বিদেশ ভ্রমণে কী কী সঙ্গে নেবেন?



 ODD বাংলা ডেস্ক: ধীরে ধীরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে কমে আসছে করোনার প্রকোপ। সেই সাথে শিথিল হচ্ছে কোভিড সংক্রান্ত বিধিনিষেধ। তাই বছর দুয়েক ঘরবন্দী হয়ে থাকার পর এবার ভ্রমণপিপাসুরা ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে বাইরে বেরোনোর চিন্তা করছেন। কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন করা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কেউই। তাই ভ্রমণের জন্য দেশের বাইরে পা রাখার আগেই জেনে নিতে হবে বিশ্বের কোন কোন দেশে, অঞ্চলে এখনকার পরিস্থিতি কেমন। এখনো কি বিদেশ ভ্রমণ করতে করোনা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক? ভিনদেশের সীমানা পেরোতে গেলে কী কী কাগজপত্র-প্রমাণাদি দেখাতে হবে আপনাকে? 


গেল ফেব্রুয়ারিতেই যুক্তরাজ্য ঘোষণা দিয়েছে, পূর্ণ ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিদের যুক্তরাজ্য ত্যাগ করা বা প্রবেশের সময় আর করোনা পরীক্ষা করাতে হবে না। মার্চের শুরুতেই দেশটি থেকে কোভিড বিধিনিষেধ পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে জনাকীর্ণ স্থানে এখনো মাস্ক পরিধান করার পরামর্শ দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।


শুধু ইংল্যান্ডই নয়, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডেও পূর্ণ ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তি এবং ১৮ বছরের কম বয়সীদের কোভিড পরীক্ষার প্রয়োজ়ন হবে না। তবে বিদেশী নাগরিকদের অবশ্যই দেশগুলোতে প্রবেশের সময় নিজস্ব টিকা সনদ দেখাতে হবে।


ভ্রমণের জন্য নিজেদের দুয়ার খুলে দিয়েছে ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, তুরস্ক ও গ্রীসসহ ইউরোপের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যসমূহ। তবে এই 'ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট' বা টিকা সনদের অর্থ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হতে পারে।


আপনি যদি ফ্রান্সে যেতে চান, তাহলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বেধে দেওয়া মান অনুযায়ী টিকা সনদ প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে-

- অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার ও মডার্না টিকার ক্ষেত্রে শেষ ডোজ় নিতে হবে ফ্রান্সে ভ্রমণের ৭ দিন আগে। 

- জনসন অ্যান্ড জনসন টিকার ক্ষেত্রে শেষ ডোজ় নিতে হবে ভ্রমণের ২৮ দিন আগে।


এছাড়াও, ১৮ বছরের উর্ধ্বে সবাইকে অবশ্যই ভ্রমণের ৯ মাস আগে ভ্যাকসিনের প্রাথমিক কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। আর যদি ৯ মাসের বেশি হয়ে যায়, তাহলে ভ্রমণের আগে বুস্টার ডোজ় নিতে হবে। তা নাহলে ফরাসি নিয়মে আপনাকে টিকা গ্রহণ করেননি হিসেবে ধরা হবে।


স্পেনের ক্ষেত্রে আবার রয়েছে ভ্যাকসিনের ভিন্ন নিয়ম। দেশটিতে ভ্রমণের অন্তত ১৪ দিন আগে আপনাকে নিতে হবে টিকার দ্বিতীয় ডোজ। ডব্লিউএইচও বা ইএমএ অনুমোদিত টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ইইউভুক্ত অন্য দেশগুলোর সাথে মিল রেখে স্পেন ২৭০ দিন মেয়াদী ভ্যাকসিন পাসপোর্ট চালু করেছে। অর্থাৎ এখানেও নয় মাস সময় পেরিয়ে গেলে বুস্টার ডোজ নিতে হবে। তবে ১২ বছরের নিচে কোনো শিশুকে স্পেনে ভ্রমণ করতে টিকা সনদ দেখাতে হবে না।


ইতালি ভ্রমণেও থাকছে প্রায় একই ধরনের কিছু নিয়ম। ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) অনুমোদিত টিকার শেষ ডোজ নেওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ২৭০ দিন মেয়াদী প্রাথমিক টিকা সনদ অথবা, যারা পূর্ণ ডোজ় ও বুস্টার ডোজ নিয়েছে, সেই প্রমাণ হিসেবে টিকা সনদ থাকতে হবে।


আর কেউ যদি ২৭০ দিনেরও আগে দুই ডোজ বা একক ডোজ নিয়ে থাকেন, তাদেরকে টিকাপ্রাপ্ত হিসেবে ধরা হবে না। সেক্ষেত্রে তাদেরকে টিকা গ্রহণ করেনি এমন পর্যটক হিসেবে বিধিমালা দেওয়া হবে।


তাছাড়া, 'সুপার গ্রিন পাস' নিয়ে কেউ ইতালিতে এলে বিশেষ কিছু ভেন্যুতে প্রবেশ করতে তাকেও টিকা গ্রহণের প্রমাণ দেখাতে হবে। এই বিশেষ ভেন্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে থিয়েটার, নাইটক্লাব, সুইমিং পুল, জিম, ইনডোর রেস্টুরেন্ট ও ক্যাসিনো।


ইউরোপে পর্যটকদের আরেক প্রিয় গন্তব্য ছিমছাম সুন্দর দেশ পর্তুগাল। পর্তুগালে এখন পর্যটক হিসেবে যেতে চাইলে অন্তত ১৪ দিন আগে টিকা গ্রহণের প্রমান দিতে হবে। কোনোভাবেই তা ২৭০ দিনের পূর্বে হওয়া যাবে না। ভ্যাকসিনের পূর্ণ ডোজ গ্রহণের পাশাপাশি পর্তুগালে আসার অন্তত ১৪ দিন আগে বুস্টার ডোজ নিতে হবে। আপনার নেওয়া ভ্যাকসিনটি অবশ্যই ইএমএ অথবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।


তুরস্কে অবশ্য অতটা ঝামেলা নেই। সেখানে শুধু তুর্কী মন্ত্রণালয় বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ভ্যাকসিনের পূর্ণ ডোজ গ্রহণের প্রমাণ থাকলেই চলবে। কিন্তু ১২ বছরের উর্ধ্ব সবার ক্ষেত্রে তুরস্কে আসার ১৪ দিন আগে শেষ ডোজ নিতে হবে।



গ্রিসে ভ্রমণ করতে গেলে 'এন্ট্রি রুলস' বা প্রবেশের নিয়ম সবার ক্ষেত্রে একই। তাই টিকা নেওয়া, না নেওয়ার প্রশ্ন উঠছে না। কিন্তু শেষ ডোজের মেয়াদ ৯ মাসের বেশি হয়ে গেলে আপনাকে টিকা গ্রহণকারীর খাতায় ধরা হবে না।


এবার প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি যদি ভ্যাকসিন না নিয়ে থাকেন তাহলে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ কতখানি?


যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে হলে তাদেরও দেশ ছেড়ে আসার অন্তত দুদিন আগে কোভিড টেস্ট নেগেটিভ হওয়ার প্রমাণ দেখাতে হবে। যুক্তরাজ্যে প্রবেশের পরেও পিসিআর টেস্ট নেওয়া হতে পারে তাদের। আর এই পিসিআর টেস্ট অবশ্যই যুক্তরাজ্যে আসার আগে বুক করতে হবে এবং সরকার-অনুমোদিত কোনো সংস্থা থেকে কিনতে হবে।


কোভিড পরীক্ষার ফল যদি পজিটিভ আসে, তাহলে ওই পর্যটককে সেলফ-আইসোলেশনে থাকতে হবে।


ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে টিকা সনদ ফোনে ডাউনলোড করে দেখানো যাবে। কোভিড পরীক্ষার ফলাফল মুদ্রিত ডকুমেন্ট রূপে বা ইমেইল-টেক্সট ম্যাসেজ হিসেবে থাকতে পারে। এর ভাষা অবশ্যই ইংরেজী, স্প্যানিশ বা ফরাসি ভাষায় হতে হবে। 


তবে মনে রাখতে হবে, টিকার কোনো ডোজই নেননি এমন পর্যটকদের গ্রহণ করার মতো দেশের সংখ্যা খুবই কম। ধারণা করা হচ্ছে, এখনো বিশ্বের ৮০টি ভ্রমণ গন্তব্যে প্রবেশের আগে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদেরই প্রি-ডিপারচার পিসিআর টেস্ট করাতে হয়। তবে স্বস্তির বিষয় হলো, যুক্তরাজ্যের ইস্যুকৃত কোভিড পাস দিয়ে আপনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবগুলো দেশে ঘুরে আসতে পারবেন।


এদিকে জাপান তাদের কোভিড বিধিনিষেধ খানিকটা শিথিল করলেও, পর্যটকের সংখ্যা সীমাবদ্ধই রেখেছে। ১০ এপ্রিল থেকে দেশটিতে চালু করা নিয়ম অনুযায়ী, দৈনিক ১০,০০০ এর বেশি মানুষ জাপানে প্রবেশ করতে পারবে না।


চীন তাদের নিজ নাগরিকদের বিদেশ ভ্রমণ থেকে দূরে থাকারই নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু বিদেশিরা চীনে যেতে চাইলে উপায় কি? গ্রেট ওয়ালের সেই চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্য আর ইতিহাসের পায়ে পায়ে হাটতে চাইলে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে ভ্রমণপিপাসুদের।


নিজ দেশের ৮৫% নাগরিককে টিকাদান সম্পন্ন করার পর চীন সীমান্ত পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দেশটির সরকার। কিন্তু ২০২২ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়ে গেলেও জিরো-কোভিড নীতি থেকে সরে আসেনি চীন। তাই খুব শিগগির যে তারা পর্যটকদের স্বাগতম জানাবে না তা বোঝাই যাচ্ছে!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.