তুষারমানব ইয়েতির সন্ধানে বিশ্বের সেরা পর্বতারোহী

 


ODD বাংলা ডেস্ক: রেইনহোল্ড মেসনার। কে তিনি, কী করেছেন? 


রেইনহোল্ড মেসনার কী করেছেন বলার চেয়ে বলা সহজ, কী করেননি ! ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকার মতে বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পর্বতারোহী তিনি, বারংবার অসম্ভব শব্দটাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চিকিৎসাবিদ্যার যাবতীয় ধারণাকে কাঁচকলা দেখিয়ে বিনা অক্সিজেনে প্রথমবারের মত বন্ধুর সাথে এভারেস্ট জয় করলেন। এরপরে মনে হল যথেষ্ট হয়নি; আরও একবার এভারেস্ট জয় করবেন অক্সিজেন ছাড়া এবং একা! করলেনও! সৃষ্টি করেছেন মানুষের পক্ষে নব নব ইতিহাস।


একে একে বিশ্বে ৮,০০০ মিটার উচ্চতার যে ১৪টি পর্বতশৃঙ্গ আছে সবগুলোই জয় করলেন প্রথম মানুষ হিসেবে। এর মাঝে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পর্বত জয় তো আছেই। তারপরে গেলেন উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরু জয়ে। শেষে ৫০ বছর বয়েসে গোবি আর টাকলামাকান মরুভূমি পাড়ি দিলেন উটের কাফেলা নিয়ে।


মোদ্দা কথা, মেসনার পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত মানুষদের একজন, তার লেখা বই লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়, প্রায়ই পর্বতারোহণের উপর লেকচার দেন বিভিন্ন দেশে, তার কোনো অভিযানেই স্পন্সরের অভাব হয় না কখনই। সত্তরে পৌঁছে এখন মেতে আছেন তার নানা অর্জন নিয়ে বেশ কটি বিশাল জাদুঘর গড়ার কাজে।


সেই সাথে বলে রাখি ইতালি – অস্ট্রিয়ার সীমান্ত তিরলে জন্ম নেওয়া জার্মানভাষী এই ইতালিয়ান নাগরিক সাংঘাতিক একরোখা মানুষ; অতি দুর্বিনীত এবং স্পষ্টবাদী। জীবনে কোন পর্বতে ইতালির পতাকা নিয়ে যাননি। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে বলেন- আমার পতাকা আমার রুমাল! সেই সাথে এও বলেন মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণের পর যদি কেউ বলেন, তার জীবনের সেরা মুহূর্ত এটি, সে নিঃসন্দেহে মিথ্যা বলছে! কারণ এভারেস্টের চূড়ো একটি বিদঘুটে জায়গা! 


এই মেসনারই কয়েক দশক আগে সারা বিশ্বকে চমকে দিলেন তিনি তুষার মানব 'ইয়েতি' দেখেছেন এই বলে! শুরু হয়ে গেল গুঞ্জন, তর্ক, যুক্তি- পাল্টা যুক্তির খেলা! হিমালয়ের অধিবাসীরা অনেকেই এই তুষার মানবের অস্তিত্বে বিশ্বাস করলেও আজ পর্যন্ত এর অস্তিত্বের পক্ষে কোন অকাট্য প্রমাণ দেখাতে সক্ষম হয়নি কেউই।


মেসনার মুখে কুলুপ এঁটে একজন যথার্থ গবেষকের মত কাজে লেগে পড়লেন, এবং দীর্ঘ দুই দশকের নিবিড় অনুসন্ধান চালানোর পরে সমস্ত ফলাফল MY QUEST FOR YETI বইতে লিপিবদ্ধ করেন। এখানে সেই বইটির চুম্বক অংশ তুলে ধরার চেষ্টা করছি, ইয়েতি নিয়ে নিজের পড়া অন্যান্য খবরের সাথে। 


প্রথমবারের মত হিমালয়ে গিয়েছিলাম অন্নপূর্ণা সার্কিটের একটা অংশ ট্রেকিং করতে। সেবার এক গ্রামে রাতে খাবার সময় রেস্তোরাঁর পরিচারক জানালেন, তাদের পানীয়ের তালিকায় আছে দুধ থেকে তৈরি বিখ্যাত পানীয় ছাং ! আরে, এই ছাং-ই না উল্লেখ করা ছিল তিব্বতে টিনটিনে, বিখ্যাত ইয়েতির প্রিয় পানীয় হিসেবে! সেই সুযোগ আর ছাড়ি কেন? পান করা হল দুই গ্লাস ঘন সাদা বর্ণের ছাং, তবে এই পানীয়ের জন্য পাহাড়ের কন্দর ছেড়ে ইয়েতি কেন লোকালয়ে হামলা চালাবে তা বোধগম্য হল না।


সেই সাথে আছেন বাংলাদেশে পর্বতারোহণের পথিকৃৎ বাস্তববাদী ইনাম আল হক, তিনি নির্মম প্রশ্নবাণ ছুড়ে দিলেন ইয়েতির অস্তিত্বকে প্রায় বাতিল করে দিয়ে। প্রথম প্রশ্ন- ইয়েতিরা ধরে নিলাম লাজুক এবং নির্জনতাপ্রিয়, আমাদের সামনে সহজে আসে না, কিন্তু তারা নিশ্চয়ই মারা যায়! হিমালয়ের সবখানেই তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাদের একটি কংকাল, এক টুকরো হাড় বা চামড়া আজ পর্যন্ত পাওয়া গেল না কেন! দ্বিতীয় প্রশ্ন, আমরা যদি ধরেও নেই ইয়েতি 'এপ' জাতীয় উন্নত মস্তিস্কের প্রাণী, তাহলে বুদ্ধিমান প্রাণীর মতই সে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবে, বংশবিস্তারের চেষ্টা করবে। হিমালয়ের মত বিশাল দুর্গম এলাকায় এত লক্ষ বছর ধরে বংশবিস্তার করে টিকে থাকতে তাদের নিশ্চয়ই একটা ভাল জনসংখ্যার অধিকারী হতে হবে। এমনতো না যে কেবল মাত্র ৫টি ইয়েতি থাকতে পারে, সেই সংখ্যাটা হতে হবে কমপক্ষে দুই হাজার! কোথায় তারা?


এই সময়ের পাশের টেবিলে উপস্থিত এক এভারেস্ট জয়ী শেরপা জানালেন, তিনি একাধিকবার ইয়েতির পায়ের ছাপ দেখেছেন। সেই সাথে আবছা ছায়ার মত ইয়েতিও দেখেছেন! অবশ্য তার বর্ণনায় বেশি গোঁজামিল দেওয়া ছিল, শুনেই ইনাম ভাই তার বিখ্যাত প্রাণখোলা হাসি দিয়ে বললেন, বাংলাদেশের যেকোনো গ্রামে যান, কিছু মানুষ পাবেনই যারা ভূত দেখেছে, নিদেনপক্ষে জ্বিন ! সুন্দর বর্ণনা দিবে তাদের, তাতেই কি জ্বিন -ভূত সত্যি হয়ে গেল! নেপালেও তাই, শেরপারা প্রায় সবাই বলবে, রাতের আঁধারে দেখেছে চলমান বিশাল অবয়ব, শুনেছে বিকট চিৎকার। কিন্তু প্রমাণ করার মত উপাত্ত দিতে পারে না কিছুই। 


কাকতালীয়ভাবে তার পরের দিনই ট্রেকিং শুরুর আগে এক অদ্ভুত দর্শন জীর্ণ পুরনো বইয়ের দোকানে মেসনারের বইটি চোখে পড়ল, উনার লেখা বই আগেও পড়েছি , বিশেষ করে প্রথম মানুষ হিসেবে একাকী অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট জয়ের ঘটনা নিয়ে লেখা The Crystal Horizon মুগ্ধ করে রেখেছিল অনেকদিন, কিন্তু এই বিশেষ বইটি আগে হাতের নাগালে আসেনি; তাই গুপ্তধন পাবার পর পরই চোখ ঝলছে উঠেছিল নিশ্চয়ই লোভ আর আত্মতৃপ্তিতে।


সুযোগসন্ধানী দোকানি দামাদামির বিন্দুমাত্র সুযোগ না দিয়ে তার চাহিদামত দাম নিয়ে নিল ( অবশ্য নেপালে বইয়ের দামাদামি করে সুবিধের হয় না কখনোই, এত বেশি পর্যটক আর চাহিদা, যে দোকানিরা জানে বিক্রি হবেই হয়- আজ না হয় কাল)। চারপাশের আকাশছোঁয়া অন্নপূর্ণা আর ধবলগিরির আশ্রয়ে পড়া শুরু করলাম ইয়েতির খোঁজে সর্বশ্রেষ্ঠ পর্বতারোহীর একক অভিযানের গল্প। 


বইয়ের শুরুতেই মেসনার বলেছেন, একাকী অভিযান চালাবার সময় এক রাতে পরিত্যক্ত এক গ্রামের চালাঘরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন তিনি। সে রাতেই চাক্ষুষ করেন সেই অদ্ভুত প্রাণীটি, যা দুই পায়ে বেশ খানিকদূর হাঁটতে সক্ষম। যা তার চেনা জানা সমস্ত প্রাণীর চেয়ে আলাদা, এই কি তাহলে কিংবদন্তীর সেই তুষারমানব! 


এই প্রসঙ্গে একটি ছোট কথা। ঘটনাটি ১৯৮৬ সালের, তার ঢের আগে থেকেই মেসনার নিজেই একজন কিংবদন্তী, কাজেই ইয়েতির মত একটি বিতর্কিত বিষয় নিয়ে সাক্ষী হতে চেয়ে তিনি নাম-যশ-অর্থ কামাতে চেয়েছেন- এমন ধারণা নেহাতই বাতুলতা মাত্র। বরঞ্চ এই কথা জনসমক্ষে বলার পর থেকেই যথেষ্ট সমালোচনার শিকার হয়েছেন। অনেকে এমনও বলেছে, পাহাড়ের সেই উচ্চতায় গাঁজা খেয়ে মেসনার চোখে ভুল দেখেছিলেন। অনেক উচ্চতায় অক্সিজেনের অভাবের প্রভাবে মানুষ মস্তিস্কের নিয়ন্ত্রণের অভাবে ভুল দেখে, অনেক অবাস্তব জিনিসের সাক্ষী হয় সত্য; কিন্তু রেইনহোল্ড মেসনার না, যিনি প্রায় বলে কয়ে সমস্ত শীর্ষস্থানীয় পর্বত বিনা অক্সিজেনে জয় করেছেন- তিনি আর যাই হোক এই সমস্যায় অন্তত তরুণ কালে ভুগবেন না। এই প্রসঙ্গে মেসনার নিজেও বলেছেন তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা, তিরলে তার প্রতিবেশী মুখের উপর বলেছিলে- তুমি আর তোমার ইয়েতি গোল্লায় যাক! 


আসলে ইয়েতি, বিগ ফুট, মৎসকন্যা, লক নেসের নেসি, ইউএফও- ইত্যাদি নিয়ে অবিশ্বাসের মূল সমস্যা কিন্তু শুরু হয় কিছু মানুষের জন্যই, যারা কেবল অর্থ আর খবরের কাগজের শিরোনাম হবার জন্য অবলীলায় মিথ্যা বলে। এই গত বছরও রাশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুটি ইয়েতি ধরা পড়েছে বলে শোরগোল শুরু হয়ে যায়। পরে জানা গেল, সেই গ্রামটিকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য গুজব ছড়ানো হয়েছে!


এই সমস্ত অভিজ্ঞতাই তাকে আরো জেদি, একগুঁয়ে করে তোলে, বেরিয়ে পড়েন তিনি ইয়েতির রহস্য উদঘাটনের জন্য। একজন খাঁটি গবেষকের মত তিনি সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন সমস্ত বাঁধা এড়িয়ে। 


এবং মাঠে নেমেই মেসনার আবিস্কার করে বসেন এক চমকপ্রদ তথ্য, ইয়েতির কাহিনী সবচেয়ে বেশী নেপালে শোনা গেলেও এটি আসলে নেপালের স্থানীয় কিংবদন্তী নয়! এটি তিব্বতের অবারিত মালভূমি আর বন্ধুর পর্বতে বসবাসকারী কিছু গোত্রের লোককথার চরিত্র, তারা যখন নানা গিরিখাদ পার হয়ে অনেক অনেক আগে হিমালয় ডিঙ্গিয়ে নেপালে এসে বসতি স্থাপন করে, তাদের সাথে সাথে আসে সেই লোকগাঁথা, সংস্কৃতি, ইয়েতির গা ছমছমে গল্প। 


সেই সাথে মেসনার আলোকপাত করেন ইয়েতি নিয়ে মিথ্যাচারের ওপর। বিশেষ করে তার পায়ের ছাপ নিয়ে- তুষারের উপর সামান্য ব্যতিক্রম বড় পায়ের ছাপ পেলেই তা নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের উত্তেজনা শুরু হয়ে যায়। অথচ তলিয়ে দেখলেই বোঝা যায় এটি তুষারচিতা, পাহাড়ি ভাল্লুক বা অন্য কোন প্রাণী পায়ের ছাপ। রোদে তুষার গলে বিকৃত অবস্থায় পৌঁছালে ছাপগুলোকে অনেক বড় দেখায়, ব্যস শুরু হয়ে যায় মানুষের জল্পনা-কল্পনা। 


অবশ্য মিথ্যেটাও কম দায়ী নয়, বিশ্বের প্রথম দিককার শীর্ষস্থানীয় পর্বতারোহী এরিক শিপটনের তোলা ইয়েতির যে পায়ের ছাপের ছবি আজ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী বিখ্যাত, এডমণ্ড হিলারির সাথে শিপটনের কথোপকথনে এক পর্যায়ে উঠে আসে যে ব্যাপারটি ভুয়া। সম্ভবত এভারেস্ট অভিযানের অর্থ যোগান বন্ধ হয়ে যাবে এই আশঙ্কা থেকেই শিপটনের মত বরেণ্য অভিযাত্রী এই জালিয়াতি করেন।


সেই সাথে আছে একাধিক বৌদ্ধ মঠে সংরক্ষণ করা ইয়েতির দেহাবশেষ, বিশেষ করে খুমজুং উপাসনালয়ের সংরক্ষিত ইয়েতির মাথার উপরিভাগের চামড়াটি বিবেচনা করা হত এক অকাট্য প্রমাণ হিসেবে। কিন্তু ব্রিটেনে নিয়ে যেয়ে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেল, এটি কোন বাঁদর জাতীয় প্রাণীর নয়, হিমালয়ের ছাগল বা হরিণের চামড়া দিয়ে তৈরি এক শো-পিস! যদিও স্থানীয় শেরপারা সেটিকে আজও দেবতাজ্ঞানে পূজা করে। (বিখ্যাত প্রাণী বিশেষজ্ঞ দ্য নেকেড এপের লেখক ডেসমণ্ড মরিসের এক বইতেও এই ঘটনার উল্লেখ ছিল, যেখানে গবেষকদের মাঝে মরিস খোদ উপস্থিত ছিলেন)। উল্লেখ্য, খুমজুং সেই মঠে নকল ইয়েতির খুলি দেখতে আমরা একাধিকবার গিয়েছি, এই মাসের প্রথমদিকেও গেছিলাম বন্ধুদের নিয়ে। 


সেই সাথে স্যার এডমণ্ড হিলারি তার বিখ্যাত তুষারমানব অভিযানের ইতিটানার পর, ইয়েতির অস্তিত্ব নেই ঘোষণা দিয়ে হিমালয়ে পাওয়া সন্দেহজনক কিছু পশম গবেষণার জন্য দান করেন, দেখা যায় সেগুলোও হিমালয়ের ভারালের পশম! 


এরপরে মেসনার তুষারমানবের নাম নিয়ে যথেচ্ছ নাড়াচাড়া করেন। এলাকা ভেদে তাদের নাম Michê, Dzu-teh, Migoi, Mi-go, Mirka , Kang Admi , JoBran ( তিব্বতে টিনটিনে ইয়েতিকে মিগু বলা হত), এবং প্রায় সবগুলো নামই ভাল্লুকের সাথে জড়িত। এমনকি ইয়েতি শব্দটিও মেতি-র অপ্রভংশ, যার অর্থ ভাল্লুক। 


ভাল্লুকের থাবার চিহ্নকে অনেক সময় কল্পিত ইয়েতির পায়ের ছাপ ভাবেন স্থানীয়রা। সংগৃহীত ছবি

ইয়েতি কিংবদন্তীর উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হবার পর তিব্বতে অসংখ্য জনপদে ব্যপক অনুসন্ধান চালান মেসনার বছরের পর বছর ধরে। তার কাছে গোপন সন্ধান পৌঁছে- দুর্গম এক মনেস্ট্রিতে তিনটি তুষার মানবের মৃতদেহ সংরক্ষণ করে রেখেছে লামারা, কিন্তু তাদের কাছে তা অতি পবিত্র বস্তু বিধায় বিদেশীদের সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ। 


মেসনারের এই অনুসন্ধানের মূলপ্রেরণা ছিল- এই কিংবদন্তীর মূলে কোন না কোন বাস্তব ভিত্তি অবশ্যই আছে, এটি স্বর্গীয় দেবদূত বা কল্পকথার শয়তান না, নিশ্চয়ই কোন প্রাণীর আদল থেকে, মানুষের সাথে তার সংঘর্ষময় ইতিহাস থেকে হাজার হাজার বছর ধরে ডালপালা গজিয়ে বিশাল মহীরুহতে পরিণত হয়েছে ইয়েতির গল্প, কিন্তু মূল ভিত্তিটা কি ! 


মেসনারের মনে সন্দেহ জেগেছিল ইয়েতির রহস্যের সাথে ভাল্লুকের দৃঢ় সম্পর্ক আছে। সংগৃহীত ছবি

মেসনারের মনের পর্দায় বারবার ভেসে ওঠে বাস্তবের ইয়েতির সাথে তার সাক্ষাতের কথা; তার চলাফেরা, ভঙ্গীর সাথে হিমালয়ের কোন প্রাণীটার মিল আছে, এমনকি লাসার চিড়িয়াখানাতেও ঢুঁ মারেন সেই রহস্যমানবের সন্ধানে। বারংবার কথা বলেন তার পুরনো বন্ধু দালাই লামার সাথে। 


অবশেষে দৃঢ় সিদ্ধান্তে আসতে সক্ষম হত পর্বতারোহীদের রাজা। প্রথম থেকে যদিও মেসনারের মনে সন্দেহ জেগেছিল ইয়েতির রহস্যের সাথে ভাল্লুকের দৃঢ় সম্পর্ক আছে, বিশেষত তাদের কিছুক্ষণ দুই পায়ে হাঁটার ক্ষমতা, নিশাচরপ্রবৃত্তি, যেকোনো খাবার খাওয়ার অভ্যাস, কৌতূহলী স্বভাব যার অনেক কিছুই ইয়েতির সাথে মিলে যায়। কিন্তু হিমালয়ের এই অঞ্চলে একাধিক ধরনের ভাল্লুক বাস করে, ঠিক কোন ধরনের ভাল্লুক থেকে এই গুজবের শুরু? এর দাবিদার ছিল তিব্বতের নীল ভাল্লুক Tibetan blue bear (Ursus arctos pruinosus), কালো ভালুক আর অতি-বিরল হিমালয়ের বাদামী ভাল্লুক, যাকে অনেকে লাল ভালুক বলেও অভিহিত করে। 


এই ব্যাপারে মেসনার ভালুকের পায়ের পাতার দিকে বেশি গুরুত্বারোপ করেন, কোন ধরনের ভালুকের পা থেকে বরফের ওপর হাঁটলে তা ইয়েতির পায়ের ছাপের মত হতে পারে, সেই সাথে দুই পায়ে দাঁড়ানো অবস্থায় তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের চেষ্টা চালান, এবং চুলচেরা বিশ্লেষণের পর সিদ্ধান্তে উপনীত হন- হিমালয়ের বাদামী ভালুকই Himalayan brown bear, Ursus arctos isabellinus ইয়েতির কিংবদন্তীর পিছনের মূল ভিত্তি, বাস্তবের রক্তমাংসের প্রাণী।


সবার শেষে দালাই লামার সাথে একবার দেখা করে তিনি বলেন, আপনার নিশ্চয় জানা আছে ইয়েতির কিংবদন্তী ভালুকের সাথে সম্পর্কিত, তাই না? মুচকি হেসে দালাই লামা চোখ টিপে বলেন- ঠিকই ধরেছ, কিন্তু কে বিশ্বাস করবে তোমার কথা! 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.