এটাই এ সময়ের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যক্তিত্বের ধরন!

 


ODD বাংলা ডেস্ক: যখন সময় থমকে দাঁড়ায়, নিরাশার পাখি দু'হাত বাড়ায়... নচিকেতার এ গানে ফুটে উঠেছে মানবজীবনের কঠিন সময়। জীবনে কখনো কখনো এরকম বিষণ্ণ কিছু মুহুর্ত আমাদের জন্য পার করা ভীষণ দুরূহ হয়ে ওঠে।


এ দুর্বিষহ সময়টুকুতে মানুষের প্রয়োজন অন্য মানুষের সংস্পর্শ। সে মানুষগুলো, যারা অন্যের মর্মবেদনা বুঝতে পারে ও সাহায্য করতে পারে তারাই একজন বিষণ্ণ মানুষের জন্য ত্রাতার মতো হয়ে উঠতে পারেন। তাদের এই সক্ষমতাকে এমপ্যাথি বলা হয়।


এমপ্যাথিকে একটি গুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানুষ বাদে অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যেও এমপ্যাথি দেখা যায়। যাদের মধ্যে এমপ্যাথি থাকে, তারা সহজেই অন্যের দুঃখকে অনুধাবন করতে পারেন, সে অনুযায়ী আচরণ করতে পারেন।


এমপ্যাথি একটি গুণ হলেও এটি আবার বিপজ্জনকও হয়ে উঠতে পারে। নতুন একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পার্সোনালিটি অ্যান্ড ইন্ডিভিজুয়াল ডিফারেন্সেস নামক একটি জার্নালে প্রকাশিত হওয়া ওই গবেষণায় এমপ্যাথির মতো একটি আপাত-ইতিবাচক গুণকে ভিন্ন আলোকে দেখা হয়েছে।


এমপ্যাথির কিছু প্রকারান্তর রয়েছে। এগুলো হলো:


কগনিটিভ এমপ্যাথি: অন্যের অনুভূতি নিজে অনুভব না করেই বুঝতে পারার সক্ষমতা।


ইফেক্টিভ এমপ্যাথি: অন্যের অনুভূতি নিজের ভেতরে অনুভব করার সক্ষমতা।


কমপ্যাশন: ওপরের দুই প্রকার এমপ্যাথির সংযোগে তৈরি হয় কমপ্যাশন।


বর্তমান গবেষণায় একটি নির্দিষ্ট ধরনের এমপ্যাথি নিয়ে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। 'ডার্ক এমপ্যাথি' নামের এ ধাঁচটি নিয়ে এখনো তেমন কোনো গবেষণা কাজ হয়নি। গবেষকদের মতে, এমপ্যাথিক মানুষরা তখনই খুব বিপজ্জনক হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন যদি তাদের মধ্যে 'ডার্ক ট্রায়ো' নামের একটি ব্যক্তিত্বের গঠনের কোনো একটি বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকে।


এই ডার্ক ট্রায়োতে নার্সিসিস্ট, সাইকোপ্যাথিক, ও ম্যাকিয়াভেলিয়ান বৈশিষ্ট্যের মানুষজন রয়েছেন। ম্যাকিয়াভেলিয়ানিজম বলতে ম্যানিপুলেটিভ, অবিবেকী, শঠ ও ধূর্ত চরিত্রের মানুষকে বোঝায়।


এই কুখ্যাত ট্রায়োতে অবস্থান করা মানুষেরা অনেক ক্ষেত্রেই এমপ্যাথি অনুভব করেন না। বর্তমান গবেষণায় এক হাজার মানুষের মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়ন করা হয়েছে।


এতে দেখা গেছে অংশগ্রহণকারীদের ১৩ শতাংশ 'ডার্ক' (নেতিবাচক) প্রকৃতির ছিলেন, তাদের এমপ্যাথির মাত্রাও ছিল কম। ৩৪ শতাংশকে বর্ণনা করা হয়েছে 'টিপিক্যাল' হিসেবে, তাদের এমপ্যাথি ও নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য ছিল গড়পড়তা। ৩৩ শতাংশের এমপ্যাথির মাত্রা ছিল উঁচু আর ডার্ক ট্রেইটের মাত্রা কম।


এই গবেষণায় চতুর্থ একটি উপদল ছিল যাদের নিয়ে এর আগে খুব বেশি গবেষণা করা হয়নি। এই দলকে গবেষকেরা 'ডার্ক এমপ্যাথস' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এরা ছিল মোট নমুনার ২০ শতাংশ। গবেষকেরা জানিয়েছেন, এ দলের মানুষদের এমপ্যাথির পরিমাণ গড়ের চেয়ে কিছুটা বেশি এবং তারা কগনিটিভ ও ইমোশনাল; উভয় স্তরেই তা প্রকাশ করতে পারেন।


বিজ্ঞানীরা এ দলটিকে 'বিপজ্জনক' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কারণ তাদের পক্ষে তাদের চারপাশের মানুষকে কষ্ট দেওয়া অনেক সহজতর একটি বিষয় হতে পারে বলে রায় দিয়েছেন তারা। এমনকি এ শ্রেণীর মানুষেরা যখন অন্যদের আঘাত করে তখন তারা সেটা অনুধাবনও করতে পারে না।


ওই 'ডার্ক এমপ্যাথ'দের সম্পর্কে গবেষকদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা তুলনামূলকভাবে কম মাত্রার আক্রমণাত্মক ও সহিংস মনোভাব দেখায়। বর্তমান গবেষণায় অংশগ্রহণকারী অনেক ডার্ক এমপ্যাথই নিজেদের চরিত্রের এ নেতিবাচক দিকটি সম্পর্কে জানেন এবং তারা জানিয়েছেন তারা নিজেরাও নিজেদের এ গুণগুলোকে পছন্দ করেন না। অনেকে এটাও স্বীকার করেছেন, এ বৈশিষ্ট্যের কারণে তারা নিজেদের ঘৃণা করতে শুরু করেছেন।


ড. রামানি দুর্বাসুলা নামের একজন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সাইক সেন্ট্রাল-এর একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, 'শীতল ও কম সংবেদনশীল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের চেয়েও ডার্ক এমপ্যাথি বেশি ভয়ংকর হতে পারে। এ ধরনের ব্যক্তি অন্যকে নিজের খুব কাছে নিয়ে আসতে পারেন, এবং ফলস্বরূপ বেশি কষ্টের কারণ হয়ে উঠতে পারেন। কাছের মানুষদেরই কষ্ট দেওয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা থাকে।'


গবেষকেরা আশা করছেন, তাদের এ গবেষণা এমপ্যাথি ও এমপ্যাথিক মানুষদের নিয়ে আরও বেশি জানতে সহায়তা করবে। এমপ্যাথি খুবই ভালো একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কিন্তু ভুল লোকের এমপ্যাথি ভালোর চেয়ে খারাপ প্রভাবই বেশি রাখতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.