পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধার্ত মানুষ তারারে
ODD বাংলা ডেস্ক: মানুষ মাত্রই ক্ষুধা লাগবে এটাই স্বাভাবিক। বেঁচে থাকার জন্য খেতে হবেই। খাওয়ার প্রয়োজনীয়তাও মানুষ ক্ষুধার কারণেই বুঝতে পারে। কিন্তু যদি বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধার্ত মানুষ কে ছিলেন- তাহলে আপনাকে ফিরে যেতে হবে ইতিহাসে।
আঠারো দশকের শেষের দিকের ঘটনা। ফরাসি বিদ্রোহ তখন পুরোদমে চলছে। ঠিক সেই সময় ১৭৭২ সালে ফ্রান্সের লিঁওতে জন্ম নেয় এক আজব শিশু। যার নাম রাখা হয় তারারে।
আজব শিশু বলা হচ্ছে কারণ কুকুর থেকে বিড়াল অথবা যেকোনো প্রাণী গিলে খেয়ে ফেলতেন তিনি। যদিও তারারে বেঁচে ছিলেন মাত্র ২৬ বছর। কিন্তু তাকেই মূলত বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধার্ত মানুষ।
ছোটবেলা থেকেই তারারের অতিরিক্ত খাওয়া মানুষকে বিস্মিত করেছিল। কিশোর বয়সেই প্রতিদিন প্রায় একটি ষাঁড়ের চারভাগের একভাগ খেয়ে ফেলতো সে। তার এরকম অতিমানবীয় খাওয়ার যোগান দেওয়া তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ঘর ছাড়েন তারারে। কয়েক বছর এদিক সেদিক ঘোরার পর এই বালক যোগ দেন একটি সার্কাস পার্টিতে। কারণ মঞ্চে এসে যেকোনো কিছু খেয়ে দেখাতেন তিনি।
খাওয়ার তালিকায় কি ছিল না তার? পাথর, কর্ক, ডজন ডজন আপেল- সবই খেয়ে নিতেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনানুযায়ী, তারারে দাঁত দিয়ে জীবিত বিড়াল ছিড়ে তার রক্ত পান করতেন। তারপর শুধু কঙ্কাল বাদে পুরো বিড়ালটাই গলাধঃকরণ করে ফেলতেন। একইভাবে সে কুকুরও খেয়ে ফেলতে পারতেন। একটি সার্কাসে তারারে জীবন্ত ইল না চিবিয়ে গিলে ফেলে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। খাওয়ার আগে শুধুমাত্র ইলের মাথাটা ছেঁচে নিয়েছিলেন। তবে কিছুদিনের মধ্যেই পরিপাকতন্ত্রে ঝামেলা দেখা দেয় তারারের, যার দরুণ ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। শেষপর্যন্ত সার্কাসের কাজও ছেড়ে দিতে হয় তাকে।
অস্বাভাবিকভাবে খেলেও তারারের ওজন ছিল সাধারণ মানুষের মতোই। ১৭ বছর বয়সে তারারের ওজন ছিল মাত্র ১০০ পাউন্ড, যা প্রায় ৪৬ কিলোগ্রামের সমান। তার পুরো শরীর জুড়ে ছিল ঝুলে পড়া চামড়া। যখন তিনি খেতেন, তখন পেটের সেই চামড়া বেলুনের মতো টানটান হয়ে যেত।
মৃত্যুর পর তারারের শরীর অন্য মানুষের তুলনায় দ্রুতই পচতে শুরু করে। প্রথমে তার শরীর কেউই ব্যবচ্ছেদ করতে চায়নি। পরবর্তীতে টেসিয়ার নামের এক লোক এ কাজটি করেন। ব্যবচ্ছেদের পর দেখা যায়, তারারের পাকস্থলী, খাদ্যনালী, যকৃত ও পিত্তকোষ অস্বাভাবিক রকমের বড়। আলসারে পরিপূর্ণ পাকস্থলীর সাথে পুরো শরীরের ভেতর পুঁজে ভরা ছিল।
অতিমানবীয় খাওয়ার রহস্যের কূলকিনারা করার আগেই মাত্র ২৬ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমান তারারে।
Post a Comment