জীবন পথ খুঁজে পাবে

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ঢাকার পাশের সিংগাইর উপজেলা। সকাল পেরিয়ে গেছে বহু আগেই। তখনও কুয়াশার চাদর ঠেলে বেরিয়ে আসার প্রাণপণ চেষ্টারত সূর্য। দুপুরের খাবার শেষে একটু বিশ্রাম নিয়েই আমি বের হয়েছি দাদাবাড়ির পাশে থাকা ধানক্ষেত ঘুরতে।

শীতের রুক্ষতাকে ফাঁকি দিয়ে তখনও এটিকে সবুজ-শ্যামল সুন্দর একটি গ্রাম বলা যায়। গ্রামের বিস্তীর্ণ এই ধানক্ষেতের কিনারা ঘেঁষে রয়েছে বড় বড় সব পুকুর আর তাদের ঘিরে থাকে নানা রকমের পাখিদের মেলা। তাই এখানে এলেই প্রতিবার আমার এই জায়গার যাওয়া হয়। ছবি আর নির্মল প্রকৃতির স্বাধ; দুটোই এখানে পাওয়া যায়।


ক্ষেতের আঁইল ধরে প্রকৃতির স্বাধ নিতে নিতে সেদিনও আমি হাঁটছিলাম। যেতে যেতে দেখা হয়ে গেল তিলা ঘুঘু, কালো ফিঙে ও কসাই বা ল্যাঞ্জা লাটোরাদের সঙ্গে। ডালে বসে থাকা এক জোড়া ঘুঘুকে দেখেই ক্যামেরার শাটার চেপে ধরলাম। ভালো একটি শর্ট হবে বলে অনেকটা নিশ্চিত মনে ভিউ ফাইন্ডার থেকে মাত্র ক্যামেরাটি নামিয়েছি, এমতাবস্থায় হঠাৎ দেখলাম বেশ বড় কিছু অনেকটা হেলে-দুলে বেশ ধীর গতিতে আমার বা’পাশ হয়ে উড়ে যাচ্ছে। ওড়া দেখে মনে হচ্ছে এইতো কাছেই কোথাও ছিল এতক্ষণ।


কোনো পরিচিত বক বা ফ্লেমিংগো হবে ভেবে ক্যামেরা ফোকাস করেই বেশ কিছু ছবি তুলে ফেললাম। ছবির ফোকাস ঠিক আছে কিনা তা দেখেই এটি নিয়ে আর বিশেষ মাথা না ঘামিয়ে আমি আবারও সেই ঘুঘু জোড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত তখন সাড়ে ১০টা। আমি তখন আমার ঢাকার বাসায়। ল্যাপটপে বসে সেদিনের তোলা ছবিগুলো দেখছিলাম আর বার্ড গাইড বইয়ে পৃষ্ঠা নাড়ছিলাম এই আসায় যে সেটি হয়তো কোন পরিচিত বক বা ফ্লেমিংগো হবে।


হঠাৎ একটি পৃষ্ঠায় আমার চোখ আটকে গেল আমি যার ছবি তুলেছি তার সঙ্গে তো বইয়ের ছাপানো ছবি পুরোপুরি মিলে যায়। যদি তাই হয় তবে এটা তো Common Crane বা পাতি সারস (বৈজ্ঞানিক নাম: Grus Grus)। গাইড বইয়ে বিরল বোঝানোর জন্য লাল দাগ দেওয়া দেখে সেই সময় আমি পুরোপুরি উৎসাহী। আরো তথ্য জানতে ইন্টারনেটে সার্চ করা শুরু করলাম। বেশ কিছু লেখা পড়ে জানতে পরলাম, ২০১৫ সাল পর্যন্ত Common Crane বা পাতি সারস গত ১০০ বছরে মধ্যে একবারও দেখা যায়নি। এর চার বছর পর সর্বশেষ ২০১৯ এবং ২০২০ এ রাজশাহী বর্ডার সংলগ্ন চরাঞ্চলে দেখা গেছে।


পরবর্তীতে শ্রদ্ধেয় এনামুল হক স্যারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয় আমার। স্যার জানান, শহুরে অঞ্চলে আমার তোলা ছবিটিই প্রথম ছবি যা একটি রেকর্ডও বটে। ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্যকে উপস্থাপন করতে ভয় লাগলেও স্যারের মুখের কথা যেন আমাকে আকাশ সমান সাহস দিয়ে বসলো। উৎসাহী মনে আমি দুদিন বাদে আবার সেখানে যাই। ধান ক্ষেতের কিনারা ঘেঁষে ঐ বড় বড় সব পুকুরে মাছ চাষ করা হয়।


পুকুরের দেখা-শোনায় নিয়োজিত চাচাকে ছবি দেখাতেই জানতে পারি এই পাখিটিকে উনি এই বছরে দুইবার দেখেছিলেন পুকুরের পাড়ে বসে থাকতে। সেদিন বাড়ি ফেরার সময় ভাবছিলাম আসলেই- Life will find a way.

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.