চামড়ার পণ্য দীর্ঘদিন নতুন রাখতে করণীয়
ODD বাংলা ডেস্ক: বহু যুগ ধরে আভিজাত্যের এক অন্যতম প্রতীক চামড়ার পণ্য। লেদার অ্যাকসেসরিজে যাদের প্যাশন রয়েছে তাদের কাছে চামড়ার ব্যাগ, জুতো, জ্যাকেট পছন্দের। একটা সময় ভাবা হতো, পশুর চামড়া দিয়ে শুধু পোশাক, জুতা কিংবা বিভিন্ন অনুষঙ্গই তৈরি হয়। কিন্তু সে সময় বদলেছে। শুধু পোশাক-আশাকে আভিজাত্য তুলে ধরতেই আসল চামড়ায় প্রস্তুত পণ্য খুঁজে বেড়ায় না কেউ। বরং ঘরের আসবারের ওপরের মোড়কটিতেও চায় একটু ভিন্নতা। তাই চামড়ার তৈরি কভার যেন পছন্দ অনেকেরই। চামড়ার তৈরি পণ্য ঘর সাজানোর কাজে ঘরনির পছন্দ জয় করেছে।
চামড়ার পণ্য দেখতে যেমন সুন্দর তেমনই টেকসই। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে চাইলে সঠিক যত্ন নেয়া প্রয়োজন। অ্যাকসেসরিজ নিয়ে যাদের প্যাশন রয়েছে তাদের কাছে চামড়ার ব্যাগ, জুতো, জ্যাকেট তো খুবই পছন্দের। এছাড়া শীতে চামড়ার পণ্যের নিতে হয় বাড়তি যত্নের। কিন্তু দেখা যায়, সঠিক যত্ন ও ব্যবহারের অভাবে চামড়ার পণ্যের চাকচিক্য ভাব অনেকটা কমে যায়। একটু যত্ন নিলেই অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
ভিজে যাওয়া যে কোনো চামড়ার পণ্যের যত্ন নিতে প্রথমেই শুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। চামড়ার জুতা ভিজে গেলে প্রথমে শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে রোদে শুকাতে হবে। আর যদি কয়েকদিন রোদ না উঠে তবে? কিভাবে শখের চামড়ার পণ্য ভালো রাখবেন কথা না বাড়িয়ে চলুন এবার তাই দেখে নেই!
১. নিউজ প্রিন্ট কাগজ ব্যবহারঃ চামড়ার জুতা ভেজা জুতা থেকে জল সরানোর জন্য নিউজপ্রিন্ট কাগজ, জুতার ভেতর ও বাইরে দিয়ে কিছুক্ষণ মুড়িয়ে রাখুন। নিউজ প্রিন্ট জল শুষে নেবে। এছাড়া শুকনা কাপড় দিয়েও ভালোমতো জল মুছে নিতে পারেন।
২. রোদ ও আগুনের তাপঃ জল ঝরানো জুতা না শুকানো পর্যন্ত ব্যবহার করবেন না। রোদে জুতা শুকান। কয়েকদিন রোদ না উঠলে চুলার আগুনের তাপে জুতা শুকানো যেতে পারে।
৩. কালি ও ক্রিমঃ জুতা শুকানোর পরপর কি ব্যবহার করা শুরু করবেন নাকি! জুতা শুকিয়ে গেলে জুতায় অবশ্যই ভালো কালি ও ক্রিম ব্যবহার করুন।
৪) প্লাসটিকের জুতাঃ জুতা যদি বারবার ভিজে তাহলে একমাসের মধ্যে চামড়ায় পচন ধরার সম্ভাবনা থাকে। তাই ভেজা মৌসুমে চামড়ার জুতা না পরাই ভালো। আপনি প্লাসটিকের জুতা বা বিভিন্ন পাম্প সু ব্যবহার করতে পারেন বৃষ্টির দিনগুলোতে।
৫. নারিকেল তেলঃ চামড়ার ব্যাগ যদি ভিজে যায়, তাহলে শুকনা কাপড় দিয়ে জল মুছে নিন। তারপর পাখার বাতাসে শুকান। এরপর যে কোনো তেল (নারিকেল বা অলিভ অয়েল) হালকা করে ব্যাগে মাখুন। ট্যানারির ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে সাধারণত নারিকেল তেল ব্যবহার করে থাকি। বেল্টের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি ফলানো যায়।
৬. ইয়াম ব্যবহারঃ তেল ছাড়াও এক ধরনের কেমিক্যাল পাওয়া যায়। ট্যানারির লোকজন একে ‘ইয়াম’ বলে। এই কেমিক্যাল হালকা করে যে কোনো চামড়ার পণ্যের উপর ঘষলে সেটা চকচকে হয়। আবার বেশি জোড়ে ঘষলে রং উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এই ইয়াম চামড়ার পণ্যে এক-দুই মাস অন্তর ব্যবহার করলে চামড়ার জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ভালো থাকে। সাধারণত কেজি দরে বিক্রি হয় এই কেমিক্যাল। তবে নরম চামড়াজাত পণ্যে ইয়াম ব্যবহার না করাই ভালো।
৭. চামড়ার ফাঙ্গাসঃ অনেকদিন রেখে দিলে চামড়ার জিনিসের উপর এক ধরনের সাদা প্রলেপ পড়ে। যাকে ফাঙ্গাসও বলা হয়। এটা উঠানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে ভালোমতো শুকিয়ে চামড়ার পণ্যে হালকা তেল ব্যবহার করুন।
৮. ভাঁজের হয়ে দাগ পড়লেঃ চামড়ার ব্যাগ, জুতা বা বেল্ট বেকায়দায় থাকলে ভাজ হয়ে দাগ পড়ে যায়। সেটা উঠানোর জন্য প্রথমে ভাজ হওয়া জায়গা সমান করে ধরে এর উপর জল ঝরানো মোটা ভেজা কাপড় দিন। তারপর ভেজা কাপড়ের উপর দিয়ে মোটামুটি তাপে ইস্ত্রি করুন। মনে রাখবেন ভেজা কাপড় শুকিয়ে গেলেই আবার ভিজিয়ে ইস্ত্রি করতে হবে। কোনো মতেই যেন ইস্ত্রির তাপ সরাসরি চামড়ার পণ্যে না লাগে। রেক্সিনের পণ্যে আবার এই পদ্ধতি ফলাতে গেলে, জিনিসটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
৯. চামড়ার পণ্য ঠান্ডা জায়গায় রাখুনঃ চামড়ার যেকোনো পণ্য এসির ভিতর খুব ভালো থাকে। সবার বাসায়তো এসি নেই, তাই যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা জায়গায় রাখার চেষ্টা করুন চামড়ার ব্যাগ, জুতা বা বেল্ট।
যেকোনো কিছু সংরক্ষণের আগে যথাযথভাবে ধুয়ে রাখাই নিয়ম। এ নিয়মের ব্যতিক্রম নয় চামড়ায় তৈরি আপনার পছন্দের অনুষঙ্গটিও। অন্যদিকে চামড়ার তৈরি ব্যাগ, জ্যাকেট, ওভারকোট কিংবা যা-ই হোক না কেন, অনেক দিন ভাঁজ করে রেখে দিলে ভাঁজে ভাঁজে ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই অনেক দিন রেখে দেয়ার মতো হলে তা ভাঁজ করে না রেখে পলিব্যাগে মুড়িয়ে ঝুলিয়ে রাখলে ভালো।
আবার চামড়ার তৈরি জুতা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে ভালোভাবে শুকিয়ে কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে কাগজ অথবা পলিব্যাগে রেখে দিতে পারেন। এতে ধুলাবালি যেমন লাগবে না, তেমনি পোকার আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকবে। তাহলে এখন থেকে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করুন আপনার শখের চামড়ার পণ্যটি!
Post a Comment