কেমন হবে ২০২৫ সালে চালু হতে যাওয়া স্পেস হোটেল?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ঘুম থেকে উঠেই হোটেল রুমের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে চোখে পড়বে সৌরজগত আর গ্রহ নক্ষত্রের ছুটে বেড়ানো। কেমন লাগছে ভাবতে? কেমন হয় যদি সত্যিই মহাকাশে ছুটি কাটাতে যাওয়া যায়? মহাকাশ সংস্থা অরবিটাল অ্যাসেম্বলি অবশ্য এরকম পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি দশকেই মহাকাশে পর্যটন আবাসন ব্যবস্থা চালু হবে।


যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি স্পেস হোটেল সম্পর্কিত তাদের পরিকল্পনার নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে। একটির পরিবর্তে আবাসন সুবিধা সম্পন্ন দুটো মহাকাশ স্টেশন চালু করার পরিকল্পনা জানিয়েছে তারা। এর মধ্যে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৭ সালে ৪০০ মানুষের ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট ভয়েজার স্টেশন চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে ২৮ জনের ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট পায়োনিয়ার স্টেশন নামে আরেকটি আবাসিক মহাকাশ স্টেশন চালুর পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে অরবিটাল অ্যাসেম্বলি। সবকিছু ঠিক থাকলে মাত্র তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৫ সাল নাগাদ স্টেশনটি চালু হতে পারে।


২০১৯ সাল থেকেই এ ধরনের স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে অরবিটাল। সেসময় ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিষ্ঠান গেটওয়ের সঙ্গে মিলিতভাবে ভন ব্রাউন স্টেশন নামে আবাসন সুবিধাসম্পন্ন স্টেশনের নকশা প্রণীত হয়। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা স্টেশনটি বেশ কয়েকটি মডিউলের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ঘূর্ণায়মান চাকার মতো দেখাবে। ভেতরে লিফট শ্যাফটের মাধ্যমে মডিউলগুলোতে যাতায়াতের সুবিধা থাকবে। তবে গেটওয়ে থেকে আলাদা হয়ে অরবিটাল এখন একই নকশায় ভয়েজার স্টেশন চালু করবে।


অরবিটাল অ্যাসেম্বলি জানায়, তাদের লক্ষ্য হলো পর্যটকদের জন্য বাড়ি-অফিসের সুবিধাসম্পন্ন একটি 'বিজনেস পার্ক' গড়ে তোলা।


কিন্তু অবিশ্বাস্য খরচের কারণে এখনও হয়তো অনেকের কাছেই মহাকাশ ভ্রমণের বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে।


তবে অরবিটাল অ্যাসেম্বলির চিফ অপারেটিং অফিসার টিম অ্যালাটোর মনে করেন, মহাকাশ পর্যটন শুরু হলে এই প্রতিবন্ধকতাও দূর হবে।


সিএনএন ট্রাভেলে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "লক্ষ্যটি হলো বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য মহাকাশে আসা, বাস করা ও কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা।"


ইন্টেরিয়র ও ভেতরের পরিবেশ কেমন হবে?


পায়োনিয়ার এবং ভয়েজার স্টেশন দুজায়গাতেই অফিস ও গবেষণার জন্য ভাড়া দেওয়া হবে।


স্টেশনটিতে পদার্থিবিদ্যার সাধারণ নীতিগুলো ব্যবহৃত হবে জানিয়ে অ্যালাটোর ২০১৯ সালে সাক্ষাৎকারে বলেন, স্টেশনটি যেহেতু ঘুরতে থাকবে, সেক্ষেত্রে বাইরের দিকে বল বেশি অনুভূত হবে।


বিভিন্ন জায়গায় মাধ্যাকর্ষণ স্তর ভিন্ন হবে। স্টেশনের কেন্দ্রে কৃত্রিম মাধ্যাকর্ষণের প্রয়োজন পড়বে না বলেও জানান তিনি। সেক্ষেত্রে 'আরাম' করে বসা বা পান করার জন্য কৃত্রিম ব্যবস্থা থাকবে।


কিন্তু এর ভেতরের ইন্টেরিয়র ডিজাইন কেমন হবে?


অভ্যন্তরীণ নকশা পৃথিবীর যেকোনো বিলাসবহুল হোটেলের মতোই হবে বলে মনে করেন অ্যালাটোর।


তিনি আরও বলেন, হোটেলের নকশা যেন স্ট্যানলি কুব্রিকের '২০০১: আ স্পেস ওডিসি'-র অনুকরণেই হতে চলেছে।


তবে কুব্রিক প্রযুক্তিগত বিষয়গুলোর সঙ্গে মানবীয় পার্থক্য তৈরির জন্যই স্পেসশিপের অতিরিক্ত ঝা চকচকে উপস্থাপন দেখিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


ভয়েজারের পূর্ব নাম ভন ব্রাউন স্টেশনটি বাছাই করা হয়েছি নাৎসি রকেট বিজ্ঞানী ওয়ার্নার ভন ব্রাউনের নামে। তিনি রকেট বিজ্ঞানের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। শুরুতে জার্মানিতে ও পরে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করেন ব্রাউন। কিন্তু নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে জড়িত থাকায় নামকরণ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।


অরবিটাল অ্যাজেন্সির সাবেক সিইও জন ব্লিঙ্কো বলেছিলেন, "স্টেশনটি আসলে তার জন্য নয়। তার ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে আমরা এগিয়েছি। বিজ্ঞান ও মহাকাশ বিষয়ে তার অবদানকে আমরা স্বীকার করি।


২০২১ সালে এক সাক্ষাৎকারে সিএনএনকে তিনি বলেন, "কিন্তু ভয়েজার স্টেশন আসলে তার চেয়েও অনেক বড় কিছু। এটা ভবিষ্যতের কাঠামো। আর তাই আমরা এমন একটা নাম চাই যার সঙ্গে বিতর্কের সম্পর্ক নেই।"


শুধু ধনীরাই নয়, সবাই সুযোগ পাবে


গত বছর ভার্জিন গ্যালাকটিক, ব্লু অরিজিন ও স্পেসএক্সের ভ্রমণ আয়োজনের পর মহাকাশ ভ্রমণের ধারণাটি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।


আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এর আগেও পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ২০০১ সালে প্রথম মহাকাশ পর্যটক ডেনিস টিটো মহাকাশ যাত্রা করেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন মূলত গবেষণার একটি জায়গা। অরবিটাল মূলত পর্যটকদের কথা মাথায় রেখেই হোটেল নির্মাণ করছে।


"আপনার যেন ভ্রমণে এসে এমন মনে না হয় যে আপনি কোনো ফ্যাক্টরি বা গবেষণাগারে এসেছেন। এটা হওয়া উচিত সাই-ফাই স্বপ্নের মতো," বলেন তিনি।


"যেখানে সেখানে তারের জঞ্জাল থাকবে না। আপনি এমন একটি আরামদায়ক স্থান পাবেন যেন মনে হবে বাড়িতেই আছেন।"


এদিকে গত বছর বিলিয়নিয়াররা সদলবলে মহাকাশ ভ্রমণ শুরু করলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। অনেকেই বলেন, মহাকাশে এত টাকা না উড়িয়ে পৃথিবীতে এই টাকা ব্যয় করলে আরও ভালো হতো।


তবে অ্যালাটোর মনে করেন, শুধু পৃথিবী নয়, সমগ্র সৌরজগত নিয়েই আমাদের জগৎ গড়ে উঠেছে। মহাকাশে প্রচুর সম্পদ রয়েছে। আমরা যদি এগুলো ব্যবহার ও পুঁজি করতে শুরু করি তাহলে পৃথিবীর জীবনযাত্রার মানও পরিবর্তিত ও উন্নত হবে।


বর্তমানে মহাকাশে যাওয়ার টিকিটের দাম অকল্পনীয় হলেও অ্যালাটোরের মতে, মহাকাশ পর্যটন শুধু বিলিয়নিয়ারদের জন্যই হবে না।


"শুধু ধনীরা নয়, সব মানুষই যেন মহাকাশে আসতে পারেন আমরা তার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি," বলেন তিনি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.