ক্লান্ত ও ক্লান্তি কতটা বিপদের আভাস

 


ODD বাংলা ডেস্ক: দিব্যি ছিলেন, হেলেদুলে কাজে কর্মে ,কিচিরমিচিরে দারুণ যাচ্ছিলো জীবনটা । মাঝেমধ্যে টেনশন যে ছিলোনা তা নয়, কিন্তু তা এতো ক্লান্ত করতনা, অথচ এখন ভীষণ ক্লান্তি যেন জীবনকে জেঁকে ধরেছে, সকালের হাঁটাহাঁটি , উষ্ণ জল, মেথি গুঁড়ো সব করার পরেও এই ক্লান্তি! উপায় কি একে তাড়ানোর যাতে সব আবার আগের মত হয়ে যায় ! আসুন আজ জানি কেন ক্লান্তি ?


১) প্রথমেই ভাবতে হবে যে সুগার হয়নি তো ? কারণ  সুগারে আক্রান্ত  রোগীরা সহজেই ক্লান্তির শিকার হন , শরীরটা খারাপ হতে থাকে , জিভ শুকিয়ে আসে ,ঘুম ঘুম ভাব হয়, দুর্বল মনে হয় সবসময়, তাই ফাস্টিং সুগার এবং পিপি টেস্ট করাতে হবে, তবেই জানা যাবে কি হচ্ছে আসলে। এবার এতো কিছু করেও হয়তো সত্যিই আসল কারণ খুঁজে পাওয়া যায়না, বা সুগারের মাত্রাটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়না তাই সুগারের সঠিক রেজাল্ট জানতে গেলে  রোগীর ৩ মাসের গড় সুগারের মাত্রা অর্থাৎ  HBA1C TEST করাতে হবে এবং সুস্থতার উপায় খুজতে হবে ওষুধ খেয়ে , বিশ্রাম নিয়ে এবং শরীরচর্চা করে।


২) থাইরয়েড রোগটা খুব খারাপ ,আর সুগারের সঙ্গে এটা সরাসরি যুক্ত, তাই ক্লান্তি অনুভবের প্রথম দিনেই বা খুব মোটা হয়ে গেলে অবশ্যই থাইরয়েডের টেস্ট করাতে হবে।


৩) ভিটামিন -ডি, রক্তাল্পতা, হার্টের সমস্যাতেও কিন্তু ক্লান্তি থাকে সবসময় । উঠতি ছেলেমেয়েদের মধ্যে রক্তাল্পতা হবার মূল কারণ অপুষ্টি, লোহা ও ভিটামিনের ঘাটতি থেকেই এই রোগ হয় । এতে পড়াশোনার  ক্ষতি হবার পাশাপাশি, চুল পড়ে যাওয়া , রঙ ফ্যাকাশে হওয়া ,নখ ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, দাঁতের ক্ষয় হওয়াও খুব সাধারণ দৃশ্যমানতায় পড়ে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে অর্শ ,গ্যাস্ট্রিক আলসার বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে অ্যানিমিয়া দেখা যায়। তাই হঠাৎ শরীর দুর্বল হলে অ্যানিমিয়াও হতে পারে।


৪) আজকাল সবাই প্রায় ইনডোর কাজ করেন, স্কুলেও সেভাবে বাচ্চারা মাঠে খেলেনা, বাড়ীর মহিলারাও ঘরের ভেতরেই কাজ সারেন ফলে আমাদের শরীরে খুব কমই রোদ লাগে আর এর ফলে ভিটামিন -ডিয়ের ঘাটতি হচ্ছে । চেয়ারে অনেকক্ষণ বসার পর উঠলে মাথা ঘোরায়,শোয়ার পর উঠলেও দুর্বল মনে হয়, মাংসপেশিতে ব্যাথা, থাই ,বাহুর পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। হাড় ও মাংসপেশিকে সুস্থ-সবল রাখতে গেলে  ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন -ডি দুটোই দরকার, এর একটিরও অসামঞ্জস্য থাকলে শরীরের কাঠামো দুর্বল হবেই হবে।


৫) আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি, এর ওপরেই থাকে অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড, এই গ্ল্যান্ড থেকেই বের হয় ষ্টেরয়েড হরমোন , এই গ্রন্থির কাজ কোনসময় ঠিক না হলেই তখন দেহে দেখা যায় ঘাটতি,ফলে ক্লান্তিভাব, দুর্বলতা দেখা যায়। রোগী রোগা হয়ে যান দিনে দিনে, রঙ কালো হতে থাকে, বিশেষ করে ঠোঁট ও জিভের কালো ভাব খুব বেশি করে চোখে পড়ে।


৬) বয়স্কদের ক্ষেত্রে হালকা জ্বর ও ক্লান্তি তাদের দুর্বল করার জন্য যথেষ্ট , কিন্তু হঠাৎ করে জ্বর আসার কি কারণ সেটাকে খুঁজে বের করতে হবে। যেমন যক্ষ্মা শরীরের নানান গ্ল্যান্ড , পেট , স্পাইনাল কর্ড ,ব্রেনেও হতে পারে । তাই আপনার বাবা-মা বা শ্বশুর- শাশুড়ী যদি কারণ ছাড়াই দুর্বল বোধ করেন তাহলে অবশ্যই দেখতে হবে এইরকম কোন লুকোনো সংক্রমণ আছে কিনা ।


৭) ক্রনিক লিউকিমিয়া, লিম্ফোটিক লিম্ফোমার মতো ক্যান্সার, ব্লাড বা ব্রেস্ট ক্যান্সারের আগমন হলেও শরীর হঠাৎ করে দুর্বল হতে পারে।


৮) অতিরিক্ত ওজন অনেক সময় ক্লান্তি বয়ে আনে, এর কারণে স্লিপ অ্যাপনিয়া হয়ে মাথায় অক্সিজেনের সরবরাহ কম হলেও দিনের বেলায় ঝিমুনি ও দুর্বলতা আমাদের গ্রাস করে।


৯) সোডিয়াম পটাসিয়াম লেভেল কমে গেলেও ক্লান্তি বাসা বাঁধে।


১০) পিটুইটারি গ্রন্থির কাজ হল সমস্ত শরীরকে চালনা করা , এর ক্ষরণ কম হলেও ক্লান্তি বাধ্যতামূলক।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.