সাঙ্গুতে জল ঢালে যে
ODD বাংলা ডেস্ক: সাঙ্গুকেই রবিঠাকুরের ছোট নদী বলা বেশি মানায়। এঁকেবেকে চলা এই নদীটির জন্ম আমাদেরই পাহাড়ে। বান্দরবানের মদক পাহাড়ে। বহরে ১৭০ কিলোমিটার মোটে নদীটি। পাহাড়ি এই নদীটা মদক থেকে রেমাক্রি হয়ে তিন্দুর পরে থানচি ছুঁয়ে বলিপাড়া হয়ে রুমা বাজারের পাশ ঘেঁষে বেতছড়া হয়ে বান্দরবান সদর থেকে গিয়ে নেমেছে সাতকানিয়া, তারপর আনোয়ারা, তারও পরে বাঁশখালি পেরিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। বৈশাখে সত্যি নদীটায় হাটুজল থাকে। চলতে গিয়ে আমাদের নৌকাটাই কতবার ঠেকল চড়ায়। পরে নেমে ঠেলে বাগে আনতে হলো। এই নদীটায় জল ঢালে যারা তাদের বলে ছড়া, কোথাও বলে ঝিরি। আর ছড়ায় ঢালে জল ঝর্না বা জলপ্রপাত। এগুলোর সংখ্যা অনেক। এই-ওই-সেই পাহাড়ের ফাকফোঁকর বেয়ে এমন অনেক ঝর্না নেমে এসেছে । কোনোটা শুকনো মৌসুমে একেবারে খটখটে থাকে, কোনোটা আবার সারা বছরই ফুরফুরে। নামকরা নাফাখুম, অমিয়াখুম যেমন সারাবছরই জ্বলজ্বল করে জলে। তবে আমরা চলেছি বেতছড়ার থলিপাড়া ঝর্নাটির খোঁজে, আর আতঙ্কে আছি জল পাব তো এর মাথায়?
বেতছড়া বাজারে
বান্দরবান শহরের কালাঘাট থেকে আমাদের নৌকা ছাড়ল। এ নৌকাগুলো প্রস্থে বড় হয় না, ক্যানোর মতো লম্বা হয়, মাঝের খোড়লও হয় না গভীর, মোটরে চলে। নৌকার মাঝি ছেলেটার বয়স কম, ১৭-১৮ হবে, বেশ লম্বা, পেটানো শরীর। আমরা সাতজন অভিযাত্রী, বসার জন্য প্রত্যেকে আলাদা আলাদা আড়াআড়ি তক্তা পেলাম। পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা নদী চঞ্চলা-স্বচ্ছ সলিলা, চলেছি উজানে। নদীর দুই পাড়ে পাহাড়ের উপত্যকায় তামাকের চাষ বেশি। কোথাও কোথাও কলার ক্ষেতি। তখন দুপুর গড়াতে চলেছে। অনেকে এসেছে নাইতে। পাহাড়ি বাচ্চারা একেবারে উদোম, মেয়েরা থামিতে বুক ঢেকে সাবান মাখছে। পুরুষেরা কেউ কেউ খেউ জাল ঠেলছে, মাছ খুব পাচ্ছে বলে মনে হলো না, কুঁচো চিংড়ি বেশি। দূরে দূরে পাহাড়ের মাথায় বা কোলে এক দুটি পাড়া, সেগুলোয় ২০-৩০টি বাড়ি। নদীর ধার বলেই এখানে পাড়া দেখা যাচ্ছে বেশি। নদীই যে সভ্যতা গড়ে তার প্রমাণ পাচ্ছি এখানে। চৈত্র ফুরাতে বেশি বাকি নেই। এপ্রিলের ৬ তারিখ, এখন নদীতে জল কম, মাঝেমধ্যে জেগেছে নুড়ি পাথরের চড়া, তাতে চড়ে বেড়াচ্ছে খঞ্জন। দীর্ঘ বাঁশভেলা সিকি কিলোমিটার তো হবেই দেখলাম ভেসে আসছে উল্টোদিক থেকে। এসব ভেলায় চার-পাঁচজন মানুষ থাকে। তাদের রান্নার চুলা থাকে ভেলায়, থাকে জামাকাপড়। চট্টগ্রাম পর্যন্ত পুরোটা পথ যেতে ১০-১৫ দিনও লেগে যায়। চড়াগুলো তারা গুন টেনে পার হয়। জঙ্গলে জোঁক আর মশার কামড় খায় খুব।
আমাদের ঘণ্টাখানেক সময় লাগলো বেতছড়া ঘাট যেতে। বালি পথ পেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে কমপক্ষে ৩০০ ফুট ওপরে উঠে যেতে হলো। আজ পথে আছি আমরা ৭ জন – লেখক ও বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাতা রাসেদ শাহ, নাট্যনির্দেশক চন্দন সরকার নয়ন, স্থপতি আশরাফুল গনি, অভিজ্ঞ পর্বতারোহী রিফাত হাসান, গ্রাফিক ডিজাইনার এআরকে রীপন, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মনোয়ার হায়দার খান এবং আমি। বাজারে ঢুকে বেশ কয়েকটি দোকান পেলাম। তবে বেশিরভাগই স্টেশনারি দোকান, দুটি কেবল ফার্মেসি আর একটি দর্জির দোকান। হোটেলও আছে দুটি। আমাদের গাইড হ্লাথুরি মারমার দুলাভাই জানালেন, ২০টির মতো দোকান আছে বাজারে।' সংখ্যাটি কম নয়। আমরা এর আগে মিলনছড়ি বা মুরংবাজারে বা বারো মাইলে এতো বেশি দোকান দেখিনি। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে আমরা একটি মসজিদ পেলাম যার প্রতিষ্ঠাকাল লেখা ১৯৩৬। এটিও আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করল। দেশভাগের আগেই এখানে মসজিদ ঘর হয়েছে! রিফাত ভাইয়ের কাছে ব্যাপারটি পাড়তেই তিনি বললেন, 'ইউপিএলের (ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড) একটি প্রকাশনা তিনি দেখেছেন যেটি বেশ বড়সড় আর তাতে পার্বত্য অঞ্চলের অনেক পুরোনো সময়ের ছবি আছে যেমন কাঠের হাত বাওয়া ফেরি যাতে চড়ে কাঠবডির বাস পার হয় আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তো এসব এলাকা বেশ সরগরম ছিল মানে ওইদিকে মায়ানমারে জাপানীরা আর এদিকে আমেরিকান ও ব্রিটিশরা। তাই খুব অসম্ভব নয় এখানে বাঙালি বা আরাকানি বসতি ওই সময়েই তৈরি হওয়ার।' পরে অন্তর্জাল ঘেঁটেও রিফাত ভাইয়ের কথার সাক্ষ্য পাওয়া গেল। ফ্রান্সিস বুকানন ১৭৯৮ সালে বাংলা, আরাকান, ত্রিপুরা, মিজোরাপ, বার্মা (মায়ানমার) ঘুরে বেড়িয়েছেন।
হেডম্যান অফিসে থাকা
পাহাড়ে পাড়াপ্রধানকে বলা হয় কারবারি আর কয়েকটি পাড়া নিয়ে যে মৌজা হয় তার প্রধানকে বলা হয় হেডম্যান। সরকারকে প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক কাজেও সাহায্য করেন হেডম্যান। হ্লাথুরিদা একজন হেডম্যান। বিটিইএফের (বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপানসন ফোরাম) দলনেতা স্থপতি আশরাফুল গনির সঙ্গে তার আগে থেকেই চেনাজানা। গনি ভাই মারফত আমরা বিকালের কিছু পরে হেডম্যান অফিসের থাকার ঘরে জায়গা পেলাম। দুইতলা ভবন এটি। থাকার ঘর দুইটি, রান্নাঘর একটি আর ওয়াশরুম আছে। ছাদটা বেশ বড়। সেগুনের পাতা গলিয়ে চোখ ছড়িয়ে দিলে সাঙ্গু দেখা যায় ছাদ থেকে। রূপালি সুতার মতো নদীটা চকচকে। সে রাতে চাঁদটা ছিল কাস্তের মতো। সন্ধ্যার পরপরই অন্ধকার জমাট বেঁধে গেল বাজারের গায়ে। কেবল মেউচিং ক্যাফেতে দু'চার জন আড্ডা দিচ্ছিল। কারণ এখানে মুণ্ডি পাওয়া যায়। চাউলের গুঁড়া দিয়ে তৈরি নুডলসকে বলা হয় মুণ্ডি। পাহাড়ে এর ভালো প্রচলন। আমাদের খাবারের দায়িত্ব নিয়ে নেন নয়ন ভাই, বান্দরবান থেকে দুটি কলার মোচা নিয়ে এসেছেন। ধারের বাজার থেকে আরো এনেছেন করলা, ডাল চড়ানোর ঘোষণাও দিলেন। এখানে আতপ চালই চলে। আমাদের রান্না হলো রাত সাড়ে নয়টায়। খেতে বসে নয়নদার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলাম- সত্যি ভালো রেঁধেছেন বিশেষ করে ডাল আর কলার মোচা। খেয়েদেয়ে আর দেরি করলাম না, শরীর বিছানা চাইছিল। ভালো ঘুম দিয়ে সকাল সকাল উঠে পড়লাম। রিফাত ভাই আমারও আগে উঠে পাড়া বেড়াতে চলে গেছেন। মসজিদে নামাজ পড়ে মেউচিংয়ের টিনের দেয়ালে কোভিড-১৯ সতর্কীকরণ পোস্টার দেখলাম। সব কথা মারমা ভাষায় লেখা। বান্দরবান সদর আর রোয়াংছড়িতে মারমা জনগোষ্ঠীই বেশি। তারপর আরেকটু এগিয়ে পেলাম একটি হোটেল। সাজানো সিঙ্গারা দেখে বুঝলাম এটি বাঙালি দোকান আর দোকানদার একজন বাকপ্রতিবন্ধী। তবে কাস্টমাররা অধিকাংশই চেনা বলে কাজ চালিয়ে নিতে কোনোই কষ্ট হয় না। দোকানে চা খাচ্ছিলেন হাফেজ আহমদ। বয়স হবে ৪৪ বছর। জানতে চাইলাম, বাড়ি কোথায়? হাফেজ আহমদের দাড়ি আছে অল্প। গায়ের রঙ বাদামি। গড়ন মাঝারি।
হেডম্যানপাড়ার একটি দোকান; ছবি: মনোয়ার হায়দার খান/ চরন্তিডটকম
হাফেজ আহমদ বললেন, আমি বর্মাইয়্যা। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ আসি। আরাকান থেকে পাহাড় ধরে পাঁচদিন হেঁটে বাংলাদেশে আসছি। অনেক জায়গা ঘুরছি- সাতকানিয়া, কক্সবাজার, কেরানীরহাট, চট্টগ্রাম। কোনো সময় রিকশা চালাইছি, কোনোসময় ঠেলা। রাস্তা বানানোর কাজও করছি অনেক। ঢাকায়ও রিকশা চালাইছি। গরীব মানুষ ভাই, কাজ না করলে খামু কি? তাই সব কাজই করি, সব কাজই পারি।
এখানে কোথায় থাকেন?
হেডম্যান থাকার জায়গা দিছে। এক বর্মাইয়া মেয়ে বিয়ে করছি। বড় ছেলেটার বয়স আঠারো।
আজকে কি কাজ করবেন?
লেবারির কাজ। নৌকা থেকে মালপত্র তুলে দোকানে দোকানে পৌঁছাইয়া দিব।
হাফেজ আহমদের কাছেই জানা গেল কুড়ি ঘর বর্মাইয়া আছে বেতছড়ায়, বাঙালি আছে ত্রিশ-পয়ত্রিশ ঘর। আর বেপারিরা তো প্রতিদিন যাওয়া-আসা করে। একজন কলার বেপারি ইদ্রিস মিয়ার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তিনি পাহাড় থেকে কলা কিনে নিয়ে বিক্রি করেন চট্টগ্রাম। একটা গুদামঘরও ভাড়া নিয়েছেন বেতছড়ায়। বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া।
ঝর্ণার খোঁজে বের হলাম
সকালে নাস্তা বলতে রাতের বেঁচে যাওয়া ভাত আর ডাল সঙ্গে ডিম ভাজি। তা শেষ করে বের হতে এগারটা বাজল। মনোয়ার পথ দেখিয়ে রাবার বাগানের ভিতর দিয়ে নিয়ে চলল। সূর্য মাথায় চড়তে বসেছে। তবে বাতাস ছিল বলে রোদ গাট হয়ে শরীরে এঁটে যেতে পারছিল না। মিনিট পনের হেঁটে আমরা পৌঁছালাম হেডম্যান পাড়ায়। মারমা এ পাড়াটি একটা ঝিরির দুই ধারে। এই ঝিরিটির মাথাই হলো ওই ঝর্নাটি যার খোঁজে আমরা বেড়িয়েছি। ঝিরিটি একেবারে পাটকাঠি, খুব অল্পই জল বইয়ে দিচ্ছে। তবু এটাই জীয়নকাঠি। মোট ঘর আছে এ পাড়ায় ১৩০টি। বেশ বড় পাড়া বলতে হয়। মারমারা ঘর বাঁধে মাটি থেকে এক মানুষ সমান উঁচুতে। সমতলে পাটাতন ঘর যেমন হয় তেমন। ১০-১২টি খুঁটির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ায় ঘর। ঘরের মুখে থাকে সিঁড়ি, তারপর একটু উঠান তারপর মূল টিনের ছাউনি। ছাউনির তলে তিনটি ঘর হয়, দুটি থাকার আরেকটি কিচেন কাম ডাইনিং। পুরোটাই হয় বাঁশের। অবশ্য যাদের সামর্থ্য আছে, তারা কাঠের ঘরও তোলেন। তবে পুরো তল্লাটে কোনো ইটকাঠের ভবন নেই মন্দিরটি ছাড়া। মারমা পাড়ায় মন্দির থাকেই, কোনো কোনো পাড়ায় একাধিক। তারা বুদ্ধের অনুসারী। মন্দিরকর্তা বা পুরোহিতদের বেশ প্রভাব আছে মারমা জনজীবনে। প্রায় প্রতি সন্ধ্যাতেই পাড়ার মুরব্বিরা মন্দিরে জড়ো হন, ধর্মকথা শোনেন। হেডম্যান এ পাড়ায় থাকেন বলে এর নাম হেডম্যান পাড়া। পাড়ায় বিদ্যুত নেই। সোলার প্যানেল দেখতে পেলাম কোনো কোনো ঘরের টিনের চালে। হেডম্যানের বাড়িতে আমাদের বসার জায়গা হলো। বাড়িটা একটা তেঁতুল গাছের ধারে আর কাছেই অনেক কয়টি নারকেল গাছ। বাড়িতে হ্লাথুরিদার বাবা ও তার দাদার ছবি ঝুলছে। দাদার বাবাকে হেডম্যান ধরলে পাড়ার বয়স সোয়াশ বছর হয়। মারমা বাড়ির পাটাতনের ওপর যে ছোট্ট উঠান থাকে সেখানে সাধারণত বিকালে পরিবারের সকলে মিলে গল্প করতে বসে, কাপড় শুকানোর জায়গাও আছে এখানে। পাটাতন ঘর হয় মূলত বন্যজন্তুর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য। তবে এ পাড়া সদরের কাছে বলে সেভাবে বন্যপ্রাণী হানা দেয় না। লোকে নীচের জায়গাটায় জ্বালানী কাঠ স্তুপ করে রাখে, মৌসুমে রাখে হলুদ, আদা বা বাদামের বস্তা। এ পাড়া থেকে আমরা একজন গাইড নিব। কিন্তু তার খাওয়া হয়নি বলে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তিনি হ্লাথুরিদার শ্যালক হবেন সম্পর্কে। পাহাড়ের লোকজন দু'বেলা খেয়ে অভ্যস্ত- সকালে আর বিকালে। তাকে খাওয়ার সময় দিয়ে আমরা গেলাম মন্দিরের ধারের বড় দোকানটায়। সেখানেই মজিদ মিয়া ও তার দলকে দেখতে পেলাম। তারা বাঁশখালি থেকে এসেছে সাত দিন হয়। সেগুন গাছ কাটতে এসেছে তারা। তাদের কন্ট্রাক্টর চাকমা জনগোষ্ঠীর এক সদস্য। মজিদ মিয়াদের তিনি মজুরি দেন না, বরং চুক্তি করা- যত ঘনফুট কাঠ তত পরিমাণ টাকা। হিসাব কষে মজিদ মিয়া বললেন, দিনে ছয়শ টাকা হয়। হেডম্যান বাড়ির ধারের মাঠে তারা তাঁবু করে থাকে। রান্নাও করে নেয় নিজেরা। সকালে শুঁটকি আর পান্তাভাত খেয়ে বেড়িয়েছে। মজিদ মিয়া বললেন, 'কয়টা দিন বেগার খাটুনি দিই, সেই সকালে উঠে কাজে লেগেছি আরো দিন পনের কাজটা করতে পারলে ঈদে ছেলেমেয়েদের কিছু দিতে পারব।'
রিপন আর গনী ভাই ঝর্নার উৎসমুখে; ছবি: মনোয়ার হায়দার খান/ চরন্তিডটকম
আমাদের গাইড খাওয়া সেরে এসে তাড়া দিলেন। পিঠে তার ঝোলানো ব্যাগে জলের বোতল, হাতে দা। হাঁটতে হাঁটতে আমরা পাহাড়ের একটা টানেল পেলাম। তারপর পাথর বড় বড় হয়ে এলো। ডিঙিয়ে, গড়িয়ে, হামাগুঁড়ি দিয়েও চলতে হলো পথ। ঝিরিটা ক্রমেই জলবতী হয়ে উঠছে। এক জায়গায় দুটি বাঁশের কঞ্চি পোঁতা দেখলাম, তার একটায় একটি পান পাত্র। বোঝা গেল, এখানকার জল ভালো অর্থাৎ পানযোগ্য। পাড়া থেকেও এখানে জল নিতে আসে অনেকে। পাথর ক্রমে বড় হতে থাকল। কোথাও কোথাও আমরা একজন আরেকজনের হাঁটুতে পা দিয়ে পার হলাম। এরপর চোখ জুড়িয়ে দিল প্রজাপতিগুলো। দারুণ তাদের বাহার- হলুদ, কালোর ওপর নীল ফুটকি ইত্যাদি। সঙ্গী রিপন বললো, 'প্রজাপতিরা কিন্তু নির্বানপ্রাপ্ত। মানে যাদের আর পুনর্জন্মের ভার বইতে হবে না তারাই প্রজাপতি হয়ে নেচে নেচে বেড়ায়।'
আমি জানি না ওর কথা কতটা সত্য তবে তর্ক চালিয়ে যাওয়ার মতো শক্তি নেই গায়ে। পাহাড়-পাথর পেরিয়েছি প্রায় এক ঘণ্টা। যখনই ভেঙে পড়ব তার অল্প আগেই ঝর্নার দেখা পেয়ে সব শক্তি ফিরে এলো দেহে। যদিও জল অতটা ঝরছে না তবু আমাদের খুশি বাঁধ ভাঙলো। জল যেখানে এসে পড়ছে সেখানে ছোট্ট একটু কুণ্ডুমতো তৈরি হয়েছে। তাতে ভেসেও থাকা যাচ্ছে। আমরা রবিঠাকুরের আহ্বান 'এসো করো স্নান নবধারা জলে' মনে রেখে ঝর্নার জলে ভিজলাম।
Post a Comment