প্রকৃতির ফাস্ট ফুড ফল, বুঝে না খেলে ফাস্ট ফুডের মতোই ক্ষতিকর

 


ODD বাংলা ডেস্ক: দু’মিনিট নুডলের চেয়েও চটজলদি খাবার৷ বানাতে হবে না, কেনো, ধোও, খাও৷ তবে সাধারণ ফাস্ট ফুডে যেমন উপকারের বালাই নেই, একটা রোল ও এক ক্যান নরম পানীয় খেলে বা চপ-কাটলেট-চাওমিন-ফুচকা খেলে শুধু ক্ষতিই হয়, প্রাকৃতিক ফাস্ট ফুড অত নির্মম নয়৷ অসুখ-বিসুখ অনুযায়ী কোনটা খাওয়া যায়, আর কোনটা নয় তা বুঝে, ভাল করে ধুয়ে একটু একটু করে চিবিয়ে খেলে প্রচুর উপকার হয়৷ কিন্তু উপকার আছে বলে লাগাম ছেড়ে খেতে শুরু করলে, স্বাভাবিক খাবার-দাবারের বদলে খেলে, চিবিয়ে খেতে সময় লাগে বলে রস বানিয়ে খেয়ে নিলে, অপকারের পাল্লা এত ভারী হয় যে তা উপকারকে ছাপিয়ে যায় বহু গুণ৷


উপকার বনাম অপকার


ফলে প্রচুর ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আছে বলে মাপমতো খেলে ওজন, প্রেশার, সুগার বশে থাকে৷ পুষ্টি হয় অঢেল৷ প্রচুর এনার্জি পাওয়া যায়৷ এমনকি, ২০১৭ সালে ‘প্লস-ওয়ান’ নামের বিজ্ঞান পত্রিকায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন রকম ফল মাপমতো খেলে মানসিক স্বাস্থ্যও ভাল থাকে৷ আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সায় দিয়েছে তাতে৷ তারা বলেছে, নিয়মিত কম ক্যালোরির সুষম খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ২-৩ কাপ ফল খেলে, বিশেষ করে কম মিষ্টি ফল, তা ইস্কিমিক হৃদ্‌রোগ ও তার রিস্ক ফ্যাক্টর তথা ওজন, প্রেশার, সুগার, কোলেস্টেরল, মানসিক চাপ, সব কিছুকে বশে রাখতে সাহায্য করে৷ প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের গুণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে অসুখ-বিসুখ দূরে থাকে, ভাল থাকে ত্বক, চুল৷ পেট পরিষ্কার থাকে৷


তবে সুষম খাবারের অঙ্গ হিসেবে না খেয়ে কেউ যদি ভাবেন, ফলই হল পুষ্টির শেষ কথা, তা হলে বিপদ৷ কারণ ফলে প্রোটিন থাকে খুব কম৷ ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি৩, ক্যালশিয়াম থাকেই না প্রায়৷ হিম আয়রন, অর্থাৎ যে ধরনের আয়রন পেলে রক্তাল্পতা বশে থাকে, তা থাকে না-থাকার মতো৷ হার্ট ভাল রাখার কারিগর ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে না৷ কাজেই সব ছেড়ে দিনের পর দিন প্রচুর ফল খেতে শুরু করলে অপুষ্টি থেকে শুরু করে ক্লান্তি, রক্তাল্পতা হতে পারে৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে অসুখ-বিসুখে জর্জরিত হতে পারেন৷ এমনকি, হাড় নরম হয়ে যাওয়ার অসুখ বা অস্টিওপোরোসিসও হতে পারে৷ আর এর সঙ্গে যখন চিনির বিপদ যোগ হয়, তখন তো আর কথাই নেই৷


ফলের চিনি: চিনির ক্ষতি


চায়ে চিনি মেশানোর আগে যাঁরা দু’বার ভাবেন, নরম পানীয় ছুঁয়ে দেখেন না, সেই তাঁরাই কিন্তু ফলের রস খান অবলীলায়৷ মিষ্টি ফল খান প্রচুর৷ কারণ মানুষের ধারণা, ফলের চিনি যেহেতু প্রাকৃতিক, তা থেকে ক্ষতি হয় না, যদি না ডায়াবিটিস থাকে৷


ধারণাটি ভুল৷ ফলের চিনি তথা ফ্রুকটোজের সঙ্গে প্রচুর পুষ্টি থাকে সন্দেহ নেই৷ কিন্তু লিমিট রাখতে না পারলে তা থেকে ক্ষতিও হয়৷ গোটা ফল চিবিয়ে খেলে ফাইবারের সঙ্গে মিশে চিনি আস্তে আস্তে শরীরে ঢোকে বলে শরীর তাকে সামলানোর সময় পায়৷ কাজেই বাড়াবাড়ি না করলে, ২-৩ কাপের বদলে ৮-১০ কাপ খেয়ে না ফেললে অত ক্ষতি হয় না৷ কিন্তু এর সঙ্গে যদি আবার ভাল পরিমাণে ফলের রস খাওয়ার অভ্যাস থাকে, একসঙ্গে এত চিনি ঢোকে যে, শরীর তাকে সামলাতে পারে না৷ রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়৷ ডায়াবেটিক, প্রি-ডায়াবেটিক ও পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের রোগীদের ক্ষতি হয়৷ তার উপর অতিরিক্ত চিনির বেশিটাই ফ্যাট হিসেবে জমে যায়৷ ভূুড়ি বাড়ে, দেখা দেয় ফ্যাটি লিভার ও অন্যান্য সমস্যা৷ মেটাবলিক সিনড্রোমের সূত্রপাত হয়৷ অর্থাৎ প্রেশার-সুগার-কোলেস্টেরল-ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়তে শুরু করে৷ তার হাত ধরে সূত্রপাত হয় ইস্কিমিক হৃদ্‌রোগের৷


শেষ কথা


অর্থাৎ ফল নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না৷ কম ক্যালোরির সুষম খাবার খাওয়া ও ব্যায়ামের অভ্যাস থাকলে ২-৩ কাপের জায়গায় মাঝেমধ্যে ৪-৫ কাপ খেলে খুব ক্ষতি নেই৷ মাঝেমধ্যে এক-আধ কাপ ফলের রসও খেতে পারেন৷ তবে সহজে পাওয়া যায় বলেই দিন-রাত টুক টুক করে খেয়ে যাওয়ার অভ্যাসে দাঁড়ি টানুন৷

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.