মানুষ কি এখন মঙ্গলের বাতাসে শ্বাস নিতে পারবে?
ODD বাংলা ডেস্ক: মনে করুন আপনি একজন নভোচারী, মহাকাশযাত্রার অংশ হিসেবে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করেছেন। বেঁচে থাকার জন্য কী দরকার আপনার?
জল, খাদ্য, আশ্রয় এবং অবশ্যই অক্সিজেন।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং এই গ্রহের উদ্ভিদের কল্যাণে আমরা অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনই একমাত্র গ্যাস নয়। এমনকি এই গ্যাসের পরিমাণ সবচেয়ে বেশিও নয়।
আদতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মাত্র ২১ শতাংশ অক্সিজেন। বাতাসে সবচেয়ে বেশি রয়েছে নাইট্রোজেন, প্রায় ৭৮ শতাংশ।
আপনি ভাবতেই পারেন যে বাতাসে নাইট্রোজেন বেশি থাকলে আমরা কেন অক্সিজেন গ্রহণ করি?
স্বাভাবিক প্রশ্বাসের (শ্বাস গ্রহণ) সময় আমরা বায়ুমণ্ডলের সব গ্যাসই গ্রহণ করি, কিন্তু আমাদের শরীর তা থেকে কেবল অক্সিজেনটা ব্যবহার করে। বাকি গ্যাস আমরা নিঃশ্বাসের সাথে বের করে দেই।
মঙ্গলগ্রহের বাতাস
মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডল অপেক্ষাকৃত পাতলা। এর আয়তন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মাত্র ১ শতাংশ।
অন্যভাবে বলতে গেলে, পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গলে ৯৯ শতাংশ কম বাতাস রয়েছে।
এর এটি কারণ হচ্ছে, মঙ্গলগ্রহের আকার পৃথিবীর আকারের প্রায় অর্ধেক। ফলে, বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাসগুলোকে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রাখার মত শক্তিশালী না এর মাধ্যাকর্ষণ।
পৃথিবী ও মঙ্গলের মধ্যকার আরেকটি বড় পার্থক্য হলো, মঙ্গলের বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের আধিক্য সবচেয়ে বেশি।
গ্রহটির বাতাসের ৯৬ শতাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড!
এছাড়া মঙ্গলের বাতাসে অক্সিজেন নেই বললেই চলে। বাতাসের এক শতাংশের মাত্র এক-দশমাংশ অক্সিজেন সেখানে, যা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট নয়।
আপনি যদি অক্সিজেন সরবরাহকারী স্পেসস্যুট ছাড়াই মঙ্গলের পৃষ্ঠে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে মারা যাবেন। আপনার দম বন্ধ হয়ে যাবে; সেইসাথে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ কম থাকায় আপনার রক্ত ফুটে উঠতে থাকবে।
অক্সিজেন ছাড়া জীবন
এখন পর্যন্ত গবেষকরা মঙ্গলে প্রাণের কোনো প্রমাণ পাননি। কিন্তু অনুসন্ধানকাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে।
এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, মঙ্গলের পরিবেশ চরমভাবাপন্ন। কম ঘনত্বের বায়ুর পাশাপাশি গ্রহের পৃষ্ঠে খুব কম তরল জল রয়েছে।
তাছাড়া, মঙ্গলের তাপমাত্রা অবিশ্বাস্যভাবে ঠান্ডা। রাতে সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (মাইনাস ৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) নেমে আসে।
কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেক জীব রয়েছে যারা চরমভাবাপন্ন পরিবেশে বেঁচে থাকে। অ্যান্টার্কটিকের বরফে, সমুদ্রের তলদেশে এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠের হাজার মাইল নিচেও প্রাণের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব জায়গার বেশিরভাগই অতিরিক্ত ঠান্ডা; সেইসাথে অক্সিজেনের পরিমাণও কম।
তাহলে কি তারা মঙ্গলে বেঁচে থাকতে পারবে?
অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা, এখন মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব না থাকলেও কোটি কোটি বছর আগে ছিল।
নাসার মার্স পারসিভারেন্স রোভার মিশনের অন্যতম লক্ষ্য মঙ্গল গ্রহের প্রাচীন জীবনের লক্ষণ অনুসন্ধান করা।
কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে অক্সিজেন
পারসিভারেন্স রোভারে থাকা সাতটি যন্ত্রের মধ্যে MOXIE নামক একটি যন্ত্র রয়েছে, যার কাজ মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে অক্সিজেনে রূপান্তরিত করা।
যদি MOXIE বিজ্ঞানীদের আশানুরূপ কাজ করে, তাহলে ভবিষ্যতে মহাকাশচারীরা শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব অক্সিজেনই তৈরি করবে না; বরং তারা সেটি রকেটের জ্বালানী হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবে।
মানুষ মঙ্গলগ্রহে যত বেশি অক্সিজেন তৈরি করতে পারবে, তত কম তাদের পৃথিবী থেকে অক্সিজেন নিয়ে যেতে হবে। এতে করে, মঙ্গলে পর্যটকের বিচরণও সহজ হবে।
কিন্তু, যন্ত্রের মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি করতে সক্ষম হলেও সেখানে চলাফেরা করতে মহাকাশচারীদের স্পেসসুটের প্রয়োজন হবে।
এই মুহূর্তে নাসা মঙ্গল গ্রহে মানুষকে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। পরবর্তী দশক, অর্থাৎ ২০৩০ এর শেষের দিকে এটি সম্ভব হতে পারে বলে ধারণা করছে তারা।
Post a Comment