স্তনের পুনর্নির্মাণ সম্ভব

 


ODD বাংলা ডেস্ক: মহিলাদের শরীরের সৌন্দর্য অনেকাংশে নির্ভর করে স্তনযুগলের উপরে। তা ছাড়া শরীরের অন্যতম অঙ্গ হিসেবে তা রোজকার যাপনের অংশও হয়ে দাঁড়ায়।


পঞ্চাশের কোঠায় পা রেখেছেন শ্রাবণী। হঠাৎই ধরা পড়ল ব্রেস্ট ক্যানসার। একটা স্তন বাদ পড়ার কথা শুনে বেশ ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শে ব্রেস্ট রিকনস্ট্রাকশনের সিদ্ধান্ত নিলেন অবশেষে।


মহিলাদের শরীরের সৌন্দর্য অনেকাংশে নির্ভর করে স্তনযুগলের উপরে। তা ছাড়া শরীরের অন্যতম অঙ্গ হিসেবে তা রোজকার যাপনের অংশও হয়ে দাঁড়ায়। সেখানে হঠাৎ যদি একটি স্তন বাদ দেওয়ার মতো অবস্থা দেখা দেয়, তা হলে রোগভোগের সঙ্গে মানসিক যন্ত্রণাও বাড়তে পারে। প্রাথমিক স্টেজে ব্রেস্ট ক্যানসার ধরা পড়লে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার নিরাময় সম্ভব। কিন্তু ব্রেস্ট ক্যানসারের চিকিৎসায় অনেক সময়ে ব্রেস্ট রিমুভ করার পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সহায় হতে পারে ব্রেস্ট রিকনস্ট্রাকশন।


ব্রেস্ট রিকনস্ট্রাকশন কখন করা হয়?


অঙ্কোসার্জারির সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. রোজ়িনা আহমেদ বললেন, ‘‘প্রথমে আমরা রোগীর নিজের স্তনই রাখার চেষ্টা করি। ব্রেস্ট ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য যখন কোনও রোগী আসেন, প্রথমেই ব্রেস্ট রিমুভ করার কথা ভাবা হয় না। যদি দেখা যায় যে, কোনও রোগীর ক্যানসার খুব অ্যাডভান্সড স্টেজে, তখন ক্যানসার নিরাময়ের দিকে আমরা মন দিই বেশি। সেখানে রিকনস্ট্রাকশনের চেয়েও রোগ সারানোর দিকে সময় দেওয়া ও চিকিৎসা করা বেশি জরুরি। তা হলে রিকনস্ট্রাকশনের কথা কখন ভাবা হয়? ধরুন, যে রোগীর একেবারে আর্লি স্টেজ নয়, আবার অ্যাডভান্সড স্টেজও নয়, কিন্তু দেখা গেল হয়তো তাঁর একটা ব্রেস্টে ছড়িয়েছিটিয়ে দু’তিনটে ক্যানসার রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ব্রেস্ট প্রিজ়ার্ভ করে সার্জারি করা হয়তো সম্ভব নয়। তখন ব্রেস্ট রিকনস্ট্রাকশনের কথা ভাবা হয়।’’ তবে চিকিৎসকের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পরেই রোগী রিকনস্ট্রাকশনের সিদ্ধান্ত নেন।


রিকনস্ট্রাকশন হয় কী ভাবে?


দু’ভাবে ব্রেস্ট রিকনস্ট্রাকশন করা হয়। রোগীর নিজের টিসু দিয়ে ব্রেস্ট রিকনস্ট্রাকশন করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে রোগী যদি খুব রোগা হন, তখন এই টিসু পেতে অসুবিধে হয়। মূলত রোগীর পেটের বা থাইয়ের টিসু দিয়েই স্তনের গড়ন ঠিক করা হয়। কিন্তু রোগা চেহারা হলে টিসু পাওয়া যায় না। তখন ভরসা রাখতে হয় ইমপ্লান্টে। ব্রেস্ট ইমপ্লান্টের মাধ্যমেও স্তনের পুনর্গঠন সম্ভব। আর এই দুই প্রক্রিয়াতেই দুই স্তনের মাপ এক রাখার চেষ্টা করা হয়। টিসু রিকনস্ট্রাকশন চিরস্থায়ী হয়। কিন্তু ইমপ্লান্ট রিকনস্ট্রাকশন বছর দশেক পরে আবার পাল্টানোর দরকার হতে পারে। তবে সেটা যে হবেই, তা নয়।


‘‘আর একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, রোগী যদি স্লিম হন তা হলে শুধু ইমপ্লান্টের কসমেটিক আউটকাম সব সময়ে ভাল হয় না। কারণ ইমপ্লান্ট দেওয়া হয় স্কিনের নীচে। স্কিন আর ইমপ্লান্টের মাঝে যদি একটু ফ্যাট না থাকে, তা হলে গড়ন ভাল হয় না। তখন ইমপ্লান্ট কভার করার দরকার পড়ে। এই কভার আবার দু’রকমের। রোগীর নিজের টিসু দিয়েও তা কভার করা যায়। আবার কৃত্রিম সাবস্ট্যান্স দিয়ে কভার করা যায়। সে ক্ষেত্রে ব্রেস্টের গড়ন ঠিকঠাক থাকে,’’ বলে জানালেন ডা. রোজ়িনা আহমেদ।


রোগীর প্রয়োজন অনুসারে কিছু ক্ষেত্রে আবার ব্রেস্টের গঠন ঠিক করার জন্য ইমপ্লান্ট রিকনস্ট্রাকশন ও টিসু রিকনস্ট্রাকশন দুটোই একসঙ্গে করা হয়ে থাকে।


সব ধরনের রিকনস্ট্রাকশনেই পরবর্তী কালে টাচআপ দরকার হতে পারে। যেমন, কখনও ফ্যাট গ্রাফ্টিং, কখনও স্কার রিভিশন করা হতে পারে। ব্রেস্ট রিকনস্ট্রাকশনে ছোট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিপল-এরিয়োলার এরিয়াও তৈরি করা যায়।


রিকনস্ট্রাকশন করার আগে


স্তনের পুনর্গঠনের পরে কী-কী হতে পারে, সেটা আগে ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ ক্যানসারের চিকিৎসা চললে তার সঙ্গে এই কসমেটিক সার্জারির চিকিৎসাও পাশাপাশি চলতে থাকবে। যে-যে দিকে বিবেচনা করা জরুরি—

* নিজের স্তন ও রিকনস্ট্রাক্টেড স্তন সম্পূর্ণ একরকম না-ও হতে পারে, সেটা ধরে নিয়ে এগোতে হবে। কসমেটিক সার্জারির সময়ে চেষ্টা থাকে দুটো স্তনের গঠন এক রাখার। কিন্তু অনেক সময়ে সেটা না-ও মিলতে পারে।

* ডা. রোজ়িনা আহমেদ বললেন, ‘‘অনেক রোগীর স্তনে অস্ত্রোপচারের পরে রেডিয়োথেরাপির প্রয়োজন পড়ে। রিকনস্ট্রাক্টেড ব্রেস্টে রেডিয়োথেরাপি নেওয়া যায়। কিন্তু ইমপ্লান্ট রিকনস্ট্রাকশন থাকলে সেই ইমপ্লান্ট থেকে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। সব ক্ষেত্রে যে ইনফেকশন হবে, এমনটা নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে তা হতে পারে।’’ তাই রেডিয়োথেরাপি দিতে হলে, এই বিষয়ে রোগীকে আগে চিন্তা করে নিতে হবে।

* ব্রেস্ট রিকনস্ট্রাকশন কখন করবেন, সেই সিদ্ধান্তও জরুরি। ক্যানসারের চিকিৎসা চলাকালীন বা পরেও এই কসমেটিক ট্রিটমেন্ট করা যায়। তবে ডা. রোজ়িনার মতে, ক্যানসারের চিকিৎসা চলাকালীনই রিকনস্ট্রাকশন সার্জারি করিয়ে নিলে কসমেটিক আউটকাম সবচেয়ে ভাল পাওয়া যায়। ক্যানসারের ট্রিটমেন্টের অনেক পর্যায় আছে, তার মধ্যে সার্জারি, রেডিয়োথেরাপি ইত্যাদি কম্বিনেশন অব ট্রিটমেন্ট চলতে থাকে। তাই কসমেটিক আউটকাম ভাল পেতে সার্জারির সময়েই রিকনস্ট্রাকশন করলে সবচেয়ে ভাল। কিন্তু রোগী চিকিৎসার কোন পর্যায়ে আছেন, শরীরের অবস্থা কেমন, সেই সব দিক বিবেচনা করা দরকার। তার সঙ্গে আর্থিক দিকটাও বিবেচনা করতে হবে। কারণ ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যয়সাপেক্ষ। তার পাশে কসমেটিক সার্জারি করতে গেলে তার খরচও লাগবে। সার্জারির সঙ্গে ইমপ্লান্ট লাগলে ইমপ্লান্টের খরচও যোগ হবে।


মানসিক অবস্থা পর্যালোচনা


একজন মহিলার পক্ষে ব্রেস্ট রিমুভ করার সিদ্ধান্ত বা সে ভাবে বাকি জীবনটা নিজেকে মেনে নেওয়া সহজ না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগীর মনের অবস্থা আগে বোঝা দরকার। অনেক রোগী আবার চিকিৎসা নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকেন। তাঁরা ব্রেস্ট রিকনস্ট্রাকশনের কথা ভাবেন না। আবার অনেক সময়ে দেখা যায়, ব্রেস্ট রিমুভাল প্রসঙ্গে রোগী আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। কিছুতেই তা মেনে নিতে পারছেন না। তাই রোগী কী চান, সেটা আগে বুঝে পদক্ষেপ করা জরুরি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.