ব্যবহৃত টি ব্যাগ বা চা পাতা দিয়ে যে ২৮ টি কাজ করা যায়
ODD বাংলা ডেস্ক: চা অপছন্দ করেন এমন মানুষ খুব কমই আছে। আর ব্যস্ত দিনের মাঝে এক কাপ চা যেন ক্লান্তি মেটায় সারা শরীরের। সময় বাঁচাতে আজকাল আমরা অনেকেই টি-ব্যাগ দিয়ে চা বানিয়ে খাই। আর চা শেষ করে ফেলে দেই ব্যবহৃত চা পাতা/টি-ব্যাগটি। কিন্তু আমরা জানিনা এই ব্যবহৃত টি-ব্যাগ/চা পাতা অনেক কাজে আসতে পারে। যেমন চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল কমাতে‚ চোখের ফোলা কমাতে‚ ছোট-খাটো পোড়া সারাতে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে আপনি ব্যাবহার করতে পারেন ব্যবহৃত টি-ব্যাগ/চা পাতা। খোলা চা পাতা হলে পাতলা কাপড়ে/ টিস্যুতে মুড়ে চা পাতা বেঁধে পুঁটলি করেও ব্যবহার করতে পারেন।বিউটি ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি আরও বহু কাজে আসতে পারে এটি। তাই জেনে রাখা ভাল ব্যবহৃত টি-ব্যাগের নানা ব্যবহার।
১. ক্লান্ত চোখকে আরাম দিতে : কাজের চাপে হোক বা কম ঘুমের কারণে হোক, চোখের নিচে ফোলা ভাব বা চোখ লাল হয়ে যাওয়া আমাদের অনেকেরই সমস্যা। সেই সাথে কালো দাগের সমস্যা তো আছেই। এই সমস্ত সমস্যা থেকে আরাম পেতে টি ব্যাগ নিন, ঠাণ্ডা জলে ভিজিয়ে নিয়ে চোখের অপর রেখে শুয়ে থাকুন ২০ মিনিট। দেখবেন চোখের ফোলা বা লাল ভাব কমে গিয়ে কান্তি দূর হয়েছে অনেকটাই। নিয়মিত ব্যবহার করলে কালো দাগও চলে যাবে।
২. ত্বকের পোড়া দাগ দূর করা : ত্বকের পোড়া দাগ দূর করার জন্য অনেকগুলো ব্যবহৃত টি-ব্যাগ বাথটাব কিংবা বালতির স্নানের জলে ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। সেই জল নিয়মিত স্নানের পর গায়ে ঢাললে পোড়া দাগ দূর হয়ে যাবে।
৩. চুলের যত্নে : চুলের কন্ডিশনার হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে টি-ব্যাগ। সামান্য গরম জলে টি-ব্যাগ ভিজিয়ে, শ্যাম্পু করার পর মাথায় দিন। এতে চুল থাকবে ঝলমলে ও উজ্জ্বল। অথবা চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে শ্যাম্পুর মতো করে গ্রিন টি লাগাতে পারেন চুলে। অথবা ব্ল্যাক টি। গ্রিন টি চুলের বৃদ্ধি ঘটাবে আর ব্ল্যাক টি চুল পড়ে যাওয়া ঠেকাবে। চা মাখানোর ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালোমতো ধুয়ে ফেলুন।
৪.সার হিসেবে: টি-ব্যাগের চা পাতা ফুলের টবে কিংবা গাছের গোড়ায় দিন। জৈবিক সার হিসেবে দারুণ কাজ করবে এটি। গাছপালায় অনেক পোকামাকড়ের সমস্যা? ব্যবহৃত চা পাতা ধুয়ে গাছের গোঁড়ায় দিয়ে রাখুন। পোকামাকড় দূরে থাকবে, আবার গাছের সার হিসাবেও কাজ করবে।
৫.দুর্গন্ধ রোধে:হাতে পিঁয়াজ বা রসুনের গন্ধ হলে টি-ব্যাগ ঘষুন। জুতার বাজে গন্ধ দূর করার জন্য টি-ব্যাগ জুতার ভিতরে রাখুন। এতে দুর্গন্ধ নিমিষেই চলে যাবে।
৬.তৈলাক্তভাব দূর করতে: গ্লাস, প্লেট বা হাঁড়ি-পাতিল থেকে তেল চিটচিটে ভাব দূর করতে, গরম জলে টি-ব্যাগ দিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে দেখবেন তৈলাক্তভাব কেটে গেছে।
৭.মাংস নরম করতেঃ চা পাতায় ট্যানিন থাকে যা মাংস নরম করে। কালো চা পাতায় কিছুক্ষণ যদি মাংস ম্যারিনেট করে রাখা হয় তা সহজেই সেদ্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও সুন্দর ফ্লেভার ও যোগ করে। চারটি টি ব্যাগ থেকে চা পাতা বের করে নিয়ে তা জল দিয়ে ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। এরপর মাংস ম্যারিনেট করুন এবং দু ঘন্টা রেখে রান্না করুন।
৮.ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করেঃ লেফট ওভার খাবার বা শাকসব্জি বহু দিন থাকলে ফ্রিজ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এই গন্ধ দূর করতে কয়েকটা ব্যবহৃত টি -ব্যাগ ফিজে রেখে দিন। দেখবেন নিমেষেই গন্ধ চলে যাবে। চা-পাতা হলে টিস্যুতে মুড়ে রাখুন। ফ্রিজ থাকবে সতেজ ও পরিষ্কার, কোন রকম ফ্রেশনার ছাড়াই। এছাড়াও কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল ছিটিয়ে বাথরুমে, আলমারিতে রাখতে পারেন চা-পাতা বা টি ব্যাগ। রাখতে পারেন স্কুল কলেজে যাওয়ার কাপড়ের ব্যাগেও।
৯. গাছে সার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেনঃ চায়ের মধ্যে বহু রকমের নিউট্রিয়েন্টস এবং ট্যানিক অ্যাসিড থাকে যা মাটির কোয়ালিটি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও অক্সিডাইজেশনে সাহায্য করে। এর ফলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
১০. ওটস আর শষ্য দানায় ফ্লেভার যুক্ত করেঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা দুধ দিয়ে ফুটিয়ে ওটস বা শষ্য দানা খেতে ভালোবাসেন। দুধ দিয়ে ফোটানোর সময় একটা ব্যবহৃত টি ব্যাগ দুধে ফেলে দিন। এতে সুন্দর গন্ধ বেরোবে এবং একই সঙ্গে এই নতুন যোগ শরীরের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করবে।
১১. থালা বাসনের তেলতেলে ভাব দূর করেঃ নোংরা বাসন থেকে তেলতেলে ভাব দূর করতে টি ব্যাগের জুড়ি নেই। এর জন্য নোংরা বাসনের সঙ্গে কয়েকটা টি ব্যাগ জলে ভিজিয়ে রাখুন। এছাড়াও বাসন থেকে সব রকমের গন্ধও চলে যাবে।
১২. বাতাসকে শুদ্ধ করে ঃ চায়ের মধ্যে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে। তাই বাতাস শুদ্ধ রাখতে টি ব্যাগ ব্যবহার করুন। কয়েকটা টি ব্যাগ ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন। এর মধ্যে আপনার প্রিয় এসেনসিয়াল অয়েল কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে বাথরুমে‚ রান্নাঘরে বা যেখানে আপনার ইচ্ছা রাখতে পারেন।
১৩. মশা বা পোকা দূর করেঃ ব্যবহৃত টি ব্যাগ‚ বিশেষত তা যদি মিন্ট টি হয় তাহলে এটা প্রাকৃতিক রেপেল্যান্টের কাজ করে। মশা‚ আরশোলা‚ পিঁপড়ে‚ মাকড়সা বাড়ি থেকে তাড়াতে ব্যবহৃত টি ব্যাগের সাহায্য নিন।
১৪. লেদারের জুতো পরিষ্কার করতে ঃ দামি লেদারের জুতো পরিষ্কার আর দুর্গন্ধ্য মুক্ত রাখতে টি ব্যাগের সাহায্য নিতে পারেন। একটা ভিজে টি ব্যাগ জুতোর ওপর ভালো করে ঘষতে হবে। এরপর পরিষ্কার শুকনো কাপড় দিয়ে জুতো মুছে নিন। তারপর শু পলিশ লাগান।
১৫.আয়না‚ কাচ ও কাঠের জিনিস চকচকে করে ঃআয়না থেকে গ্রিজ বা কাঠের ফার্নিচার চকচকে করা সবই নিমেষের মধ্যে হয়ে যায় টি ব্যাগ দিয়ে। একটা ব্যবহৃত ভিজে টি ব্যাগ আয়না বা কাঠের ফার্চিচারের ওপর ঘষুন। দেখবেন নিমেষে চকচকে হয়ে উঠবে।
১৬.বাসনকে রাস্ট ফ্রি করেঃ অনেক সময় কাঁচি‚ ছুরি বা বাসনে জং ধরে যায়। এই সমস্যা দূর করতে বেশ কয়েকটা ব্যবহৃত টি ব্যাগ একটা বড় পাত্রে জল দিয়ে ফোটান। ফুটন্ত জলে এবার মরচে ধরা সমগ্রী দিয়ে বেশ খানিক্ষণ ফুটিয়ে নিন। দেখবেন একদম নতুনের মত চক চক করছে।
১৭.দাঁতের যত্নেঃ দাঁতের অসহ্য যন্ত্রণা কিংবা মাড়ির রক্তপাত কমাতে ব্যবহার করতে পারেন টি-ব্যাগ। ব্যথা বেশি হলে অবশ্যই ডেনটিস্টের কাছে যাবেন। তবে সাময়িক যন্ত্রণা উপশমে সাহায্য করবে ঠাণ্ডা টি-ব্যাগ।
১৮. পোকা-মাকড় ও পোড়ার জ্বালা ঃপোকা কামড় দিয়েছে বা পুড়ে গিয়েছে কোথাও? একটা ব্যবহৃত টি ব্যাগ ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন। পোকা কামড় ও পোড়ার জ্বালা সব যন্ত্রণা নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।। শেভ করতে গিয়ে মুখ কেটে গেছে? একটা ব্যবহৃত টি ব্যাগ ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে কাটা স্থানে লাগিয়ে রাখুন। আরাম তো পাবেনই, রক্তপাতও বন্ধ হবে।
১৯.পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ অনেকের পায়ে দুর্গন্ধ হয়ে থাকে, যা খুবই অস্বস্তিকর। এই সমস্যা দূর করতে ব্যবহার করা টি ব্যাগ জলে ফুটিয়ে নিন, সেটি ঠান্ডা করে তাতে পা ভিজিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। দেখবেন পায়ের দুর্গন্ধের সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে।
২০.স্বাদ বৃদ্ধি করতে:রান্না খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করতে চা পাতা একটা চমৎকার উপাদান। ওভেনে মুরগী বা গরু রোস্ট করতে চাইলে মেরিনেশনে দিন চমৎকার সুগন্ধ যুক্ত কোনও চায়ের লিকার। আপনার পছন্দ মতন যে কোনও চায়ের ব্যবহার চলতে পারে। এছাড়াও বিডি হেলথ টি / জেসমিন টি আস্তই দিতে পারেন মেরিনেশনে। মাংসের স্বাদ বাড়াতে চা খুব চমৎকার একটা উপাদান।
২১.কার্পেট পরিষ্কার করতে: বেশির ভাগ কার্পেটেই ময়লা আটকে থাকে তাই তৈরি হয় বাজে গন্ধ। আধা ভেজা ব্যবহৃত চা পাতা কার্পেটে ছড়িয়ে দিন। সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে ঝাড়ু দিয়ে ফেলুন বা ভ্যাকুয়াম ক্লিন করে নিন। বাজে গন্ধ ও ময়লা সব গায়েব।
২২. মাউথ ওয়াশ : মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এবং দীর্ঘসময় মুখ ফ্রেশ রাখতে কে না চায়। দাঁত মাজার পর ও দাঁত কোণায় জমে থাকা ময়লা সহজে বের হতে চায় না। তাই অনেকে মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করেন। বাজার থেকে না কিনে ঘরেই তৈরি করে নিতে পারেন ফেলনা চা-পাতার মাউথওয়াশ। ব্যবহৃত চা-পাতার সাথে একটু পুদিনে পাতা ও সামান্য লবণ দিয়ে জ্বাল করে ঘন লিকার তৈরির করুন। এই মিশ্রণ ব্যবহার করুন কুলি করতে, অনেক ভালো কাজ করবে মাউথ ওয়াশ হিসেবে।
মুখে ঘা হয়েছে? চায়ের ঠাণ্ডা লিকার মাউথ ওয়াশের মতন ব্যবহার করুন কুলি করতে। নিরাময় হবে এই সমস্যা। বা ব্যবহৃত চা-পাতা জ্বাল দিয়ে ঘন লিকার তৈরির করুন। এই মিশ্রণ ব্যবহার করুন কুলি করতে, মাউথ ওয়াশের কাজ করবে। দাঁত তোলার পর বেশী রক্তপাত ও ব্যথা হচ্ছে? ঠাণ্ডা জলে ভেজানো টি ব্যাগ আক্রান্ত স্থানে দিয়ে রাখুন। রক্তপাত কমবে ও ব্যথাও কম হবে।
২৩. কোমল পানীয়ের ক্যালোরি কমাতে: ভীষণ শরীর সচেতন আপনি, কিন্তু অন্যদিকে কোমল পানীয় খেতেও ভালোবাসেন? এই ধরনের পানীয়ের ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করুন ছোট্টও একটা উপায়। পছন্দসই যে কোনও চা পাতা জ্বাল দিয়ে হাল্কা লিকার করে নিন। তারপর ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে অল্প লেবুর রস মিশিয়ে রাখুন। আপনার পানীয়ের গ্লাসে অর্ধেক নিন কোমল পানীয়, আর অর্ধেক নিন এই ঠাণ্ডা চা। স্বাদ তো কমবেই না, বরং বাড়বে। সাথে ক্যালোরিও কমে যাবে অনেকটাই।
২৪.ঘামের গন্ধ দূর করতেঃ শরীর ও পা থেকে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে গরম জলের মাঝে ফেলনা চা-পাতা দিয়ে স্নানে ও পা ভিজিয়ে রাখুন ঘামের গন্ধ দূর হবে।
২৫. ঘরদোর পরিষ্কার করতে: পরিষ্কার করতে চান ঘোলাটে বা ময়লা আয়না? একটা ব্যবহার হয়ে যাওয়া টি ব্যাগ ভালো করে ঘষুন আয়নায়। তারপর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিন। কাঠের আসবাব থেকে ফাঙ্গাসের আক্রমণ কমাতে চায়ের লিকারের সাথে ভিনেগার মিশিয়ে আক্রান্ত স্থান মুছুন। মেঝে, চুলা বা সিঙ্ক থেকে চটচটে ভাব কমাতেও ব্যবহার করুন ভেজা টি ব্যাগ বা চায়ের লিকার। দাগ তোলা হয়ে গেলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিন।
২৬.ভালো রাখতে কাপড়: আলমারি বা ওয়ারড্রবে সব সময় কয়েকটি শুকনো টি ব্যাগ রেখে দিন। এতে কাপড়ে স্যাঁতসেঁতে ভাব যেমন হবে না তেমনই হবে না বাজে গন্ধও।
২৭. ভাত রান্নায়ঃ বিডি হেলথ টি /জেসমিন টি বা এমন যে কোন ফ্লেভারের টি ব্যাগ ভাত রান্নার শেষ দিকে পাতিলে দিয়ে দিতে পারেন। ভাতের দানায় দানায় মিষ্টি একটা গন্ধ হবে যা খাবারে আনবে তৃপ্তি।
২৮. বাথরুম সতেজ রাখতেঃ বাথরুম প্রতিদিন ব্যবহার করতেই হয় আর ব্যবহারের পরে বাথরুমে সৃষ্টি হয় বাজে গন্ধ। আর কোন অতিথি যদি এসে দেখেন বাথরুমের এ রকম অবস্থা তাদের সামনে ভীষণ লজ্জায় পরতে হয়। চা পাতা ও কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল ছিটিয়ে বাথরুমে রাখুন এবার দেখুন বাথরুম গন্ধ নিমিষেই দূর হয়ে গেছে।
Post a Comment