অসম-কর্ণাটকে বাঙালি মুসলমানদের আটক, ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ঘরবাড়ি
ODD বাংলা ডেস্ক: দক্ষিণে কর্ণাটক ও পূর্বে অসমে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে বাঙালি মুসলমানরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। আক্রান্তরা জানিয়েছেন, বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও বিতাড়িত করতেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ঘরবাড়ি।
কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর সারজাপুড়ায় ২১ মে ভোররাতে পুলিশের অভিযানে অনেক বাঙালি পরিবারের ঘর ভেঙে দেওয়া হয়। ওই পরিবারগুলো জানিয়েছে, তাঁরা সবাই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।যাঁদের বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের একজন সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার বাসিন্দা। এখানে অনেক দিন ধরে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। অতীতেও আমার ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়ে তাঁদের ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সাইফুল। তাঁর মতে, এবার পুলিশ ২৫ থেকে ৩০টি ঘর ভেঙে দিয়েছে। অথচ তাঁদের সবার বৈধ কাগজপত্র পুলিশের কাছে জমা রয়েছে। সারজাপুড়ায় স্থানীয় প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করেন টুবের শেখ। তিনি বলেন, পুলিশ মধ্যরাতে হানা দিয়ে বাড়িঘর ভেঙে দেয় এবং মহিলাদের ধরে নিয়ে যায়। পুলিশের এই দলে কোনো নারী কনস্টেবল ছিল না।
এ নিয়ে স্থানীয় পুলিশের এসপি (সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ) ভামসি কৃষ্ণা বলেন, বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ, স্থানীয়ভাবে ভারতের পরিচয়পত্র জোগাড় করা খুবই সহজ। এদিকে সারজাপুড়ার ওই এলাকায় আরও অন্তত ২৫টি বাঙালি হিন্দু পরিবার বসবাস করে। তাদের একজন অজিত মজুমদার বেঙ্গালুরুর স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, বেছে বেছে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষকে ধরা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাদের ঘরে এসেছিল। কিন্তু আমরা হিন্দু জানার পর চলে যায়। আমরা এখানে হিন্দু ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ই পাশাপাশি বাস করি। ছোটখাটো কাজকর্ম যেমন ময়লা কুড়ানো, চামড়ার ব্যাগ সেলাই, কারখানায় প্লাস্টিকের দানা তৈরির মতো ছোটখাটো কাজ করি।’ হিন্দুদের মধ্যে তফসিলি জাতির লোকজন রয়েছেন এবং দুই সম্প্রদায়ের মানুষই বলতে গেলে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ থেকে ওই অঞ্চলে কাজ করতে গেছেন বলে জানান অজিত মজুমদার।
এদিকে ২০মে আসামের নওগাঁ জেলায় ৩৯ বছর বয়সী শফিকুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় বটাদ্রবা থানা-পুলিশ। অসম পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল ভাস্করজ্যোতি মহন্তের কার্যালয় থেকে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়, শফিকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল একটি অভিযোগের ভিত্তিতে। অভিযোগে বলা হয়, তিনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। ডাক্তারি পরীক্ষার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরদিন ২১ মে শফিকুল ইসলামকে তাঁর স্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে শফিকুল বলেন, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে দুটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। হাসপাতালে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় অবশ্য বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি বিচার বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছে। বটাদ্রবা থানার প্রধান কর্মকর্তাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে দেশে বাঙালি মুসলমানের ওপরে হামলা নিয়ে এখনো পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবী মহল মুখ খোলেননি। বলতে গেলে রাজ্যের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এ নিয়ে কথা বলেননি।
Post a Comment