কর্মীরা অফিস নিয়ে সন্তুষ্ট কি না কীভাবে বুঝবেন?



 ODD বাংলা ডেস্ক: অফিসে বসরা যে ভুলটা প্রায়ই করে থাকেন তা হলো কোনো কর্মী অভিযোগ না করলেই ধরে নেন তারা কর্মক্ষেত্রে সুখী।


দীর্ঘদিন ধরে কোনো কর্মী কাজ করলে তারা যেমন দক্ষ হয়ে ওঠেন, তেমনি কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের সঙ্গেও খাপ খাইয়ে কাজ করতে শিখে যান। ফলে হুট করেই তাদের চলে যাওয়ায় টিমে কাজের পরিবেশ নষ্ট নয়। বিভিন্ন গ্রাহকের সঙ্গে সেই কর্মীর সম্পর্ক, দলের অন্যান্যদের বাস্তবিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি ইত্যাদি কারণে অফিসও নানা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।


কিন্তু অফিসের দক্ষ কর্মীরা কেন হুট করেই চাকরি ছেড়ে চলে যান? তাদের চলে যাওয়া কি কোনোভাবে ঠেকানো যেত?


মার্কিন অ্যানালিটিকস ফার্ম গ্যালাপের পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে যাওয়া কর্মীদের ৫২ শতাংশ মনে করেন যে তাদের প্রতিষ্ঠান বা ব্যবস্থাপক যথাযথ ব্যবস্থা নিলে তারা চাকরি ছাড়তেন না।


আপনার অফিসে সবাইকে আপনি ধরে রাখতে পারবেন না। তবে কর্মীদের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে চাকরি ছাড়ার হার কমানো সম্ভব।


অনেকেই হয়তো চাকরি ছাড়ার সময় ‘এক্সিট ইন্টারভিউ’ দেওয়ার কথা শুনেছেন। চাকরি ছাড়ার নোটিশ দেওয়ার পর এইচআরের সদস্যরা এই ইন্টারভিউ নিয়ে থাকেন। কেউ কেন চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তা বোঝার জন্যই এই সাক্ষাৎকার। আবার কর্মীরা কর্মক্ষেত্র নিয়ে সন্তুষ্ট কি না, তা জানতে অফিসের বসরা যখন কোনো কর্মীর সঙ্গে আলাপ করে তখন তাকে বলে ‘স্টে কনভারসেশন’।


এই ধরনের আলোচনাগুলো তিন মাসে অন্তত একবার করে হলেও হওয়া উচিত। এমনকি বড় কোনো সাফল্য উদযাপন বা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মতো দিন পালনের সময়ও এই বিষয়গুলো ঝালাই করে নেওয়া জরুরি।


দেখে নেওয়া যাক কর্মীদের সঙ্গে এ ধরনের আলোচনার সময় কী কী বিষয়ে কথা বলবেন।


সবকিছু ঠিক করে নিয়ে আলোচনায় বসুন


প্রথমেই আপনার কর্মীকে জানিয়ে রাখুন যে এই আলোচনা তার পারফরম্যান্স নিয়ে নয়। কিংবা এখানে অফিসের নতুন কোনো প্রজেক্ট নিয়েও আলাপ হবে না। এই আলোচনার একটাই উদ্দেশ্য তা হলো কর্মীরা কীভাবে কাজ করছেন এবং কী পেলে তারা আরও খুশি হবেন তা জানা।


যে ধরনের প্রশ্ন করতে পারেন-


কাজ করতে কেমন লাগছে?


কোন কাজটি করতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে?


কোন ধরনের কাজ সবচেয়ে অপছন্দের?


অফিসের কাজ ও বাড়ির মধ্যে ভারসাম্য থাকছে তো?


এই কয়েক মাসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল? এমন কিছু আছে কি যাতে কাজ করা সহজ হবে?


আপনাকে কিংবা আপনার টিমকে আরও অন্য কোনোভাবে কি সাহায্য করা যায়?


আমার কাছে কি কোনো ফিডব্যাক চান?


এখানে নতুন জিনিস শিখতে পারছেন তো? না পারলে এমন কিছু কি আছে যাতে আপনার অর্জন আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব?


পরিকল্পনা করুন


কোনো আলাপে অংশ নিয়ে আমরা কতটুকু শুনছি বা বুঝতে পারছি তার অনেকটাই আমাদের মানসিক স্থিতির ওপর নির্ভরশীল। আর তাই এ ধরনের আলোচনার ক্ষেত্রে কখনোই খুব বেশি তাড়াহুড়ো করবেন না। আলোচনার শিডিউল নির্ধারণের আগে অন্য কোনো চাপ যেন না থাকে, তা নিশ্চিত করুন। কর্মীর সঙ্গে আলাপের আগে কয়েক মিনিট নিচের বিষয়গুলো চিন্তা করে নিন:


আমি কার সঙ্গে কথা বলছি?


তাদের প্রতিদিনের কাজ কী?


এই কর্মী চাকরি ছেড়ে চলে গেলে আমার এবং দলের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে?


আলোচনার পরিবেশ তৈরি করে নিন


এ ধরনের আলোচনা মুখোমুখি বসে করার পরিবর্তে ফোনে কিংবা ভিডিও কলের মাধ্যমেও করা যেতে পারে। তবে যেভাবেই করুন না কেন, মনোযোগ যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। কথা বলার সময় অহেতুক অন্য কোনো কল, টেক্সট বা নোটিফিকেশন দেখা বন্ধ করুন। কেউ যখন তাদের ব্যক্তিগত অভিমত শেয়ার করে, সেই মুহূর্তে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্য কোনো কিছুতে মনোযোগ দেওয়ার থেকে বাজে কিছু হতে পারে না।


মিটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য আলোচনা শুরুর পূর্বেই জানিয়ে দিন। যার সঙ্গে কথা বলছেন তাকে বলুন যে আপনি শুধু তার কথাই শুনতে চান। পরিবেশ হালকা করতে খুব সাধারণ কথা দিয়ে আলোচনা শুরু করুন।


অভিযোগ থেকেই খুঁজে বের করুন কর্মীদের দায়বদ্ধতা


এখন প্রশ্ন হলো কর্মীরা তাদের অভিযোগ জানানো শুরু করলে কী করবেন? যেমন ধরুন তারা বলতে পারেন বাড়ি থেকে অফিসের দূরত্ব অনেক বেশি, চাইল্ড কেয়ারের যথাযথ ব্যবস্থা নেই ইত্যাদি। ঘাবড়াবেন না। মনে রাখুন, প্রতিটি অভিযোগের সমাধান হওয়ার চেষ্টা করবেন না। বরং আপনার কর্মী যে অভিযোগ করছে সেগুলোকে কাজের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি হিসেবে তুলে ধরুন। কীভাবে আপনি তাকে সাহায্য করতে পারেন তা জিজ্ঞেস করুন। যেমন


অভিযোগ: “সারাদিন মিটিং করে আমার নিজের কাজ মাঝরাতে শেষ হয়।”


যা বলবেন: “আমি জানি আপনি নিজের কাজ নিয়ে বেশ সচেষ্ট। দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় হতাশ হচ্ছেন। এমন কি করা যেতে পারে যাতে আপনার সুবিধা হয়?”


অভিযোগ: “প্রতিদিন আমাকে একই কাজ করতে হয়। ফলে ক্যারিয়ারের কোনো উন্নতি হচ্ছে না।”


যা বলবেন: “আপনি ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তা আমি বুঝতে পারছি। এমন কি করা যেতে পারে যাতে আপনার সুবিধা হয়?”


পরবর্তী আলোচনার দিনক্ষণ নির্ধারণ


মিটিং শেষ হয়ে আসলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করুন। কোনোকিছু নিয়ে কথা বলা বাকি থাকলে সেগুলোর জন্য পরবর্তীতে আরেকটি মিটিং নির্ধারণ করুন। কর্মীরা যেসব বিষয়ে সাহায্য চেয়েছেন সেগুলো নোটপ্যাডে লিখে রাখুন। ফলে আপনি যে তাদের কথা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন, তারা তা বুঝবে।


পরিশেষে বলুন: “খোলাখুলি কথা বলায় আপনাদের ধন্যবাদ। আমি যেমনটা বলেছি, সেই অনুযায়ী আপনাদের সাহায্য করার চেষ্টা করব। দুই মাস পর আমরা আবার এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলব। কিন্তু তার আগে যদি কেউ কিছু বলতে চান, সেই সুযোগও থাকছে। আপনার কথা শোনার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তত আছি।”


বস হিসেবে এই কাজগুলো আপনার নিয়মিত কাজের মধ্যে নাও পড়তে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন, বাস্তবতা হলো এসব ছোটখাটো বিষয়ে খেয়াল রাখা আপনার নেতৃত্বগুণে যেমন বাড়িয়ে তুলবে, তেমনি কর্মক্ষেত্রেও আনবে ইতিবাচক পরিবর্তন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.