিন সকালে আপনার ত্বক ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এটা বিভিন্ন চর্মরোগ, র্যাস, আল্যারজি সারাতে সাহায্য করে।
– নিয়মিত একমাস ধরে এভাবে মুখ ধুলে ত্বকের শ্বেতি রোগের প্রাদুর্ভাব পর্যন্ত কমে যায়।
– ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে ও রিঙ্কেল দূর করতে প্রতিদিন স্নানের সময় শঙ্খ গুঁড়া আর সমপরিমাণ মুলতানি মাটি জলে মিশিয়ে মুখে আর ঘাড়ে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। অবশ্যই ফল পাবেন।
– শঙ্খ গুঁড়া গোলাপ জলের সাথে পরিমাণ মত মিশিয়ে চোখের নিচে সাবধানে লাগান। শুকিয়ে যাওয়ার আগেই আবার ধুয়ে ফেলুন। আপনার চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর হয়ে যাবে।
– আপনার বিভিন্ন প্যাকের সাথে এক চিমটি করে শঙ্খ গুঁড়া যোগ করে তারপর ব্যবহার করুন। ত্বকের কালো ভাব দূর হওয়ার সাথে সাথে ব্রণের উপদ্রপও দূরে থাকবে। শঙ্খ গুঁড়া ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করে।
– মিহি করে বাটা আধা চামচ চালের গুঁড়ার সাথে সমপরিমাণ শঙ্খ গুঁড়া মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে হালকা ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। ভালো স্ক্রাবের সাথে সাথে এটা আপনার সানট্যান দূর করে আপনাকে দেবে ফর্সা ত্বক।
– সানট্যান, ব্রণের দাগ ও শ্যামলা ত্বক থেকে মুক্তি পেতে জন্য আধা চামচ মুলতানি মাটি, আধা চামচ শঙ্খ গুঁড়া, এক চিমটি হলুদ গুঁড়া আর আধা চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। খুব দ্রুত ফল পাবেন।
সতর্কতাঃ
শঙ্খ গুঁড়া সব কাজের কাজি হলেও আসল ভালো মানের শঙ্খ গুঁড়ার খোঁজ পাওয়া একটু কঠিন। সুতরাং আপনি যদি আপনার রূপচর্চায় শঙ্খ ব্যবহার করতে চান তবে খেয়াল করে বিশ্বস্ত সোর্স থেকে আসল শঙ্খ গুঁড়া কেনার চেষ্টা করবেন। বিভিন্ন অনলাইন পেজ আসল শঙ্খ গুঁড়া সরবরাহ করে। তাদের কাছে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।
আর হ্যাঁ, সবসময় মনে রাখবেন শঙ্খ গুঁড়া কখনই সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করবেন না। এটা খুব সুক্ষ পাউডার হলেও এতে আপনার ত্বক কেটে যেতে পারে। যাদের ত্বক সংবেদনশীল তারা এটা ব্যবহার না করলেই ভালো করবেন। সবসময় শঙ্খ গুঁড়া সমপরিমাণ মুলতানি মাটি, বেসন বা চালের গুঁড়ার সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এতে শঙ্খ গুঁড়ার কার্যকারিতা কমে যাবে না।
দেখলেন তো শঙ্খ গুঁড়া আপনার ত্বক ও স্বাস্থ্যের কত রকম উপকারে আসে? এবার তো এটা নিয়ে একটু এক্সপেরিমেন্ট করে দেখা যেতেই পারে, তাই না?
Post a Comment