মিলনের সময় আঠার মতো লেগে থাকে এই ব্যাঙ!

ODD বাংলা ডেস্ক: বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলের স্ত্রী ব্যাঙের শরীর সাধারণত থলথলে। বিপরীতে চেকনাই দেহ পুরুষ ব্যাঙের। প্রকৃতির এই বিন্যাস পুরুষ ব্যাঙের জন্য যৌনমিলন করে তুলেছে কষ্টকর। এ জন্য বিশেষ কসরতের আশ্রয় নিতে হয় পুরুষ ব্যাঙের।
এ সমস্যা সমাধানে বেভিসেপস অ্যাডসপারসাস প্রজাতির ব্যাঙের রয়েছে বিশেষ কৌশল। মিলনের সময় পুরুষ ব্যাঙ একদম আঠার মতো লেগে থাকে স্ত্রী ব্যাঙের দেহের সঙ্গে।

সাধারণত মিলন শুরু হয় ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গনের মাধ্যমে। পুরুষ ব্যাঙ সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার পর এক প্রকার ঝাঁপিয়ে পড়ে, এরপর লেপ্টে থাকে স্ত্রী ব্যাঙের ঠিক পেছনে।

ছোট হাতে মোটাসোটা স্ত্রী ব্যাঙকে চারপাশ থেকে জড়িয়ে ধরতে পারে না পুরুষ ব্যাঙ। তাই শুরুতে স্ত্রী ব্যাঙের পেছনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয় পুরুষটি। একপর্যায়ে ওই জুটি মাটির নিচে নিজেদের অনেকটা পুঁতে ফেলে এবং প্রজনন শুরু করে। অর্থাৎ এই অবস্থায় শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু মুক্ত করে তারা। এই পুরো সময়টা পুরুষ সঙ্গীটি নারী ব্যাঙটির সঙ্গে আঠার মতো আটকে থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাঙ সাধারণত সঙ্গমের সময় এক ধরনের আঠালো পদার্থ ছাড়ে। তবে এটা জানা যায়নি এই তরল আসলে স্ত্রী না পুরুষ ব্যাঙ থেকে নির্গত হয়।

জাপানের একদল বিজ্ঞানী বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা চালিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন। তারা বলছেন, এই নিঃসরণ দুই তরফেই।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেন নাগাহামা ইনস্টিটিউট অফ বায়ো-সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির আতসুশি কুরাবায়াশি। গবেষণাপত্রটি প্রকাশ হয় জার্মান জার্নাল অফ হারপেটোলজিতে।

ভাইস ওয়ার্ল্ড নিউজকে কুরাবায়াশি বলেন, ‘ট্রান্সকিউটেনিয়াস অ্যাম্ফিবিয়ান স্টিমুলেটর নামে একটি যন্ত্র ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে ব্যাঙকে ত্বকের থেকে সেই আঠালো পদার্থ বের করেছি। এ জন্য অল্পমাত্রা বিদ্যুৎ প্রয়োগ করে ব্যাঙগুলো উদ্দীপিত করি।

20220413075259.gif
‘১০টি স্ত্রী ও ১০টি পুরুষ ব্যাঙের ওপর এই পরীক্ষা চালানোর পর দেখা গেছে, পুরুষগুলোর বুক ও বাহু থেকে সেই আঠালো পদার্থ বের হয়েছে। অন্যদিকে নারীগুলোর কেবল পিঠ থেকে এই তরল নিঃসরিত হয়। আর নারীদের এই আঠায় লেপ্টে থাকে পুরুষ ব্যাঙ।’

আরেকটি পরীক্ষা করে এই পদার্থ কতটা আঠালো তাও বের করেছে কুরাবায়াশির দল। তারা দেখেছেন সময়ের সঙ্গে আঠার তীব্রতা শক্তিশালী হয়। প্রায় ৭২ ঘণ্টা থাকে এই আঠার তীব্রতা।

বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের ভিলানোভা ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যারন বাউয়ারের। কুরাবায়াশির এই অনুমানগুলো আরও স্পষ্ট করেছেন তিনি।

বাউয়ার বলেন, ‘পরীক্ষায় দেখা গেছে সেই আঠা নিঃসরণের ক্ষেত্রে প্রাণীরা বেশ সচেতন। তারা সেখানেই এই আঠা কাজে লাগায়, যেখানে প্রয়োজন।’

বিশ্বে পাঁচ হাজারের বেশি প্রজাতির ব্যাঙের অস্তিত্ব রয়েছে। এর মধ্যে জিনোস ব্রেভাইসপস প্রজাতির ব্যাঙকে বলা রেইন ফ্রগস। পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকার অনুর্বর অঞ্চলে এদের দেখা মেলে। এই প্রজাতির প্রায় সব প্রাণীই মাটির নিচে বেশির ভাগ সময় কাটায়, বর্ষা মৌসুমে এরা বেরিয়ে আসে।

কুরাবায়াশি বলেন, ‘আমাদের কাছে এদের মিলনের অভ্যাস খুঁজে বের করতে সুযোগ আছে, তবে সেই পথ খুবই সংকীর্ণ। আপনি যদি এদের সঙ্গম দেখতে চান, তবে সারা রাত জেগে থাকতে হতে পারে।’

কুরাবায়াশি ও তার দল একটি প্রশ্নের উত্তর জানতে পারেননি; সেটি হলো নারী ব্যাঙ কেন আঠালো পদার্থ বের করে, যেখানে লেপ্টে থাকার জন্য পুরুষদের নিঃসরণই যথেষ্ট।

কুরাবায়াশি এবং তার দল যখন সাউথ আফ্রিকায় মাঠপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছিলেন, তখন তারা একটি ভিন্ন প্রজাতির স্ত্রী ব্যাঙের সঙ্গে লেগে থাকা একটি পুরুষ ব্যাঙের খোঁজ পান। তারা দেখেছিলেন এই পুরুষ ব্যাঙটি আঠা তৈরি করেনি।

কুরাবায়াশি বলেন, ‘আমরা আসলে এটি লক্ষ করিনি। ঘটনাক্রমে খুঁজে পেয়েছিলাম। দেখেছিলাম পুরুষ ব্যাঙটি তার প্রজাতির সঙ্গে প্রতারণা করছে। কেন এই প্রতারণা, তা এখনও রহস্য রয়ে গেছে।’

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.