কলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য

 


ODD বাংলা ডেস্ক: কোলন ক্যান্সার ও রেক্টাল ক্যান্সার একত্রে কলোরেক্টাল ক্যান্সার নামে পরিচিত। বর্তমান বিশ্বে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে এটি ক্যান্সারের তৃতীয় প্রধান কারণ। ভারতেও এই রোগের প্রকোপ কম নয়। প্রথম দশটি ক্যান্সারের মধ্যে একটি হলো কলোরেক্টাল ক্যান্সার। দিন দিন এ রোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। তবে কলোরেক্টাল ক্যান্সার অনেকাংশেই নিরাময় যোগ্য। একটু সচেতন হলে এই ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা ও প্রতিরোধ করা সম্ভব।


উপসর্গ


♦ মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন


♦ মলত্যাগের সময় রক্তক্ষরণ


♦ তলপেটে অসস্থিকর অনুভূতি ও ব্যথা


♦ দুর্বলতা অনুভব


♦ অস্বাভাবিক ওজন কমে যাওয়া।


কারণ


♦ পরিবারের অন্য সদস্যদের কলোরেক্টাল ক্যান্সার থাকলে এই ক্যান্সারে অন্যের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তা ছাড়া মলাশয়, পলিপ অথবা অন্যান্য ক্যান্সার থেকেও কলোরেক্টাল ক্যান্সারের উৎপত্তি হতে পারে।


♦ পূর্বে ইনফ্লামেটরি বাউয়েল ডিজিজ যেমন আলসারেটিভ কোলাইটিস, ক্রোনস ভিজিজ হয়ে থাকলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।


♦ বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবছর কলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অধিকাংশেরই বয়স পঞ্চাশের বেশি।


♦ অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার এই ক্যান্সারের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। আঁশযুক্ত খাবার শাকসবজি, ফলমূল কম খেলে এই রোগের প্রবণতা বেশি হয়।


♦ অতিরিক্ত ওজন এবং অলস জীবন-যাপন কলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশেই বাড়িয়ে দেয়। তা ছাড়া মদ্যপান ও ধূমপান এই ক্যান্সার সৃষ্টির উল্লেখযোগ্য কারণ।


পরীক্ষা-নিরীক্ষা


♦ ফিকাল অকাল্ট ব্লাড টেস্ট


♦ ডাবল কন্ট্রাস্ট বেরিয়াম এনেমা


♦ সিগময়ডস্কপি


♦ কলোনোস্কপি।


চিকিৎসা


প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসার মাধ্যমে কলোরেক্টাল ক্যান্সারের রোগীকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নেওয়ার ফলে স্টেজ-১ কলোরেক্টাল ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের পাঁচ বছর বেঁচে থাকার হার প্রায় ৯০ ভাগের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং ক্যান্সার কোন পর্যায়ে আছে তা নির্ধারণ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসার পদ্ধতিগুলো হলো, সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, ইমিউনো থেরাপি ইত্যাদি।


প্রতিরোধে করণীয়


স্ক্রিনিং : অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৃহদান্ত্র ও মলথলিতে সৃষ্ট অস্বাভাবিক ছোট মাংস পিণ্ড বা পলিপ থেকে এই ক্যান্সারের উৎপত্তি হয়। কিন্তু সঠিক উপায়ে এই পলিপ স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করে অপারেশন করা হলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়। তাই কলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে চল্লিশোর্ধ্ব সবারই নিয়মিতভাবে প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং করা উচিত। স্ক্রিনিংয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপযুক্ত পদ্ধতি নির্বাচন করা উচিত। সঠিক সময়ে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে পলিপ অথবা অন্য কোনো অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করা গেলে কলোরেক্টাল ক্যান্সার অনেকাংশই নিরাময় করা সম্ভব।


খাবারদাবার : এই ক্যান্সারের জন্য কিছু খাবারদাবার বেশ দায়ী। এ জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার (শাক-সবজি ও ফলমূল) খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। পাশাপাশি অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার (লাল মাংস, ফাস্টফুড) কম খাওয়া উচিত।


ওজন : বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী দেহের ওজন বজায় রাখা সবার জন্যই জরুরি। এই ক্যান্সার রোধে শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন স্বাভাবিক রাখা জরুরি। মুটিয়ে যাওয়া রোধ করতে হবে বা বেশি ওজন থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।


ব্যায়াম : কায়িক শ্রম ও ব্যায়াম যথেষ্ট ভূমিকা রাখে এই ক্যান্সার প্রতিরোধে। এ জন্য সবার উচিত নিয়মিত ব্যায়াম করা বা কায়িক পরিশ্রম করা।


নেশা বর্জন : মদ্যপান ও ধূমপান পরিহার করা উচিত।


আশার কথা যে কলোরেক্টাল ক্যান্সারে মৃত্যুর হার ক্রমেই কমে আসছে। এর নেপথ্যে রয়েছে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা। এ জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং করা এবং বেশি দেরি হওয়ার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.