কী আছে তাজমহলের তালাবদ্ধ কক্ষগুলোতে?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ভারতের আগ্রার তাজমহলের নাম শুনেননি এমন মানুষ খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। তাজমহলের নির্মাণশৈলী এতটাই নিখুঁত ও সৌন্দর্যময় যা বিশ্বের সব স্থাপত্যকেই এর থেকে আলাদা করেছে। 

সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজ এর সমাধির ওপরে এই তাজমজল নির্মাণ করেছিলেন। ১৬৩২ থেকে ১৬৫৩ সাল পর্যন্ত ২২ বছর ধরে নির্মাণ কাজ চলেছিল। প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক কাজ করেছিল এই নির্মাণ প্রকল্পে। এছাড়া নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছিল এক হাজার হাতি। সাদা মার্বেলের গম্বুজ আর দৃষ্টিনন্দন কারুকাজের জন্যই বেশি সমাদৃত এই রাজকীয় সমাধিটি।


ভালোবাসার বিস্ময়কর নিদর্শনের পাশাপাশি তাজমহল ইসলামিক স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন, যা শান্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক। ১৯৮৩ সালে একে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো। 


তাজমহল নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। এর তালাবদ্ধ প্রায় ২২টি ঘরে কী রয়েছে, তা নিয়ে সম্প্রতি নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেরই প্রশ্ন, বহুবছর ধরে তালাবদ্ধ ওই ঘরগুলোর রহস্য কী। এর পেছনে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে কিনা। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র রজনীশ সিং নামের এক সদস্য তাজমহলের তালাবদ্ধ ২০টিরও বেশি ঘর খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে গত ৭ মে উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করার পর বিষয়টি আলোচনার ঝড় তোলো।


পিটিশনে রজনীশ বলেন, তাজমহলে প্রায় ২২টি তালাবদ্ধ ঘরের মধ্যে কী রহস্য লুকিয়ে আছে তা সামনে আসা দরকার। তিনি আরো বলেন, কিছু ইতিহাসবেত্তা ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের দাবি, তাজমহলের ওই ঘরগুলোতে হিন্দু দেবতা শিবের মন্দির রয়েছে। তাদের এই দাবি সত্য কিনা সেটাই জানতে চান তিনি।


গত ১২ মে এ বিষয়ে শুনানির পর পিটিশনটি খারিজ করে দেন আদালত। তাজমহলের তালাবন্ধ ওই ঘরগুলোর নেপথ্যে কোনো রহস্য নেই বলেই মনে করেছেন বিচারকরা। রজনীশকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘এ বিষয়ে যে সর্বজন গৃহীত যে তথ্য রয়েছে, তা নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট না হলে তা চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে প্রথমে পড়াশোনা শুরু করুন। এমএ, পিএইচডি করুন। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেকে নথিভুক্ত করুন।’


সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রজশীং সিং তাজমহলের তালাবদ্ধ যে কক্ষগুলো খুলে দিতে বলেছেন, সেগুলোর অধিকাংশই সৌধের ভূগর্ভস্থ অংশে অবস্থিত। তাজমহলের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন এমন অনেক মানুষের মতে, ভূগর্ভস্থ ওই ঘরগুলোর ভেতর আদৌ কোনো রহস্য নেই।


মুঘল স্থাপত্যরীতির ওপর বিশেষ গবেষণা করেছেন অস্ট্রিয়ার ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনার এশিয়ান আর্ট বিভাগের অধ্যাপক এবা কচ। তাজমহল নিয়ে তার গবেষণা গ্রন্থ রয়েছে। গবেষণার সময় তিনি তাজমহলের ওই বন্ধ ঘরগুলো ও সেগুলোর বারান্দাও প্রদর্শন করেছিলেন, ছবিও তুলেছিলেন।


গবেষণা গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, তাজমহলের নিচে ভূগর্ভস্থ ওই কক্ষগুলো তৈরি করা হয়েছিল ‘তাহখানা’র অংশ হিসেবে। মোগলরা গরমের মাসগুলোতে শরীর শীতল রাখতে এমন ভূগর্ভস্থ কক্ষ তৈরি করতো। 


যমুনা নদীর দিকে মুখ করে থাকা তাজমহলের একটি চত্বরে এরকম কয়েকটি সারিবদ্ধ কক্ষ রয়েছে। এবা কচ এ ধরনের ১৫টি কক্ষ খুঁজে পেয়েছিলেন। এগুলোর মধ্যে সাতটি কক্ষ বেশ বড়, যেগুলোর প্রতিটির দুই দেয়ালে বর্ধিত অংশ রয়েছে। ছয়টি কক্ষ চার দেয়ালের এবং দুটি কক্ষে দেয়ালের সংখ্যা আটটি করে। বড় আকৃতির কক্ষগুলোর সামনে রয়েছে কারুকার্য খচিত খিলান বা তোরণ, যেগুলোর ভেতর দিয়ে যমুনা দেখা যায়।


এসব কক্ষের বিষয়ে অধ্যাপক এবা কচ লিখেছেন, ‘এটা নিশ্চিত যে সম্রাট যখন এই সৌধে আসতেন তখন এসব প্রশস্ত, সুন্দর এবং শীতল কক্ষগুলো ছিল তার, সহযোগীদের এবং তার নারীদের আদর্শ বিশ্রামের জায়গা। কিন্তু, এখন আর এগুলোতে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করতে পারে না।’ 


আগ্রায় জন্ম নেওয়া দিল্লিভিত্তিক ইতিহাসবিদ রানা সাফভির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৮ সালে এক বন্যার আগ পর্যন্ত তাজমহলের ভূগর্ভস্থ ওই অংশে পর্যটকরা যেতে পারতেন। বন্যার জল তাজমহলের ভেতর ঢুকে গিয়েছিল, জল নামার পর মাটির নিচের ওই ঘরগুলোর মেঝেতে পলির আস্তরণ পড়েছিল। দেয়ালে, মেঝেতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। তারপরই কর্তৃপক্ষ জনসাধারণের জন্য ঘরগুলোতে ঢোকা বন্ধ করে দেয়। ‘ওগুলোর ভেতর কিছুই নেই’- বলে উল্লেখ করেন রানা সাফভি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.