ভারতীয় হিজড়াদের অপরাধী প্রমাণের পেছনে ছিল ব্রিটিশ কুটকৌশল



 ODD বাংলা ডেস্ক: তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের আর কতোদিন নিজের অধিকার নিয়ে লড়াই করতে হবে? সমাজ কবে তাদের প্রকৃত সম্মান দেবে? এসব প্রশ্ন উঠেছে ভারত সরকারের পাস করা একটি বিলে। ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর লোকসভায় ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়া হয়। ওইদিনই লোকসভায় পাস হয় Transgender Persons (Protection of Rights) Bill (TPPR) বিল । 

এই গুরুত্বপূর্ণ বিলের অনেকটাই ফ্লাসলাইট কেড়ে নেয়  কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার প্রস্তাব। কিন্তু এই বিল যাদের জন্য অর্থাৎ রূপান্তরকামীরা, তারা পরের দিন থেকেই আন্দোলনের নামে ।


কেমন ছিল এই বিল যাতে আন্দোলনে নামতে হলো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের? আসুন দেখে নেওয়া যাক।


TRPR এমন একটি বিল যা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের শিক্ষা বা চাকরি ক্ষেত্রে চিহ্নিতকরন করার উপায়, যাতে করে কোনো অপরাধে তাদের নাম উঠলে সহজে ধরা যায়।


স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এই বিলের এত বিরোধীতা কেন? কারণ হিসেবে বলা যায়, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের যে সংজ্ঞা এই বিলে দেওয়া হয়েছে তা একেবারে প্রাচীনপন্থী ধারণা থেকে তৈরি। এক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গ সমাজের ধারণা, একজন মানুষ নিজেকে কোন লিঙ্গের হিসেবে দেখতে চায় সেটা একান্তই তার নিজের স্বাধীনতা হওয়া উচিত। সরকারের কখনই উচিত নয় নির্দিষ্ট একটি বন্ধনীতে ফেলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কারা সেটা ব্যাখ্যা করা। 


উপরন্তু আরো বিস্ময়কর হলো এই যে একটি মানুষ সে রূপান্তরকামী কিনা সেই প্রমাণ নিতে হবে জেলার ম্যাজিস্ট্রেটের থেকে। পরীক্ষা করে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্বীকৃতি দেয়ার মতো অস্বস্তিকর কাজও শাসকেরই হাতে এবং তিনি চাইলে এ সার্টিফিকেট নাও দিতে পারেন। 


বিশেষজ্ঞরা আবার এই বিল বানানোর পিছনে ১৮৭১ এ ব্রিটিশদের তৈরি Criminal Tribes Act (CTA) এর ছায়া দেখছেন। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা এখন ব্রিটিশদের ধ্যান-ধারণাকে যেন বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। 


ব্রিটিশরা তৎকালীন হিজড়াদের অপরাধী বলে মনে করত। ইতিহাস বলছে, তৃতীয় লিঙ্গের বহু মানুষ সরকারবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলেন। যেহেতু তাদের বেশিরভাগ সময়টাই যাযাবর হিসেবে কাটতো এবং প্রচলিত আইন-কানুনের খানিকটা উর্ধে ছিলে তারা তাই ইংরেজরা এইসব মানুষদের ওপর নিজেদের ছড়ি ঘোরাতে পারতেন না। তাই ইংরেজ শাসকেরা তাদের বাগে আনতে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সর্বনাশা আইন কানুন প্রয়োগ করে অপরাধী প্রমাণের চেষ্টা করতেন। 


সমাজের বেশিরভাগ মানুষই এখনো হিজড়াদের ছেলে ধরা বা চোর ডাকাত মনে করে। এমনও দেখা যায়, অনেক সময় বিনা কারণে এ রকম মানুষদের ওপর জনসাধারণের  তীব্র আক্রোশ ঝরে পড়ে। অনেক সময় তাদের যৌন হেনস্থার শিকারও হতে হয়। এটা অদ্ভুত যে এদের ওপর এ রকম নির্যাতন হলে তার শাস্তি মাত্র ৬ মাস থেকে ২ বছর। অথচ যেকোনো নারীর ওপর শারীরিক অত্যাচারের শাস্তি ৭ বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত জেল হতে পারে। 


যারা আদতেই নারী, তাদের ওপর অত্যাচার হলে এতটা শাস্তি, অথচ পুরুষ হয়েও যারা নিজেদের নারী ভাবতে চান বা নারী হয়ে পুরুষের মতো হতে চান তাদের ওপর  হেনস্তায় এত লঘু দণ্ড কেন? এই বিচিত্র নিয়মই সমাজে বিভেদ তৈরি করেছে। 


ব্রিটিশরা দেশ ছাড়ার এতগুলো বছর পরেও ব্রিটিশমার্কা ছাপ থেকে ভারতবাসীরা কেন এখনও বের হতে পারলো না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.