অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকার পর যেসব খাবার ভুলেও খাবেন না
ODD বাংলা ডেস্ক: সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে আমরা না বুঝেই খিদে মেটাতে মুখরোচক নানান খাবার খেয়ে থাকি। এই সময় শুধু ভাজাপোড়া খাবারই নয় নানা টক-জাতীয় ফলও খেয়ে থাকি সবাই। কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে, শুধু ভাজাপোড়া খাবারই নয় টক-জাতীয় ফল খেলেও দেখা দিতে পারে সমস্যা।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিভার বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকার পর কোন কোন খাবারগুলো ভুলেও না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি-
সিট্রাস ফল
লেবু, মাল্টা, কমলা, জাম্বুরা এগুলো সবই হল ‘সিট্রাস’-জাতীয় ফল। আর ইফতারের পাতে এই ফলগুলো থাকেই। স্বাস্থ্যকর মনে করে খাওয়া হলেও এই ফলগুলো বুক জ্বালাপোড়া, পেটে গ্যাস সৃষ্টি করা সম্ভাবনা থাকে। তাই বলে ইফতারে কি এগুলো খাওয়া বাদ দিতে হবে? না, তার প্রয়োজন নেই। এগুলো পরে খান। আগে খেজুর, কলা, আপেল এসব ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন। আর ইফতারে লেবুজাতীয় ফল পরিমাণে কম রাখুন। ক্ষেত্র বিশেষে এই ফলগুলো খালি পেটে খাওয়া কারণে পাকস্থলীতে আলসার, ‘গ্যাস্ট্রিসাইটিস’য়ের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
কোমল পানীয়
বাড়িতে না থাকলেও রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে কিংবা দাওয়াতে গেলে ইফতারের টেবিলে জল, শরবতের সঙ্গে কোমল পানীয়র দেখা মেলে। আর স্বাদের জন্য জলের পরিবর্তে ইফতারে বরফশীতল কোমল পানীয় বেছে নেয়া মানুষ নেহাত কম নয়। কিন্তু এই অভ্যাস সরাসরি পাকস্থলীর ক্ষতি করে। অনেক সময় পাকস্থলীতে রক্ত সরবরাহের মাত্রাও কমে যায়। ফলে খাদ্য পরিপাক প্রক্রিয়ায় সমস্যা-সহ পেটে ব্যথার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়ে থাকে।
অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার
সাধারণত সবাইকে মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। বিশেষত যাদের ‘অ্যাসিড রিফ্লাক্স’য়ের সমস্যা থাকে। মশলাযুক্ত খাবারের ব্যাপারে তাদের সতর্ক থাকা জরুরি। খালি পেটে মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে বুক জ্বালাপোড়াসহ টক ঢেঁকুর ওঠার মতো সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
ইফতারে ঝাল মশলাযুক্ত খাবার খেয়ে কষ্ট পেলেও মানুষ তার লোভ সামলাতে পারেন না। কাবাব, হালিম, ঝাল ফ্রাই, কাচ্চি ইত্যাদি ইফতারে প্রতিদিনের খাবার হয় কিছু মানুষের। এই খাবারগুলো পেটে গিয়ে গ্যাস, বুক জ্বালাপোড়া, অ্যাসিড রিফ্লাক্স ইত্যাদি সৃষ্টি করে। সেই কারণেই মূলত পেটে কষ্ট পান।
আর এই খাবারগুলো ভারী ও মুখরোচক হওয়ার কারণে খিদা পেটে বেশি খেয়ে ফেলেন। ফলে পেট কটকটে হয়ে যায়, মনে হয় জল খাওয়ারও জায়গা নেই। এতে জল খাওয়া কমে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
শসা ও অন্যান্য সবুজ সবজি
স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও খালি পেটে এই খাবারগুলোই দারুণ অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায়। কারণ শসাসহ অন্যান্য সবুজ সবজিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড। খালি পেটে এই খাবার উপাদানগুলো খাওয়ার ফলে অস্বস্তি ও পেটে ব্যথা তৈরি হয়। আবার সবজিতে থাকা ভোজ্য আঁশ পেটে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। ফলে পেট ব্যথা হতে পারে।
টমেটো
টমেটোতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ট্যানিন যা ‘অ্যাসিডিটি’ বা বুক জ্বালাপোড়া তৈরির অন্যতম উপাদান। খালি পেটে শখের বশে অনেকেই টমেটো খেয়ে থাকেন। যা তৈরি করতে পারে গ্যাস্ট্রিসাইটিসের সমস্যা।
মিষ্টি ও মিষ্টিজাত খাবার
যেকোনো ধরনের মিষ্টি-জাতীয় খাবারে থাকে প্রচুর পরিমাণে চিনি। খালি পেটে মিষ্টি খাবার খাওয়ার ফলে হুট করেই রক্তে ইন্সুলিনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। যা অগ্ন্যাশয়ের ওপর নেতিবাচক ও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে দেয়। পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত হুমকির।
ইস্টজাত খাবার
বিস্কুট, পেস্ট্রি, কেক, পাউরুটি, বনরুটি-সহ যে সব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ইস্ট ব্যবহার করা হয়, খালি পেটে এসব খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। খালি পেটে ইস্টজাত খাবার খাওয়ার ফলে, পেট ফোলাভাব দেখা দেওয়াসহ বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা দেয়।
ভাজাপোড়া
খালি পেটে যে খাবারগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ তার মাঝে অন্যতম হলো তেলে ভাজা যেকোনো খাবার। ডুবো তেলে কিংবা স্বল্প তেলে ভাজা খাবার একদম খালি পেটে খেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেক সময় গুরুত্বর হয়ে ওঠে সেই প্রতিক্রিয়া।
তাহলে খাবেন কী?
খালি পেটে ইস্টবিহীন হাতে তৈরি রুটি, ডিম, কলা, পিনাট বাটার, বাদাম, খেজুর, মধু, তরমুজ খেতে পারবেন স্বাচ্ছন্দে। পাশাপাশি ভাত তো থাকছেই।
Post a Comment