২০২২ সালে আমেরিকায় রেকর্ড সংখ্যক অভিবাসী বিলিয়নিয়ার হয়েছেন

 


ODD বাংলা ডেস্ক: অভিবাসন করে আমেরিকায় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) আসা অনেকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে গেছেন। অনেকে হয়েছেন বিলিয়নিয়ার (শত কোটি ডলার বা তার বেশি বিত্তের অধিকারী)। কিন্তু, তাদের অধিকাংশের জন্যই পথটি মসৃণ ছিল না।


ভিডিও কনফারেন্স সার্ভিস জুম প্রতিষ্ঠাতা এরিক ইউয়ানের কথাই প্রথমে বলা যাক। ১৯৯০ এর দশকে সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা ইউয়ান আমেরিকায় পাড়ি জমানোর লক্ষ্যস্থির করেন। কিন্তু, ১৮ মাসে তার ভিসা ৮ বার বাতিল করে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। ইউয়ান তাতে দমবার পাত্র ছিলেন না। তার আদর্শ ছিলেন মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের মতো আইকন। তাই চীনের শানডং প্রদেশের খনি প্রকৌশলী দম্পতির এ সন্তান চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন এবং শেষপর্যন্ত মার্কিন মুল্লুকে আসতে সফলও হন।   


২০১৯ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, "অনেকবার ব্যর্থ হয়ে প্রতিজ্ঞা করি- যতদিন না মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ বলবেন, তুমি আর এখানে আসতে পারবে না, ততদিন আমার সামর্থ্যের সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাব।"


১৯৯৭ সালে ইউয়ান আমেরিকার ভিসা পান। এসময় তিনি চাকরি নেন, ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক ওয়েবএক্স সংস্থায় শুরুর দিকের একজন কর্মী হিসেবে। এর দুই দশক পর তিনি যে ভিডিও যোগাযোগ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন তা বৈশ্বিক মহামারিকালে অফিস, আদালত থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরম জনপ্রিয়তা লাভ করে। মহামারি ইউয়ানের জন্য হয়ে ওঠে সোনার জাদুকাঠি।


গত ১১ মার্চ নাগাদ তার মোট সম্পদমূল্য ছিল ৫২০ কোটি ডলার। এ তারিখ পর্যন্ত ধনীদের সম্পদ হিসাব করেই ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০২২ সালের সাম্প্রতিক বিলিয়নিয়ার তালিকা প্রকাশ করে।


ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার তালিকায় এবার মোট ৭৩৫ জন মার্কিন নাগরিক জায়গা করে নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯২ জন ভিন দেশে জন্ম নেওয়া মার্কিন নাগরিক, যাদের প্রত্যেকেই এখন আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। অর্থাৎ, সেরা ধনী আমেরিকানদের মধ্যে ১৩ শতাংশই সেদেশে অভিবাসনের মাধ্যমে পা রেখেছেন।  


অভিবাসন করে আমেরিকায় এসে ধনী হওয়াদের মোট সম্পদ এখন ৭১ হাজার ১০০ কোটি ডলার। তাদের বেশিরভাগ বা ৯২ শতাংশ নিজ চেষ্টা ও মেধায় এ বিপুল বিত্তের অধিকারী হয়েছে। সে তুলনায় জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকদের মাত্র ৭১ শতাংশ বা ৬২৮ জন নিজ ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। 


অভিবাসনকারী আমেরিকান বিলিয়নিয়াররা এসেছেন মোট ৩৫টি ভিন্ন দেশ থেকে। খোদ বিশ্বের সবসেরা ধনী ইলন মাস্কের জন্মও দক্ষিণ আফ্রিকায়, যার মোট সম্পদ এখন ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। 



আফ্রিকা থেকে তালিকায় রয়েছেন আরো পাঁচজন, তাদের একজন হচ্ছেন সফটওয়্যার কোম্পানি ক্যালেন্ডলির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী তোপে আওতোনা (১৪০ কোটি ডলার)। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি নাইজেরিয়ার লাগোস থেকে আমেরিকায় আসেন। বেদনাদায়ক এক শৈশব ছিল তার, নাইজেরিয়ায় ৯ বছরের আওতোনার সামনেই তার বাবাকে গাড়ি ছিনতাইকারীরা হত্যা করে। ওই ঘটনার তিন বছর পর তিনি পরিবারের সাথে আমেরিকার জর্জিয়া রাজ্যে আসেন।


আওতোনা বলেন, "আপনি যদি অন্য দেশ আর সংস্কৃতি থেকে আসেন, তাহলে নতুন দেশের সমাজে মেশার চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টার মধ্যে দিয়ে আপনি বিভিন্ন রকম পূর্বঅভিজ্ঞতার মানুষের খোঁজ পাবেন, ভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সম্পর্কে সহমর্মিতা অনুভব করবেন।"


ফোর্বস বিলিয়নিয়ার তালিকায় অভিবাসী আমেরিকানদের মধ্যে আরো নতুন মুখ হলেন, ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ১৯৭৯ সালে সেদেশে জন্মগ্রহণকারী আদম ফোরৌঘি। তিনি অ্যাপলোভিন- এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৩০ কোটি ডলার সম্পদমূল্যের অধিকারী। 


আরো আছেন, জর্দানে জন্মগ্রহণকারী পুঁজিবাজার ব্যবসায়ী রামজি মুসাল্লাম। বর্তমানে ৪০০ কোটি ডলার সম্পদের অধিকারী রামজির জীবনের প্রথমভাগ কেটেছে সৌদি আরব ও তাঞ্জিনিয়ায়। তার বাবা ছিলেন ফিলিস্তিনি বংশদ্ভূত একজন খ্রিষ্টান, চাকরি করতেন মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রকৌশল শাখায়, আর বাবার চাকরিসূত্রেই এসব দেশে রামজি দীর্ঘদিন কাটান।


তবে এবছর ফোর্বস তালিকায় সবচেয়ে বেশি বা ১০ জন অভিবাসী আমেরিকান বিলিয়নিয়ার এসেছেন ইসরায়েল থেকে। তাদের মধ্যে রয়েছেন দুই সহোদর ভাই- টম ও অ্যালেক গোরেস (সম্পদ মূল্যায়ন যথাক্রমে ৬ ও ২.৬ বিলিয়ন ডলার)। ইসরায়েল থেকে আরো রয়েছেন ওরাকলের সিইও সাফ্রা কাটজ (১৫০ কোটি ডলার)। তিনি অভিবাসী বিলিয়নারদের তালিকায় স্থান পাওয়া ১০ নারীর অন্যতম।


আরেকজন উল্লেখযোগ্য নারী হলেন এরিন ওসমান। তিনি ও তার স্বামী ফাতিহ ওসমান বেসরকারি মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা কোম্পানি- সিয়েরা নেভাদা কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রণ করেন। এরিনের মোট সম্পদমূল্য ২৫০ কোটি ডলার। ওসমান দম্পতি ১৯৮০'র দশকে স্মাতক ডিগ্রী অর্জনে আমেরিকা পাড়ি জমান।  


বর্তমানে আমেরিকান, এমন ৮ জন বিলিয়নিয়ার এসেছেন প্রতিবেশী কানাডা থেকে। তাদের অন্যতম হলেন, ইউক্রেনীয় ইহুদি অভিবাসী বাবা-মার সন্তান মর্টিমার জুক্যারম্যান (৩০০ কোটি ডলার)। কানাডার আলবার্টা থেকে আসা অপর দুই বিলিয়নিয়ার হলেন টেক্সাসে গুজহেড ইন্সুরেন্সের প্রতিষ্ঠাতা- রবিন ও মার্ক জোন্স, তাদের মোট সম্পদ ১৮০ কোটি ডলার। 


অভিবাসী বিলিয়নিয়ারদের ৭ জনের জন্ম হয় চীনে। তাদেরই একজন- কৈশোরে সাংহাইয়ে পেশাদার বাস্কেটবল খেলোয়াড় ওয়েইলি ডেই। বড় হয়ে খেলাধুলার পর্ব চুকিয়ে যিনি খুলে বসেন সেমকন্ডাক্টর কোম্পানি- মার্ভেল টেকনোলজি। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ওয়েইলিকে। 


মিয়ানমার থেকে আসা আন্ড্রু চের্নগ ও তার স্ত্রী পেগি দুজনে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন পান্ডা এক্সপ্রেস। তাদের যৌথ সম্পদমূল্য এখন ৩২০ কোটি ডলার।  


আরো ৭ আমেরিকান বিলিয়নিয়ারের জন্মস্থল ভারত। তাদের মধ্যে পাঁচজন প্রযুক্তি খাতের উদ্যোগে আজকের অবস্থানে এসেছেন। এছাড়া রয়েছেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ব্যবসায়ী বিনোদ খোসলা (৬৯০ কোটি ডলার এবং সাইবারনিরাপত্তা ফার্ম জেস্কেলার- এর প্রতিষ্ঠাতা রাম শ্রীরাম (২৬০ কোটি ডলার)। 


এক নজরে ভিন দেশ থেকে আসা আমেরিকার শীর্ষ ১০ বিলিয়নিয়ার:


১. ইলন মাস্ক

মোট সম্পদ: ২১৯ বিলিয়ন ডলার 

সম্পদ উৎস: টেসলা, স্পেসএক্স 

জন্মভূমি: দক্ষিণ আফ্রিকা 


২. সের্গেই ব্রিন

মোট সম্পদ: ১০৭ বিলিয়ন ডলার 

সম্পদ উৎস: গুগল 

জন্মভূমি: রাশিয়া  


৩. মিরিয়াম অ্যাডেলসন 

মোট সম্পদ: ২৭.৫ বিলিয়ন ডলার 

সম্পদ উৎস: ক্যাসিনো 

জন্মভূমি: ইসরায়েল  


৪. রুপার্ট মারডক ও তার পরিবার

মোট সম্পদ: ২০.৮ বিলিয়ন ডলার 

সম্পদ উৎস: সংবাদপত্র ও টিভি নেটওয়ার্ক 

জন্মভূমি: অস্ট্রেলিয়া 


৫. জ্যানসেন হুয়াং

মোট সম্পদ: ২০.৬ বিলিয়ন ডলার 

সম্পদ উৎস: সেমিকন্ডাক্টর 

জন্মভূমি: তাইওয়ান


৬. থমাস পিটারফাই

মোট সম্পদ: ২০.১ বিলিয়ন ডলার 

সম্পদ উৎস: ডিসকাউন্ট ব্রোকারেজ 

জন্মভূমি: হাঙ্গেরি 


৭. জয় চৌধুরী

মোট সম্পদ: ১১.৪ বিলিয়ন ডলার 

সম্পদ উৎস: সিকিউরিটি সফটওয়্যার 

জন্মভূমি: ভারত 


৮. পিয়েরে ওমিদয়ার

মোট সম্পদ: ১১.৩ বিলিয়ন ডলার 

সম্পদ উৎস: ই-বে ও পেপাল 

জন্মভূমি: ফ্রান্স  


৯. ইয়ান কৌম 

মোট সম্পদ: ৯.৮ বিলিয়ন ডলার 

সম্পদ উৎস: হোয়াটসঅ্যাপ 

জন্মভূমি: ইউক্রেন   


১০. জর্জ সোরোস 

মোট সম্পদ: ৮.৬ বিলিয়ন ডলার 

সম্পদ উৎস: হেজ ফান্ড 

জন্মভূমি: হাঙ্গেরি    

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.