ঘুমের আগে কেন জল পান করবেন?



 ODD বাংলা ডেস্ক: জল খাই কেন আমরা? কেন আবার শরীরকে সচল রাখতে এবং দেহের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতে জলের যে কোনও বিকল্প নেই! তাই তো দেহের ভিতরে যাতে কোনও সময় জলের ঘাটতি দেখা না দেয়, তা সুনিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য। আর রাত্রে যেহেতু আমরা প্রায় ৮ ঘন্টা জল পান করি না, তাই সে সময় দেহের ভিতরে জলের ঘাটতি দেখা দেওয়াটা বেজায় স্বাভাবিক ঘটনা। আর এমনটা হলে যে একাধিক শারীরিক সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওটে, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে! তাই তো শুতে যাওয়া আগে বেশি নয়, মাত্র এক গ্লাস জল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। তবে এমনটা করা যদি শুরু করেন, তাহলে যে শুধু দেহের ভিতরে জলের চাহিদা মিটবে, তা নয়। সেই সঙ্গে আরও বেশ কিছু শারীরিক উপকার মিলবে, যে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।


প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে শরীরকে ডিহাইড্রেশনের কবল থেকে বাঁচাতে দিনে কম করে ৩-৪ লিটার জল খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এইটুকু তথ্য দিয়েই বিজ্ঞানীরা থেমে যাননি। বরং আরও কয়েকধাপ এগিয়ে তারা এটা জানার চেষ্টা করেছেন যে দিনের কোনও বিশেষ সময়ে জল খেলে তার কোনও সুফল পাওয়া যায় কিনা। আর এমনটা জানার চেষ্টায় যে তথ্য উঠে এসেছে, তা বেশ চমকপ্রদ! জানা গেছে রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে যদি এক গ্লাস জল খাওয়া যায়, তাহলে দারুণ সব উপকার মেলে। যেমন ধরুন…


১. মানসিক অবসাদের মতো সমস্যা দূরে থাকে:


২০১৪ সালে হওয়া এক স্টাডিতে দেখা গেছে রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে জল পান না করলে দেহের অন্দরে এত মাত্রায় জলের ঘাটতি দেখা দেয় যে তার প্রভাবে শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে, যা ডিপ্রেশনের মতো সমস্যাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসে। সেই সঙ্গে লেজুড় হয় অ্যাংজাইটিও। তাই এমন ঘটনা যাতে না ঘটে তা সুনিশ্চিত করতেই ঘুমতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস জল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, এমন অভ্য়াস করলে মন-মেজাজ তো চাঙ্গা হয়ে ওঠেই, সেই সঙ্গে ঘুমও বেশ ভল মতই হয়।


২. শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:


বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে রাত্রিরে শুতে যাওয়ার আগে কম করে এক গ্লাস জল পান করলে পেশি এবং জয়েন্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, সেই সঙ্গে এনার্জি লেভেলও বাড়ে। শুধু তাই নয়, দেহের অন্দরে জলের ঘাটতি মেটার কারণে গুরুত্বপূর্ণ কিছু হরমোনের ক্ষরণও ঠিক মতো হতে শুরু করে। ফলে সার্বিকভাবে শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠতে যে সময় লাগে না, তা তো বলাই বাহুল্য!


৩. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:


বেশ কিছু কেস স্টাডির পর একথা প্রামাণিত হয়ে গেছে যে রাত্রে শোওয়ার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়। ফিরে আসে আদ্রতা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্কিন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে বলিরেখাও কমতে শুরু করে।


৪. ইনসমনিয়ার মতো সমস্যা দূর হয়:


একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শুতে যাওয়ার আগে জল খেলে দেহের অন্দরে হরমোনাল ইমব্যালেন্স দূর হয়। সেই সঙ্গে পেশির ক্লান্তিও কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীর এবং মন এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে ঘুম আসতে দেরি লাগে না। আর ঘুম ঠিক মতো হলে সকালটা যে বেশ মনোরম হয়ে ওঠে, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে। প্রসঙ্গত, জল খেয়ে শুয়ে পরা মাত্র, তা শরীরের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে যায়। ফলে একদিকে যেমন দেহের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি অনিদ্রার সমস্যাও দূরে পালায়।


৫. সারা শরীরে রক্ত চলাচলের উন্নতি ঘটে:


রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে গরম জল খেতে পারলে আরেকটি উপাকার পাওয়া যায়। এমনটা করলে সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে দেহের ভাইটাল অর্গ্যানদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে ধমনীতে জমে থাকা বর্জ পদার্থও শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।


৬. জলের চাহিদা মেটে:


একথা নিশ্চয় জানা আছে যে আমাদের শরীরের সিংহভাগই জল দিয়ে তৈরি। তাই তো দৈহিক সক্ষমতা বজায় থাকতে দেহের অন্দরে জলের ঘাটতি যাতে কোনও সময় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার প্রয়োজন রয়েছে। আর এই একই কারণে শুতে যাওয়ার আগে জল খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আসলে এমনটা করলে সারা দিন ধরে কাজ করতে করতে দেহে যে জলের ঘাটতি হয়ে থাকে, তা দূর হয়। সেই সঙ্গে শরীরের সক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।


৭. শরীর বিষ মুক্ত হয়:


সারা দিন ধরে নানাভাবে আমাদের শরীর একাদিক টক্সিক উপাদান প্রবেশ করতে থাকে। এদের যদি ঠিক সময়ে শরীর থেকে বের করে দেওয়া না য়ায়, তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ! সেই কারণেও চিকিৎসকেরা ঘুমানোর আগে জল খাওয়া পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আসলে এমনটা করলে ডাইজেস্টিভ সিস্টেম, পেশী এমনকি ত্বকের অন্দরে জমে থাকা টক্সিক উপাদান শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রোগ ভোগের আশঙ্কা হ্রাস পায়।


৮. ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে:


একথার মধ্যে কোনও ভুল নেই যে রাত্রে পেট ভর্তি করে জল খেয়ে শুলে সকাল পর্যন্ত ওজন বেশ অনেকটাই কমে। কারণ ক্যালরি বার্ন করতে জলের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে ঠান্ডা জল খাওয়া মাত্র শরীরের তাপমাত্র হঠাৎ করে কমে যায়। ফলে সেই সময় তাপমাত্রা বাড়াতে শরীরকে অতিরিক্ত কাজ করা শুরু করতে হয়। আর এমনটা হওয়ার কারণে স্বাভাবিকবাবেই বেশি মাত্রায় জ্বালানির প্রয়োজন পরে। ফলে ওজন কমতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, রাতের শুতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস জল খেলে আরেকটি ঘটনা ঘটে। এই সময় মেটাবলিক রেট স্বাভাবিক মাত্রার থেকে অনেকটাই বেড়ে যায়। এই কারণেও ওজন কমার পথ প্রশস্ত হয়।


৯. কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা দূর হয়:


রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে এবং সকালে উঠে যদি প্রতিদিন এক গ্লাস করে গরম জল খেতে পারেন, তাহলে দেখবেন নিমেষে কোষ্টকাঠিন্যের মতো সমস্যা কমে যাবে। আসলে এমনটা করলে বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বেরিয়ে যেতে কোনও অসুবিধাই হয় না।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.