আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে ‘রক্তবৃষ্টি’! নেপথ্যে লুকিয়ে যে রহস্য
ODD বাংলা ডেস্ক: আমরা সবাই জানি বৃষ্টির কোনো রং নেই। জলের রঙই বৃষ্টির রং। বৃষ্টির জল বিশুদ্ধ জল হিসেবে সংরক্ষণ করে খেয়ে থাকেন অনেকেই। কিন্তু ভারতে ঘটল ভিন্ন ঘটনা।
আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে ‘রক্তবৃষ্টি’! তা-ও কি কখনো সম্ভতনা। অথচ ভারতে এই ঘটনা এক বার নয়, দু’বার ঘটেছে। কেরলের মালাবার জেলার ওয়েনাড়ে ১৯৫৭ সালের ১৫ জুলাই এই ‘রক্তবৃষ্টি’র ঘটনা প্রথম বার ঘটে। প্রথম দিকে টকটকে লাল রঙের বৃষ্টি হলেও পরবর্তীতে বৃষ্টির রং হয়ে যায় হলুদ!
এরপর ২০০১ সালের ২৫ জুলাই থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেরলের বহু এলাকায় লাল রঙের ভারী বৃষ্টিপাত হয়। তথ্য অনুযায়ী, ১৮৯০ সাল থেকেই কেরল এবং শ্রীলঙ্কাতে বিক্ষিপ্তভাবে এই লাল বৃষ্টি দেখা গিয়েছিল।
ভারত সরকারের একটি সমীক্ষার পর জানা যায়, স্থানীয় শেওলা জাতীয় উদ্ভিদের বায়ুবাহিত কণা বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে এই রঙ তৈরি হয়েছিল। তবে অনেকেই এই তত্ত্বে খুশি হননি। কিছু মানুষ দৃঢ়বদ্ধ ছিলেন, রক্তবৃষ্টির কারণ একেবারেই অন্য। অনেকের মতে, পৃথিবীর মাটিতে ভিনগ্রহীদের অবতরণই না কি এই বৃষ্টিপাতের নেপথ্যে!
এই কথা অতিরঞ্জিত বা কল্পবিজ্ঞানের গল্প মনে হলেও এই ঘটনা বৈজ্ঞানিক মহলকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে বৃষ্টিপাত হওয়ার সময় তারা অদ্ভুত আওয়াজও শুনেছিলেন।
যারা এই বৃষ্টির পেছনে ভিনগ্রহীদের ‘হাত’ দেখেছিলেন, তাদের বক্তব্য ছিল এই ঘটনা ছিল ‘ঐশ্বরিক অভিশাপ’-এর নিদর্শন। আবার অনেকের মতে এই ঘটনা পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার সূত্রপাত। তবে এই সব তত্ত্বের মধ্যে সব চেয়ে প্রশংসনীয় ছিল পদার্থবিদ গডফ্রে লুই-এর আনা তত্ত্ব।
২০০৮ সালের এপ্রিলে গডফ্রে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এই গবেষণাপত্রে তিনি উল্লেখ করেন যে, বায়ুমণ্ডলে ধূমকেতুর বিস্ফোরণের ফলে মহাকাশ থেকে অনেক জীবাণু কেরলের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। আর তার ফলেই এই রক্তবৃষ্টি।
এই গবেষণাপত্র সংবাদ মাধ্যমের বিশেষ নজর কেড়েছিল। তবে অনেক বিজ্ঞানীই গডফ্রের তত্ত্ব নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন।
এই লালবৃষ্টির জলে অনেক মৌলেরও সন্ধান মিলেছিল। পরীক্ষা করার পর অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, কার্বন, ক্লোরিন, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম-সহ বহু মৌল এই বৃষ্টির জলে পাওয়া গিয়েছিল। এতেই আরো সন্দেহ জাগে বিজ্ঞানীদের মনে। সাধারণ বৃষ্টির জলে এত বেশি পরিমাণ মৌলের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না। তবে শেষ পর্যন্ত অনেক পরীক্ষা করার পরও এই ঘটনার কোনো সঠিক এবং প্রমাণসাপেক্ষ কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, কেরলে লাল রঙের বৃষ্টি ছাড়াও হলুদ, সবুজ এবং কালো বৃষ্টির ঘটনা লক্ষ করা গিয়েছে। ১৮৯৬ সালেই কেরলে রঙিন বৃষ্টির খবর পাওয়া গিয়েছিল।
Post a Comment