বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ার থাকেন যে ১০ শহরে

 


ODD বাংলা ডেস্ক: একটি শহর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার পেছনে শহরের বাসিন্দাদের ভূমিকা অনেকখানি। আর তা যদি হয় আর্থিক দিক থেকে, তাহলে সংবাদের শিরোনাম হওয়া অবধারিত। বিশ্বের যেসব শহরে খ্যাতনামা তারকা, রাজনীতিবিদ কিংবা ব্যবসায়ী বিলিয়নিয়ারদের বসবাস, তাদের মধ্যেই চলে এক ধরনের প্রতিযোগিতা। ২০২২ সালে বিশ্বের কোন ১০ টি শহরে সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ারের বসবাস, তাদের সম্পদের পরিমাণ কত, বিলিয়নিয়ার বাসিন্দাদের মধ্যেও আবার কে রয়েছেন শীর্ষে- তা নিয়েই আজকের আয়োজন। পাঠক জেনে অবাক হবেন যে, বিশ্বের মোট ২৬৬৮ জন বিলিনিয়ারের চার ভাগের এক ভাগই এই ১০ শহরের বাসিন্দা!   


১. নিউইয়র্ক: ১০৭ জন বিলিয়নিয়ার 


সম্পদের পরিমাণ: ৬৪০.৪ বিলিয়ন ডলার


সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা: মাইকেল ব্লুমবার্গ (৮২ বিলিয়ন ডলার)


প্রতিযোগিতার দৌড়ে এবছর নিজের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করেছে নিউইয়র্ক শহর। গত এক বছরে শহরটিতে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বেড়েছে ৮ জন। এসব বিলিয়নিয়ারের বেশিরভাগই আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যুক্ত আছেন। থ্রাইভ ক্যাপিটাল এর প্রতিষ্ঠাতা জশ কুশনার এবং ভেরিটাস ক্যাপিটাল এর সিইও রামজি মুসাল্লামও এই চোখ ধাধানো শহরেরই বাসিন্দা। নতুন যুক্ত হওয়া বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে আছেন ব্লকচেইন স্টার্টআপ 'ওপেনসি' এর দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা ডেভিন ফিনজার এবং অ্যালেক্স আটালাহ। এদিকে তুমুল প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও শহরের সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মাইকেল ব্লুমবার্গ। নিউইয়র্কের মোট বিলিয়নিয়ার সম্পত্তির ১৩ শতাংশই ব্লমবার্গের দখলে।


২. বেইজিং: ৮৩ বিলিয়নেয়ার


মোট সম্পদের পরিমাণ: ৩১০ বিলিয়ন ডলার


সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা: ঝ্যাং ইমিং (৫০ বিলিয়ন ডলার)


চীনা ধনকুবেরদের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রমবর্ধমান সরকারি তদন্তের চাপ। ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বেইজিং এর সমষ্টিগত সম্পদের পরিমাণ কমেছে ১৭৪.৩ বিলিয়ন ডলার। আরএলএক্স টেকনোলজির প্রতিষ্ঠাতা কেট ওয়াং এবং ডিডি গ্লোবাল এর সিইও ওয়েই চেং দুজনেরই ব্যাংক-ব্যালেন্স কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে চীনা রাজধানীর উপরেও। এই দুজনসহ মোট ১৭ জন বিলিয়নিয়ারকে হারিয়েছে বেইজিং। তবে বহু কাঠখড় পুড়িয়েও শহরের শীর্ষ ধনীর খেতাব নিজের দখলে নিয়েছেন টিকটক-মালিকানাধীন বাইটড্যান্স এর প্রতিষ্ঠাতা ঝ্যাং ইমিং। ফোর্বস জানিয়েছে, গেল বছরের চাইতে এবার তার সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১৪.৪ বিলিয়ন ডলার।


৩. হং কং: ৬৮ বিলিয়নিয়ার


মোট সম্পদের পরিমাণ: ৩০৪ বিলিয়ন ডলার


সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা: লি শাউ কি (৩২.৬ বিলিয়ন ডলার)


চলতি বছরে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা কমেছে হংকং শহরেও। দেশীয় বাজারে টালমাটাল অবস্থা এবং কঠোরতম কোভিড-১৯ প্রটোকল এর পেছনে দায়ী। স্থবির পর্যটন শিল্পের কারণে সুপার-রিচ বিলিয়নিয়ারের তালিকা থেকে ছিটকে গেছেন ক্যাসিনো বিলিয়নিয়ার ইনা চ্যান, লরেন্স হো এবং হোটেল ম্যাগনেট ঝ্যাও টংটং। এছাড়া আরও যে দুজন এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছিলেন, সেই লি মান টাট এবং শিং-বর ট্যাং গত বছর মারা গেছেন। 


৪. লন্ডন: ৬৬ বিলিনিয়ার


মোট সম্পদের পরিমাণ: ৩২৪.১ বিলিয়ন ডলার


সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা: লেন ব্লাভান্টিক (৩২.৫ বিলিয়ন ডলার) 


মহামারিকালে দীর্ঘ লকডাউনের কারণে স্থবির হয়ে থাকা লন্ডন শহর স্থান পেয়েছে তালিকার চার নম্বরে। তবে এবছর নতুন করে আরও ছয় বিলিয়নিয়ারকে স্বাগতম জানিয়েছে শহরটি। এদের মধ্যে আছেন ফোর্বস তালিকায় জায়গা করে নেওয়া প্রথম বুলগেরিয়ান ও এস্তোনিয়ান বিলিয়নেয়ার এবং তাদের আবাসস্থলও এখন লন্ডন। নবাগতদের মধ্যে আরও আছেন ইলেক্ট্রোনিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান 'অ্যারাইভাল' এর প্রতিষ্ঠাতা ডেনিস সেভারডলো এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং জায়ান্ট 'রিভলুট' এর চীফ টেকনোলজি অফিসার ভ্লাদ ইয়াৎসেনকো।


৫. সাংহাই: ৬১ বিলিয়নিয়ার


মোট সম্পদের পরিমাণ: ১৮৭ বিলিয়ন ডলার


সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা: লিউ ইয়ংজিং (১৩.২ বিলিয়ন ডলার)


অন্যান্য চীনা শহরের চাইতে সাংহাইয়ের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। শহরটিতে সুপার-রিচ বাসিন্দার সংখ্যা ৬৪ থেকে কমে ৬১ তে দাঁড়িয়েছে। গত এক বছরে এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন চীনা মিডিয়া জায়ান্ট বিলিবিলির নির্বাহী কর্মকর্তা জু ই ও চেন রুই এবং যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম আগোরা'র সিইও টনি ঝাও। এদিকে সম্পদের পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়িয়ে শহরের শীর্ষ বিলিয়নিয়ার হয়েছেন কৃষি ও কেমিক্যাল ফার্ম ইস্ট হোপ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিউ ইয়ংজিং। 


৬. শেনঝেন: ৫৯ বিলিয়নিয়ার


মোট সম্পদের পরিমাণ: ২৮৬.৬ বিলিয়ন


সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা: মা হুয়াতেং (৩৭.২ বিলিয়ন ডলার)


গত এক বছরে চীনের 'সিলিকন ভ্যালি' হিসেবে খ্যাত শেনঝেন শহরে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা কমেছে নয় জন। ফলে ফোর্বস তালিকার ৬ নম্বরে নেমে এসেছে এটি। সরকারি ধরপাকড়ের ফলে ৬৪ শতাংশ শেয়ার খুইয়েছে স্মুর ইন্টারন্যাশনাল। ফলে প্রতিষ্ঠানটির তিন বিনিয়োগকারী বিলিয়নিয়ার তালিকা থেকে ছিটকে গেছেন। শুধু তাই নয়, এই মুহূর্তে শেনঝেনের সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা, ইন্টারনেট মিডিয়া টাইকুন মা হুয়াতেংও এক বছরে ২৮ বিলিয়নের বেশি সম্পদ হারিয়েছেন। 


৭. মস্কো: ৫৩ বিলিয়নিয়ার


মোট সম্পদের পরিমাণ: ২১৪.৯ বিলিয়ন ডলার


সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা: ভ্লাদিমির লিসিন (১৮.৪ বিলিয়ন ডলার)


ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের জেরে করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছে মস্কোকে। এক বছরে সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ার হারিয়েছে রুশ রাজধানী। শহরের মাত্র দুজন বিলিয়নিয়ার বাদে প্রত্যেকেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদ হারিয়েছেন। স্টিল উৎপাদনকারী কোম্পানি এনএলএমকে'র চেয়ারম্যান ভ্লাদিমির লিসিনের ব্যক্তিগত সম্পদ কমেছে ৮ বিলিয়ন ডলার। একই সাথে বিলিয়নিয়ার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ২৬ জন!  


৮. মুম্বাই: ৫১ বিলিয়নিয়ার


মোট সম্পদের পরিমাণ: ৩০১.৩ বিলিয়ন ডলার


সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা: মুকেশ আম্বানি (৯০.৭ বিলিয়ন ডলার)


গত বছরের তুলনায় তিনজন বেশি বিলিয়নিয়ার যুক্ত হয়ে তালিকার আট নম্বরে উঠে এসেছে ভারতের মুম্বাই শহর। তবে শহরে বিলিয়নিয়ার কমেছেও তিনজন। নবাগত বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে আছেন ভারতের প্রথম স্ব-প্রতিষ্ঠিত নারী বিলিয়নেয়ার ফাল্গুনি নায়ার। বিউটি-ফ্যাশন ব্র্যান্ড নিয়াকা'র মালিক ফাল্গুনির সম্পদের পরিমাণ ৪.৫ বিলিয়ন ডলার। এদিকে মুম্বাইয়ের মোট বিলিয়নিয়ার-সম্পত্তির ৩০ শতাংশ একাই নিজের মুঠোয় রেখেছেন মুকেশ আম্বানি।   


৯. সানফ্রান্সিসকো: ৪৪ বিলিয়নিয়ার


মোট সম্পদের পরিমাণ: ১৬০.৮ বিলিয়ন ডলার


সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা: ব্রায়ান চেস্কি এবং ডাস্টিন মস্কোভিটজ (১১.৫ বিলিয়ন ডলার)


গত বছরের আট নম্বর অবস্থান থেকে এক ধাপ নিচে নেমে গেছে সানফ্রান্সিসকো। তবে নতুন আলট্রা-রিচ উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানিয়েছে এই শহর। এদের মধ্যে আছেন গ্রামারলি'র সহপ্রতিষ্ঠাতা ম্যাক্স লিটভিন এবং স্টার্টআপ কোম্পানি ব্রেক্স এর দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা হেনরিক ডুবুগ্রাস ও পেদ্রো ফ্রানচেসকি।


১০. সিউল: ৩৮ বিলিয়নিয়ার 


মোট সম্পদের পরিমাণ: ১০৮.৩ বিলিয়ন ডলার


সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা: কিম বিওম-সু এবং যে ওয়াই. লি (৯.১ বিলিয়ন ডলার) 


২০১৯ সালের পর আবারও সেরা দশে জায়গা করে নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার এই শহর। চলতি বছর সিউলের নবাগত তিন বিলিয়নিয়ার বাসিন্দাই স্ব-প্রতিষ্ঠিত বিলিয়নেয়ার। দক্ষিণ কোরিয়ার সর্ববৃহৎ ম্যাসেজিং অ্যাপ 'কাকো'র প্রতিষ্ঠাতা কিম বিওম-সু এর সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষ ধনীর অবস্থানে আছেন স্যামসাং ইলেক্ট্রনিকস এর ভাইস চেয়ারম্যান জে ওয়াই লি। প্রত্যেকের সম্পদের পরিমাণ ৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.