গর্ভাবস্থাকে ঘিরে রয়েছে একাধিক ভুল ধারণা, জেনে নিন কোনটা মেনে চলবেন, কোনটা নয়

 


ODD বাংলা ডেস্ক: গর্ভাবস্থা মেয়েদের জীবনের সব থেকে সুন্দর সময়। যখন নিশ্চিত হন গর্ভধারণ করেছেন, তখন নানা রকম পরিবর্তন আসে হবু মা-বাবার জীবনে। অনেকের কাছে প্রেগনেন্সি টেস্ট পজেটিভ আসা মানে একাধিক নিয়ম মেনে চলা শুরু। প্রথম তিন মাস খুবই সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তারেরা। এর পরও থাকতে হয় নিয়ম মেনে। যতক্ষণ না বাচ্চা পৃথিবীর আলো দেখছে, ততক্ষণ মেনে চলা দরকার হাজারটা নিয়মত। তবে, হাজার সতর্কতা সত্ত্বেও অনেকের গর্ভপাত হয়ে থাকে।  আজ রইল কয়টি ভুল ধারণার কথা। গর্ভপাত নিয়ে রয়েছে একাধিক ভুল ধারণা রয়েছে মানুষের মধ্যে। জেনে নিন এগুলো কী কী। 


স্ট্রেস থেকে গর্ভপাত হয় এমন কথা অনেকেই মনে করেন। কিন্তু, এই ধারণা মোটেও ঠিক নয়। গর্ভাবস্থায় স্ট্রেস শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে ঠিকই। কিন্তু, তার কারণ মোটেও গর্ভপাত নয়। স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া, পারিবারিক অশান্তির মাত্রাতিরিক্ত হলে, তা বাচ্চার ক্ষতি করতে পারে ঠিকই, কিন্তু এর জন্য গর্ভপাত হয় এমন নয়। তবে, এই সময় মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে বাচ্চার ওপর তার ভালো প্রভাব পড়ে। 


গর্ভপাত প্রতিরোধ করা যায়, এমন কথা অনেকেই মনে করেন। সহবাস, ব্যয়াম ও ভুল খাবর খেলে গর্ভপাত হয় না। জেনেটিক কারণে হতে পারে গর্ভপাত। যদি আপনার শিশুর ক্রোমোজোম অস্বাভাবিকতা থাকে, তাহলে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা আপনাকে এবং আপনার শিশুকে সুস্থ রাখবে। কিন্তু, এই নিয়ম মেনে চললে গর্ভপাত রোধ হবে এমন নয়। ধূমপান ও ভুল ওষুধের জন্য গর্ভপাত হতে পারে। 


গর্ভরোধক ওষুধ খেলে জন্মগত বাচ্চার মধ্যে ত্রুটি থাকে। এমন ধারণা ভুল। অনেক মহিলারাই গর্ভনিরোধক ওষুধ খেয়ে থাকেন। এই সকল ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে ঠিকই। কিন্তু, তার মানে বাচ্চা মধ্যে ত্রুটি দেখা দেবে এমন নয়। তবে, গর্ভনিরোধক ওষুধ ব্যবহার আগে অবশ্যই ডাক্তারি পরামর্শ নিন।    


গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ওষুধ খেতে অনেকে অনীহা প্রকাশ করে। প্রচলিত ধারণা আচে যে ভিটামিন ওষুধ খেলে এতে নাকি বাচ্চা বড় হয়ে যায়। এতে ডেলিভারির সময় সমস্যা হতে পারে। এই ধারণা একেবারে ভুল। ভিটামিন মায়ের শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করে। এতে মা ও বাচ্চা দুজনের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।  


গর্ভধারণারে পর অনেকেই শারীরিক পরিশ্রম ও সবহাস করা থেকে বিরত থাকেন। এতে নাকি বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে এণন ধারণা প্রচলিত। কিন্তু, এ ধারণা একেবারে ভুল। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা যেতে পারে। তবে, তার আগে ডাক্তারি পরামর্শ নিন। সকলের শারীরিক অবস্থা এক রকম নয়। তাই পরামর্শ নিয়ে তবেই ব্যায়াম করা উচিত।


জামা পরা নিয়ে অনেকের মনে নানা রকম ধারণা থাকে। প্রচলিত ধারণা অনুসারে,  পেটিকোট বা চুড়িদারের পা জামা ওপর করে বাঁধলে বাচ্চা ওপর দিকে উঠতে পারে না। এটা একেবারে ভুল ধারণা। জামার সঙ্গে গর্ভবস্থ বাচ্চার কোনও সম্পর্ক নেই। তাই এমন ধারণা ত্যাগ করা উচিত। 


প্রচলিত আছে পেঁপে ও আনারস খেলেই গর্ভপাত হয়। গর্ভাবস্থায় সব খাবার খাওয়া উচিত নয়। এই সময় নিয়ম মেনে ও ডাক্তারি পরামর্শ মেনে খাদ্যগ্রহণ করতে হবে। বাচ্চার স্বাস্থ্যের কথা ভেবে নানা রকম খাবার খেতে বারণ করা হয় মায়েদের। তবে, পেঁপে ও আনারস খেলেই গর্ভপাত হয়, এমন নয়। এই দুই খাবার কম পরিমাণ খান। এতে সুস্থ থাকবেন। 


সন্ধ্যার পর বাইরে বের হলে, স্বামী স্ত্রীর সহাবাস করলে গর্ভপাত হয়। এমন ধারণা অনেক জায়গায় প্রচলিত আছে। এই কথার কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। এই সময় সাবধানে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তা না হলে গর্ভপাত হতে পারে। কিন্তু, সন্ধ্যার পর বাইরে বের হলে, স্বামী স্ত্রীর সহাবাস করলে গর্ভপাত হয় এমন নয়।


গর্ভধারণের সময় থেকে মা ও বাচ্চার মধ্যে একটা আলাদা বন্ডিং তৈরি হয়। একজন মা গর্ভস্থ বাচ্চাকে নিয়ে নানা রকম স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। শুধু শরীর নয়, মনের মধ্যেও পরিবর্তন দেখা দেয়। তবে, গর্ভপাতের অনুভূতি সন্তান হারানোর মতো নয়। গর্ভপাত হলে মায়ের মনের ওপর চাপ পড়ে ঠিকই, কিন্তু এতে কোনও মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবেন এমন নয়। 


গর্ভপাত নিয়ে নানা রকম ধারণা প্রচলিত। এই সব ধারণার মধ্যে কোনওটি বাস্তব সম্মত, কোনওটি পুরোপুরি ভুল। এই সময় সতর্ক থাকবেন তা ঠিক। কিন্তু, কুসংস্কার আচ্ছন্ন হবেন না। এতে বাচ্চা ও মায় উভয়ের ক্ষতি হতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.