সাধারণ মাথাব্যথা না মাইগ্রেইন, বুঝবেন কিভাবে?



 ODD বাংলা ডেস্ক: মাথাব্যথার যন্ত্রণায় কম-বেশি সবাই ভোগেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একে সামান্য মনে করে সহ্য করা হয়। খুব বেশি অসহ্য হলে কেউ হয়ত ওষুধ সেবন করেন। তবে যদি মাইগ্রেইন হয়? এই চিন্তায় হয়ত অনেকেই আঁতকে ওঠেন।


তবে, মানসিক চাপ থেকে হওয়া মাথাব্যথা আর মাইগ্রেইন’য়ের ব্যথার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।


মানসিক চাপ থেকে হওয়া সাধারণ মাথাব্যথা আর মাইগ্রেইন’য়ের মাথাব্যথার মধ্যকার তফাৎ বুঝতে পারার উপায় জানিয়েছে স্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে। সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো তুলে ধরা হলো:


মানসিক চাপ থেকে মাথাব্যথা : এই ধরনের মাথাব্যথা ঘাড় ও মাথায় পেছন দিকে শুরু হয়ে কপালের দুই পাশেই ছড়াতে থাকে।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. পেম্যান সাদেগি’র প্রতিষ্ঠা করা যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল স্লিপ ইনস্টিটিউট’য়ের তথ্য মতে, এই সাধারণ মাথাব্যথার কোনো নির্দিষ্ট কারণ বের করা সম্ভব হয় না। অভ্যন্তরীণ চাপ থেকেই এর সূত্রপাত, কারণ হতে পারে ব্যক্তিগত কিংবা কর্মজীবনের ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, ঘুমের অভাব ইত্যাদিসহ অসংখ্য বিষয়। স্বস্তির বিষয় হল এই মাথাব্যথা মৃদুমাত্রার হয়। আর তা নিয়েও স্বাভাবিকভাবে কাজ করা যায়।


ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়া’র স্বাস্থ্যসেবমূলক মিলিত হাসপাতালের প্রধান কার্যালয় পেন মেডিসিনের দাবি, চোখের ওপর অতিরিক্ত ধকল এবং ক্ষুধা থেকেও এই মাথাব্যথা সৃষ্টি হয়, যা লম্বা সময় ভোগাবে।


আবার মায়ো ক্লিনিকের মতে, পেশির অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং মানসিক অস্বস্তি থেকেও মাথাব্যথা হয়।


সাধারণ মাথাব্যথার অনুভূতি: ডা. সাদেগি বলেন, এই ধরনের মাথাব্যথায় নারীরাই বেশি ভোগেন। দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে সাধারণ মাথাব্যথাকে।


প্রথমত, ‘এপিসোডিক-টেনশন টাইপ’, যা আধা ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত ভোগাতে পারে। ব্যথার তীব্রতা কম এবং মাসে ১৫ বারের কম হয়।

দ্বিতীয়ত, ‘ক্রনিক টেনশন-টাইপ’, যেখানে ব্যথার তীব্রতা বেশি এবং মাসে ১৫ বার তারও বেশি বার দেখা দিতে পারে।


মাথাব্যথার উপসর্গগুলো একই ধরনের বা পূর্বপরিচিত না হলেই তাকে মাইগ্রেইন ধরে নেওয়া উচিত হবে না।


আরেক ধরনের মাথাব্যথাও আছে সাইনাস’য়ের সংক্রমণ থেকে হয়। এই ধরনের মাথাব্যথার সঙ্গে নাক বন্ধ হওয়া, চেহারায় চাপ অনুভব করা, মাথাব্যথার তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া এবং তা আবার একপাশে হওয়া ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য দেখা যাবে।


মাইগ্রেইন কী?


পেন মেডিসিন’য়ের বর্ণনা অনুযায়ী, মাইগ্রেইন হল স্নায়ুজনীত রোগ যার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে স্নায়ুতন্ত্রের গতিপথ ও বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক উপাদান। মাইগ্রেইনের ব্যথা নিয়ে কোনো কিছু করাই সম্ভব হয় না। ফলে এই সমস্যায় আক্রান্তরা ব্যথায় কাতর থাকার পাশাপাশি কাজ, বিনোদন সবই হারায়। ব্যথাটা হয় তীব্র, ব্যথায় বিরতি থাকেনা বললেই চলে। আবার প্রকৃত মাইগ্রেইন’য়ের ব্যথা শুরু হওয়ার আগে ঘাড় ব্যথা, খিটখিটে মেজাজ, হতাশা ইত্যাদি উপসর্গও দেখা দেয়।

কেমন অনুভূতি হয়?


ডা. সাদেগি বলেন, মাইগ্রেইনের ব্যথাকে চারটি স্তরে ভাগ করা হয়, ‘প্রোডোম’, ‘অরা’, ‘হেডেক’ এবং ‘রেজোল্যুশন’।


‘প্রোডোম’ স্তরের উপশম দেখা দিতে পারে প্রকৃত মাইগ্রেইন’য়ের ব্যথা শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগ থেকেই। প্রায় ৬০ শতাংশ মাইগ্রেইন রোগী এই ভোগান্তির শিকার হয়। এ সময় মেজাজ দ্রুত রূপ বদলায়, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, প্রচণ্ড তৃষ্ণা, অতিরিক্ত মূত্রপাত, ঘাড় ব্যথা, পেট ফোলাভাব, আলো ও শব্দের প্রতি প্রচণ্ড সংবেদনশীলতা ইত্যাদি উপসর্গ অনুভূত হয়।


এর পর আসে ‘অরা’ স্তর, যে রোগী চোখের সামনে আলোর ঝলকানি দেখে, অস্বাভাবিক অনুভূতিহীনতা, জ্বলুনি, সংবেদনশীলতা দেখা দেয়। ১৫ শতাংশ মাইগ্রেইন রোগী এই স্তর অনুভব করেন।


‘হেডেক’ স্তর শুরু হয় মাথার একপাশ থেকে, পরে মাথার অন্যপাশেও তা সরে যেতে দেখা যায়। ব্যথা হয় দপদজলের মতো। হাঁচি, কাশি হলে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়। সঙ্গে আরও থাকে ‘ফোনোফোবিয়া’, ‘ফটোফোবিয়া’, বমিভাব, সিদ্ধান্তহীনতা ইত্যাদি উপসর্গ।


আর ‘রেজোল্যুশন’ স্তরে থাকে অবসাদ, খিটখিটে মেজাজ। মাথাব্যথা সেরে যাওয়ার পরও এই সমস্যাগুলো রোগীর থেকেই যায়।

করণীয় কী?


ডা. সাদেগি বলেন, সাধারণ মাথাব্যথা সারানো কঠিন কিছু নয়। সঠিক চিকিৎসায় এই ব্যথা ভালো সাড়া দেয়। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে ওষুধ ছাড়াই ভালো হয়। আর পথ্য হিসেবে দেওয়া হয় মানসিক চাপ কমানোর ও ব্যথানাশক ওষুধ। তবে মাইগ্রেইন’য়ের চিকিৎসা জটিল। প্রথমত এই রোগ সারানোয় বিশেষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। রোগীর রোগের ধরন বুঝে চিকিৎসককে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা সাজিয়ে নিতে হয়।


তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, মাথাব্যথাটা আসলে রোগ নয়, তা উপসর্গ মাত্র। তাই উপসর্গ দূর করতে হলে, তা কিসের উপসর্গ সেটা জানতে হবে এবং সেটাই সারাতে হবে। সেই কারণটা হতে পারে মাইগ্রেইন, সাইনাস কিংবা দৈনন্দিন জীবনের ধকল। তাই ঘন ঘন মাথাব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, সামান্য বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.