নানা নামে পরিচিতি, আছে অবাক করা ভেষজ গুণ

 


ODD বাংলা ডেস্ক: বাড়ির পাশে ঝোপ-ঝাড়ে অযত্ন- অবহেলায় বেড়ে ওঠে গাছটি। নাম কাকজাম। দেশের নানা অঞ্চলে এটি ছাগল লেদা, কাকফল, কাকজাম, হামজাম, ছাগলবড়ই, ছেরাবেরা, কাউয়াঠুঁটি, আমঝুম, আমজাম, খেজুরজাম, ভূতিজাম, কাজলঘড়ি ইত্যাদি নামেও পরিচিত। এর আছে অবাক করা বেশ কিছু ভেষজ গুণ। তবে আজকাল আর এ গাছ-ফল দেখা যায় না। নানা কারণে আজ কাকজাম যেন বিলুপ্ত প্রায়।

গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Lepisanthes rubiginosa। ইংরেজি নাম Rusty sapindus। গাছটি Sapindaceae পরিবারের একটি প্রজাতি।


এই ফল গাছটির আকার মধ্যম আকৃতির। পাতার গড়ন আম পাতার মতো হলেও অনেক নরম। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পাকা ফল পাওয়া যায়। গাছে থোকা আকারে ফল ধরে। কাঁচা অবস্থায় সবুজ, আধপাকা অবস্থায় গোলাপি-লাল, পাকলে উজ্জ্বল কালো রং ধারণ করে। দেখতে অনেকটা কালো জামের মতো, কিন্তু আকারে অনেক ছোট, অনেকটা ক্ষুদি জামের মতো। 


ফলটি কাঁচা ও আধপাকা অবস্থায় ভীষণ কষ, পাকলে কষ ভাবটা অনেকটাই কেটে যায়। বেশ মিষ্টিও হয়। ফলটির আছে ঔষধি গুণ। খেলে মুখের রুচি বাড়ে, ক্ষুধা বাড়ে, মলসঞ্চারক, জিভ ও মুখের ঘা এবং রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে।


গাজীপুরের কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর উপজেলার গ্রামাঞ্চলে এই ফলটি ছাগল লাদি, ছাগল নাদি কিংবা ছাগল লেদি নামেই চেনে। পাকা ফল দেখতে অনেকটা ছাগলের বিষ্ঠার মতো বলে এর এমন নামকরণ করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের বসবাস করে এমন কোনো শিশু-কিশোর পাওয়া যাবে না, যে এই ছাগল লাদি ফলের স্বাদ নেয়নি। অনেকের দুরন্ত কৈশোর কেটেছে এই ছাগল লাদি ফলের গাছ বেয়ে ও ফল খেয়ে। 


গাজীপুরের নানা জায়গায় গাছে গাছে ঝুলছে টসটসে এই ফল। আধা পাকা অবস্থাতেই গ্রামের শিশু-কিশোররা খেয়ে সব সাবাড় করে ফেলে। এটা পাখিদের প্রিয় ফল হলেও মানব শিশুরা খেতে যেন বেশ পছন্দ করে। তবে এ বছর পাখিরা কিছুটা ছাড় দিয়েছে। অর্থাৎ আধা-আধা। অর্ধেক পাখিরা খেলেও শিশুদের জন্য রেখেছে অবশিষ্ট।


বর্তমানে রাজধানী ঢাকার উত্তরার ব্যবসায়ী শহিদুল সরকার। তিনি কালীগঞ্জ পৌর এলাকার তিন নম্বর ওয়ার্ডের ভাদার্ত্তী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, কিশোর বয়সে সারাদিন বন-জঙ্গলেই পড়ে থাকতাম। আমরা দল বেঁধে এই পাকা ছাগল লাদি পেরে ভাগ করে এক সঙ্গে বসে খেতাম। তবে সেগুলো অনেক অতীত। বর্তমান প্রজন্ম এই ফল বা গাছ চেনেই না। আগের মতো খুব বেশি চোখেও পড়ে না আজকাল। 


ফলটি নিয়ে কথা হয় কালীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মসলিন কটন মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রাফিয়া ফাউজি রজতের সঙ্গে। সে জানায়, তার কাছে ফলটি খেতে খুব ভালো লাগে। দেখতেও খুব চমৎকার। তাদের ঘরের পেছনে একটি গাছ আছে। ওটাতে বেশ ফল ধরেছে। তবে প্রতিদিন পাখি ও কাঠবিড়ালি খায়। ঘরের জানালা দিয়ে ওগুলো দেখতে তার খুব ভালো লাগে। আবার জানালা দিয়ে লাঠির মাথায় কিছু বেধে সে নিজেও ওই ফল পেরে খায়।


কালীগঞ্জ রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ (আর.আর.এন) পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাশেদ্বীন সরকার রূপণ জানায়, তাদের বাড়ির পাশে দুটি ছাগল লাদি গাছ রয়েছে। ঐ দুটি গাছ থেকে আধপাকা অবস্থায় গ্রামের ছেলে-মেয়েরা ফল নিয়ে থাকে। তবে সে চেষ্টা করে ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে ওই ফলটি রক্ষা করতে। কারণ, মানুষে খেয়ে নিলে পাখিরা খাবে কি? 


ময়মনসিংহ বিভাগের ভালুকা রেঞ্জ থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া সাবেক বন কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের দেশে এই ফল গাছটি এখন বিলুপ্তির পথে। কারণ বন-জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করায় এই ফলের গাছ এখন খুব বেশি দেখা যায় না। তবে জীববৈচিত্র্য রক্ষাকল্পে এই গাছটি সযত্নে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.