জেনে নিন আখের রসের উপকারীতা
ODD বাংলা ডেস্ক: আখ ঘাস পরিবারেরর একটি C4 গাছ, একটি অর্থকারী ফসল। প্রথম উৎপত্তিস্থল গায়নাতে। পরে বানিজ্যিক ভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে। বাংলাদেশ, ভারত, দক্ষিন এশিয়া, ব্রাজিল, ল্যাট্রিন আমেরিকা প্রভৃতি দেশে প্রচুর আখ জন্মে।
ভারতের প্রায় সর্বত্র আখ জন্মে। এদেশে বিভিন্ন প্রজাতির আখ রয়েছে। ভারত ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট আখ নিয়ে গবেষণা করে থাকে। এ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান হতে ৩০ টির অধিক প্রজাতির আখের নতুন জাত বের হয়েছে। সর্বশেষ জাত সমুহ হচ্ছে বিএসআরআই আখ ৪১, ঈশ্বরদী ৪৩, ঈশ্বরদী ৪৪। কিছু কিছু অপেক্ষাকৃত নরম চিবিয়ে খাবার জন্য, গ্রাম বাংলার সর্বত্র ছোট বড় সবাই আখ চিবিয়ে রস খাওয়া পছন্দ করে। আখের রস উপকারী একথা সবাই বিশ্বাস করে কিন্তু এর খাদ্য মুল্য কতটা এ বিষয়টি সবার জানা নেই। সাম্প্রতিক গবেষনাতে আখের রসের পুষ্টিগুনের উপর চমৎকার তথ্য জানা গেছে।
আখের রসের মানুষের শরীরের জন্য যথেষ্ট উপকারী পরিশ্রমের পর ঘেমে ঠান্ডালাগা রোধ করে।
ঠান্ডা কিংবা জ্বরের পর আখের রস ঠান্ডালাগা প্রতিরোধ করে, দুর্বলতা দুর করে।
ভারী কাজ কিংবা খেলোয়ারদের খেলাধুলার পর আখের রস পান করলে শক্তি ফিরে পাওয়া যায়।
পেটের গোলযোগঃ পেটের নানা সমস্যা যেমন বদহজম, গ্যাস প্রভৃতির সমস্যার জন্য আখের রস অত্যান্ত উপকারী।
কোষ্ঠ কাঠিন্য দুর করেঃ আখের রসে উচ্চমাত্রার K2 থাকে বিধায় এটি কোষ্ঠ কাঠিন্য দুর করে শরীরকে সতেজ রাখে।
ক্ষত সারায়ঃ আখের রস নিয়মিত পান করলে শরীরের ক্ষত ভাল হয়।
আখের রসে প্রচুর ভিটামিন এবং মিনারেলস আছে যা বিভিন্ন রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে।
১. আখের রস খারাপ মাত্রার কোলেষ্টেরল কমায়, ইহা শরীরকে পরিস্কার করে, উন্নত করে মেটাবলিজম এবং জীবানুমুক্ত করতে সাহায্য করে।
২. গর্ভবতী মায়েদের আখের রস খুবই উপকারী, এতে আয়রন এবং ফলিয়েট থাকে যা শিশুর মস্তিস্ক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৩. আখের রসে প্রচুর মিনারেল থাকার কারণে এটি দাতের ক্ষত সারায়।
৪.স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বকের জন্য আখের রস খুবই উপকারী ত্বকের রুক্ষতা দুর করে, আর্দ্রতা রজায় রেখে ত্বককে লাবন্যময় করে তোলে।
৫. আখের রসে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস আছে, যা শরীরের হাড়কে মজবুত করে।
৬.আখের রসে ফ্লেভিনয়েডস্ এবং ফেনোলিক যৌগ আছে। ফ্লেভিনয়েড এন্টিটিউমার, এষ্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টি ভাইরাস এবং এন্টি এলার্জিক গুনাগুন রয়েছে।
৭.জন্ডিস রোগ আখের রস অত্যান্ত উপকারী, জন্ডিসে যখন শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় তখন ৩-৪ গ্লাস আখের রস দ্রুত আরোগ্য দেয়।
৮.আখের রস পাকস্থলি, কিডনী, হার্ট, চোখে এবং মনকে সতেজ এবং প্রফুল্লো রাখে।
৯.আখের রসে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে যা খুবই কম পরিমান গ্লাসিমিক আছে যা রক্তের গ্লুকোজ মাত্রাকে উচ্চামাত্রায় উঠাতে দেয়না, টাইপ-২ ডায়বেটিস রোগীরা ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে আখের রস খেতে পারেন।
১০.আখের রসের ফ্রুটটোজ এবং গ্লুকোজ, সুক্রাজের চেয়ে খুবধীর গতিতে রক্তের চিনির মাত্রা বাড়ায়।
আখের রসে রয়েছে পলিফেনলস, এটি শক্তিশালী পলি নিউট্রিয়েন্টস যাতে এন্টিঅক্সিডেন্টের গুনাবলি রয়েছে। আখের রসে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এবং মিনারেলস যেমন পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং লৌহসহ প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিড রয়েছে। যা শরীরের চর্বি গলিয়ে দেয় এবং মাংসপেশী মজবুত করে এতে কিছু পেপি কোলিন (Pipecolic) এসিড, মেথিওনিন, ট্রিপটোফ্যান, বি-অ্যালনিন এবং আরজিনিন রয়েছে। বেসিক এমাইনো এসিড রয়েছে যেমন-হিস্টিডিন, লাইসিন, আরজিনিন। আখের রস মৃদু ক্ষারীয়, অনেক রোগজীবানু এই ক্ষারীয় পরিবেশে বাচতে পারে না ফলে শরীর জীবানুমুক্ত রাখে এবং কাচারস শরীরে ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। আখের রসে খুব কম কোলেষ্টরল রয়েছে সঙ্গে আছে এলডিএল এবং ট্র্রাইগ্লিসারাইড।
আখের রস এবং টেবিল সুগারের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে আখের রস যখন টেবিল সুগারে পরিবর্তন ঘটে তখন আখের রসের গুনগত মানের পরিবর্তন ঘটে। চিনি ক্রিষ্টাল আকারের জন্য যোগ করা হয়। নানান উপাদান দীর্ঘক্ষন উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বালদেবার ফলে কাচা রসের এন্টিঅক্সিডেন্ট গুনাবলী নষ্ট হয়ে যায় ফলে চিনিতে মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় না উল্টো অতিরিক্ত চিনি মানব শরীররের জন্য ক্ষতিকর। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেণ চিনি শরীর থেকে Ca+ বের করে দেয়, ফলে মানুষ Ca+ ঘাটতিতে ভোগে।চিনিতে মানুষের শরীরের জন্য সত্যিকারের কোন খাদ্যমুল্য থাকে না।
কৃত্রিম যে কোন জুসের তুলনায় আখের জুস অতি চমৎকার পুষ্টিগুনে ভরপুর বাংলাদের যত্রতত্র আখ জন্মে থাকে, দামে তুলনামুলক সস্তা এই পাননীয়টির বহুল ব্যবহার এদেশের অগনিত অপুষ্টির শিকার মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকরী ভুমিকা রাখতে পারে। বেকার মানুষজন আখের রস বিক্রি করে স্বাবলম্বী হতে পারে। আখের রসের এই গুনাগুনের বহুল প্রচার প্রসারের মাধ্যমেই এর ব্যবহার বৃদ্ধি সম্ভব। ভারত ইক্ষু গবেষনা ইনষ্টিটিউটকে চিবিয়ে খাওয়া উপযোগী জাতের বহুল প্রচার সকল শ্রেনীর মানুষের কাছে সহজলভ্য করা সম্ভব।
ভারতে দেড় কোটি কৃষক পরিবার আছে, প্রত্যেকের বাড়ীতে দুটি করে চিবানো খাওয়ার আখের ঝাড় থাকলেও ৪৫ কোটি আখ পাওয়া সম্ভব। আখের চাষ অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার উপকারের পরিবর্তে স্বাস্থ্য ঝুকির কারণ হতে পারে। সেমি অর্গানিক পদ্ধতিতে সার ব্যবস্থাপনা এবং আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করতে হবে। এত সুন্দর একটি উদ্ভিদ আল্লাহর অনুপম দান। আমরা সবাই আখের রস নিয়মিত পান করে যেন ভাল থাকতে পারি এ লক্ষ্যে কৃষিবিদ এবং বিজ্ঞানীদের কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
Post a Comment