কেন ধুঁকছে পৃথিবীর ফুসফুস?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: পৃথিবীতে একইসঙ্গে সুন্দর এবং ভয়ঙ্কর একটি জায়গার হলো অ্যামাজন। এর বিস্তার বিশ্বের প্রায় সব জঙ্গলের দ্বিগুন। অ্যামাজন নদীকে ঘিরে এই জঙ্গল প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে। নানা কারণে আজ ধুঁকছে পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত অ্যামাজন।


প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এই জঙ্গল ভ্রমণ করতেন মূলত সোনা, রূপা এবং বিভিন্ন মূল্যবান পদার্থ লাভের আশায়। মূলত পর্তুগীজরা মনে করতেন, বিশাল এই অরণ্যে লুকিয়ে আছে এলডোরাডো নামক এক গুপ্ত শহর। সেই শহরটি পুরোপুরি সোনা দ্বারা নির্মিত। এই ভ্রান্ত ধারণাটি এসেছে গ্রিক পৌরাণিক গল্প থেকে। সেখানে বলা হয়েছে, এলডোরাডো নামক সোনায় মোড়ানো শহরটি পাহারা দেয় নারী যোদ্ধারা। সেই জন্যই এই জঙ্গলের নাম অ্যামাজন রাখা হয়েছে। পর্তুগীজ, স্প্যানিশ এবং ফ্রান্স অভিযাত্রীরা প্রতিযোগিতায় নামে এই গুপ্ত শহরটিকে খুঁজে বের করার। শত চেস্টা চালিয়েও আজও কেউই এই কাল্পনিক শহরটিকে খুঁজে বের করতে পারেনি। 


এই বিশাল আকার জঙ্গলটি আয়তনে প্রায় ৫৫ লাখ বর্গকিমি। দক্ষিণ আমেরিকার নয়টি দেশ জুড়ে অ্যামাজন জঙ্গলটি রয়েছে। যার মধ্যে ৬০ শতাংশ রয়েছে ব্রাজিলে, ১৩ শতাংশ রয়েছে পেরুতে আর বাকি অংশ রয়েছে কলোম্বিয়া, ভেনুজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গুয়ানা, সুরিনামা এবং ফ্রান্স গায়ানা। পৃথিবী জুড়ে যেই রেনফরেস্ট রয়েছে তার অর্ধেক এই অ্যামাজন জঙ্গল। 


এই জঙ্গলে প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন বৃক্ষ রয়েছে। এসব বৃক্ষ প্রায় ১৬ হাজার প্রজাতিতে বিভক্ত। হরেক রকমের গাছপালা দিয়ে আবৃত এ বনে বেশির ভাগই চিরহরিৎ বৃক্ষ। তাই এ বনকে চিরহরিৎ বনও বলা হয়।


নানারকম প্রজাতির বাসস্থান হিসেবে সমৃদ্ধ অ্যামাজন। আমাজন জঙ্গলে এমন কিছু বিরল প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, যা অন্য কোথাও দেখা যায় না। আমাজনে ৮৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়, ৪২৮ প্রজাতির উভচর, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। অনিন্দ্য সৌন্দর্যের পাশাপাশি বিপজ্জনক অনেক প্রাণীই আমাজনে বসবাস করে। আমাজনে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং ভয়ংকর সাপ অ্যানাকোন্ডা। রয়েছে লাল চোখা ব্যাঙ, বিভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড়, জাগুয়ার, বানর, বৈদ্যুতিক ইল, পিরানহা, বিষাক্ত ডার্ট ফ্রগসহ অসংখ্য বিষাক্ত জাতের সাপ ও বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ প্রাণী।


পৃথিবী বড় বৈচিত্র্যময় একটি রূপ অ্যামাজন। অ্যামাজন এমন কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ আছে যেগুলো এখন অতিরিক্ত পর্যটন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়।


পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি কার্বন শুষে নিতে সক্ষম বনাঞ্চল এই বনটি। তবুও ব্যাপকভাবে বন উজাড় করা হচ্ছে সেখানে। গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাছ ধ্বংস হয়েছে ২০২০ সালে। প্রাণী হত্যার হারও বাড়ছে। কোনো কোনো জায়গায় বৃষ্টিপাত এক চতুর্থাংশ কমেছে। এসব কারণে যেন ধুঁকছে পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত অ্যামাজন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.