সহজ উপায়ে ক্রোধ প্রশমন

 


ODD বাংলা ডেস্ক: আপনার জীবনকে সহজেই বিষাক্ত করে তুলতে পারে ক্রোধ ও ক্ষোভ । রাগের মাথায় যা আপনার জন্যেই ক্ষতিকর আপনি এমন সব কাজ করে ফেলতে পারেন । যা আপনার বিড়ম্বনা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে ক্ষোভ বশত এমন সব আচরণ করে ফেলতে পারেন । রাগ ও ক্ষোভ দীর্ঘদিন অবদমিত রাখলে মনোদৈহিক সমস্যার সৃষ্টির কারণ হতে পারে। সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের জন্যে আপনার রাগ ও ক্ষোভের, সুষ্ঠু ও নিয়ন্ত্রিত বহিঃপ্রকাশেরও প্রয়োজন।


আপনার ক্ষোভের নিয়ন্ত্রিত বহিঃপ্রকাশ কার আপনার জন্য তেমন কঠিন কিছুই নয়। ধরে নিতে পারেন আপনি এখন মতিঝিলে যাবেন। মালিবাগের মোড়ে এসে হঠাৎ করে আপনার বাহনটি দাঁড়িয়ে আছে। যানজট ও প্রচণ্ড । আপনি অপেক্ষা করছেন কখন আপনার বাহনটি চলতে শুরু করবে, পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট করতে করতে এক সময় ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আপনার বাহন যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল ঠিক সেখানেই দাড়িয়ে আছে। কোনোদিকেই তার কোনো নড়াচড়া নেই। আপনার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচেছ, প্রচণ্ড গরম আর দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলোর চালু ইঞ্জিনের ধোঁয়ায় তৈরি হয়েছে এক যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি, আপনি রাগে-ক্রোধে ফেটে পড়তে চাইছেন।


এমন পরিস্থিতিতে আপনি অবশ্য অনায়াসেই আপনার সঞ্চয়িত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারেন। আপনি আপনার বাহন থেকে নেমে পড়ুন, রাস্তার ওপর জোরে একটা লাথি মারুন অথবা বর্ষণ করুন দুচারটে গালিগালাজ, সাহস করে গাড়িতে বসেই সিটের ওপর দুতিন ঘা লাগিয়ে দিন। শারীরিকভাবে প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ক্রোধের সাময়িক উপশম ঘটাতে সব সময়ই সাহায্য করে। আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের প্রফেসর ড. রজার ডালড্রপ তাঁর ওফ্রিডম ফ্রম অ্যাঙ্গারহ গ্রন্থে ক্রোধের সাময়িক উপশমের এই প্রক্রিয়ার উপর বেশ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।


রাগ প্রশমিত করার জন্যে এক চমৎকার পদ্ধতি হলো দম গণনা করা। যখন আপনি রেগে যাচ্ছেন, তখন দম গণনা করুন। এই প্রক্রিয়ায় আপনি লম্বা করে দম নিন। গণনা করুন ১। আর দম ছাড়তে ছাড়তে ভাবুন, বাতাসের সাথে সাথে সঞ্চীত শরীরের সব রাগ-ক্রোধ-ক্ষোভ ভেতর থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। এভাবে গণনা করুন দশ পর্যন্ত । প্রয়োজনে গণনা করুন ২০ পর্যন্ত । হঠাৎ রাগ-ক্ষোভ অনুভব করলে আপনি দ্রুত প্রশান্ত হতে পারেন এই প্রক্রিয়ায় ।


কিন্তু কিছু রাগ রয়েছে যা আপনি চাইলেও দূর করা আপনার জন্য এত সহজ নয়। ধরেনিন, আপনার স্ত্রী/ স্বামী বা বস্-এর কোন কথা বা আচরণ আপনাকে প্রচণ্ড রকম ক্ষুব্ধ করে তুলল। তখন আপনি কী করবেন? আপনি রাগে ফেটে পড়লে তা আপনার জন্যেই কোনো মারাত্মক এক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তাহলে আপনি কি আপনার ক্ষোভের পিপা শক্ত ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখবেন? না, তা-ও করবেন না।


সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, আমরা ক্ষোভ ভুলে যেতে পারি, সময়ের সাথে সাথে ক্ষোভ এমনিতেই দূর হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তব অবস্থা তা নয়। ড. ডালড্রপ বলেন, ক্ষোভ ভেতরে জমা রাখলে তা থেকেই যায়। অধিকাংশ মানুষই ২০/ ৩০/ ৪০ বছর ধরে ক্ষোভের বোঝা বয়ে বেড়ায়। এই জমাকৃত ক্ষোভই বহু রোগ বা ক্ষতিকর আসক্তির মূল হিসেবে কাজ করে।


মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ক্ষোভ অনুভব করলে তা প্রকাশ করে ফেলুন দ্রুত । যদি আপনি তা না করেন ক্ষোভ জমে জমে এক সময় জটিলতার বা মানসিক উত্তেজনার সৃষ্টি হবে। তখন আপনার ক্ষোভের প্রকাশ অত্যন্ত অপ্রীতিকর রূপ পরিগ্রহ করবে। আর যদি আপনার ভেতর থেকে ক্ষোভ নিয়মিত বের হয়ে যায় তাহলে আপনি প্রচন্ড পরিমানে রেগে গেলেও সহজভাবেই সব কিছু বলতে পারবেন, আমি আপনার সাথে একমত নই বা তুমি যা বলছ তা আমার মনঃপূত হয়নি।


তবে মনে রাখবেন সব সময়ই আপনার অনুভূতির প্রকাশে আপনি সংযত থাকুন। সুযোগ বুঝে আপনার রাগ উৎপাদনকারী ব্যক্তিকে আপনি আক্রমণাত্মক কথা বলে চুপসে দিতে পারেন, কিন্তু তা করতে যাবেন না। আবার চুপচাপ থেকে আপনি সব হজমও করবেন না। বরং আপনি এভাবে বলুন, আসুন, আমরা আমাদের মতপার্থক্য নিয়ে আলোচনা করি বা বলতে পারেন, আমি এই বিষয়টি নিয়ে খুব কষ্ট পাচ্ছি, এ নিয়ে একটু খোলামেলা আলাপ আলোচনা করাই ভালো। আপনার উদ্দেশ্য হবে আপনার উত্তেজনার উপশম করা,কিন্তু কাউকে দমন করা নয়।


আর মনে রাখবেন আলোচনাকালে কাউকে অভিযুক্ত করবেন না। আপনার ক্ষোভের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেন কিন্তু আপনি অপর ব্যক্তিকে আক্রমণ করবেন না । আপনি সরাসরি কাউকে অভিযোগ না করে রাগ বা ক্ষোভের কারণ বর্ণনায় আমি বা আমার শব্দটি ব্যবহার করেও অপর ব্যক্তিকে রাগের কারণ বলতে পারেন। আপনি আমাকে রাগিয়ে দিয়েছেন না বলে যখন এই ধরনের কিছু ঘটে তখন আমি ক্ষুব্ধ হই এভাবে বলতে পারেন। এতে আপনি তাকে সরাসরি দোষারোপ করছেন না, আবার আপনার পুরো কথা বলাও হয়ে যাচ্ছে। যে কোন আলোচনায় এভাবে আপনার বক্তব্য রাখলে আপনি নিজেকে বেশ বলিষ্ঠ অবস্থানে দেখতে পারেন।


যদি আপনি মুখে বলতে না পারেন, যদি আপনি মনে করেন কথা বলতে গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে বলতে পারবেন না, তা হলে আপনি যার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তাকে একটা চিঠি লিখুন। পুরো ঘটনার ও ক্ষোভের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে। আপনি হয়তো কোনোদিনই আপনার লিখা সে চিঠিটা ডাকে পাঠাবেন না, তারপরও আপনি ওই লেখার মধ্য দিয়েই সঞ্চয়িত ক্ষোভ ভেতর থেকে বেরিয়ে গেল। ভবিষ্যৎ জটিলতা থেকে আপনি বেঁচে গেলেন ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.