পাহাড় হারাচ্ছে পাহাড়ি বনমোরগ

 


ODD বাংলা ডেস্ক: কেবল উঁকি দিয়েছে সকালের সূর্য। পাহাড়ের ঘন গাছের ফাকা দিয়ে আলো এসেছে কেবল। এর মধ্যেই নিজস্ব তেজদীপ্ততা জানান দিত ওরা। একদিন নয়, প্রতিদিনের ওরা উচ্চস্বরে ডাকত ‘কুক-কুরু-কু, কুক-কুরু-ক’। বলছিলাম, পাহাড়ি বনমোরগের কথা। এমন দৃশ্যপটের সঠিক বর্ণনা দিতে পারবে তারাই, যারা গত দুই দশক আগের পাহাড়ি জীবজগৎ সম্পর্কে ধারণা রাখে। এখন বনমোরগ খুব একটা নেই, তাই খুব বেশি শোনা যায় না ওদের কুক-কুরু-কু....। 

গত দুই থেকে তিন দশক আগেও দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে বেশ বিচরণ ছিল পাহাড়ি বনমোরগের। এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে, কিংবা এক টিলা থেকে অন্য টিলায় প্রতিধ্বনিত হতো বনমোরগের চমৎকার ডাক! পাহাড়ি বনমোরগের ডাকে যেন ভোর হতো পাহাড়ে। আবার সন্ধ্যায়ও ওরা ডাকত। এ যেন সন্ধ্যার আগমনী বার্তা। পাহাড়ি বাসিন্দা ও পর্যটকরা সেই ডাক শুনে মুগ্ধ হতেন।  


আবার সেই সুন্দর ডাকই ওদের উপস্থিতির কথা জানিয়ে দিয়েছে লোভীদের। লোভীদের ভাবিয়েছে, ‘যে মোরগের এত সুন্দর ডাক, সে খেতে না যেন কতো সুস্বাদু।’ ওদের সুন্দর্য, ওদের ডাকই যেন ওদের বিলুপ্তির প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে।   


পাহাড়ি বনমোরগের ইংরেজি নাম Red Junglefowl এবং বৈজ্ঞানিক নাম  Gallus gallus। এদের লাল মাথা, লাল উজ্জ্বল ঝুঁটি এবং নিচের ঝুলন্ত লাল লতিকা দারুণ সৌন্দর্য ছড়ায়। এরা মাটিতে চরে বেড়ায়। প্রজনন মৌসুমে মাটিতেই বাসা করে। তবে রাতে গাছের উপর উঠে রাত্রিযাপন করে।


সাধারণত, পুরুষ বনমোরগটির শরীর হয় জ্বলজ্বলে লাল রঙের। যা সহজে দৃষ্টি আকর্ষক করে যে কারো। আর স্ত্রী বনমোরগটি হয়ে থাকে বাদামি রঙের। পুরুষটি দেখতে স্ত্রী অপেক্ষা বেশ বড়। পুরুষটির দৈর্ঘ্য হয় ৬৫ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার এবং স্ত্রীর দৈর্ঘ্য ৪০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার।  


এই বনমোরগ-বনমোরগী থেকে আমাদের গৃহপালিত মোগর-মোরগিদের পোষ মানানো হয়েছে। পাহাড়ি বনমোরগগুলো খুব স্বাভাবিকভাবে উড়তে পারে। তবে আমাদের গৃহপালিত মোগরদের খুব কমই উড়তে দেখা যায়। পুরুষ বনমোরগগুলো স্ত্রী বনমোরগী থেকে অপেক্ষাকৃত সুন্দর হয়ে থাকে। গৃহপালিত মোরগগুলোও তাই। 


বাংলাদেশে একমাত্র উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চল ছাড়া সব বনাঞ্চলেই এদের দেখা যায়। তবে এই সংখ্যাটি খুব বেশি নয়। দেশের মধুপুর, সুন্দরবনসহ সিলেটের বিভিন্ন বনাঞ্চল ও চা বাগানে এদের খুঁজে পাওয়া যায়। 


তবে ফাঁদ পেতে এই বনমোরগদের শিকার করা হয় বলেই আজ বিলুপ্তির কাতারে এরা। শিকারিদের হাত থেকে এদের রক্ষা করতে পারলে আরো ব্যাপক সংখ্যায় এদের প্রজনন ঘটানো সম্ভব হতো। 


হয়তো পাহাড়ি জনগোষ্ঠী এবং পর্যটকদের লোলুপ দৃষ্টিকে সংযত করতে দরকার সচেতনতা। দরকার প্রচার অভিযান। হয়তো আমরাই পারি, আমাদের সুন্দর পৃথিবীতে ওদেরও একটু জায়গা করে দিতে।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.