কেন খুন হতে হল মালদহ ইংরেজবাজারের বাসিন্দা কলেজ ছাত্রী সুতপাকে, পিছনে রয়েছে কোন কারণ



ODD বাংলা ডেস্ক:  এই মুহূর্তে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এক যুবকের ধারাল অস্ত্র এবং খেলনা পিস্তল উচিয়ে আস্ফালনের ছবি। এই ঘটনা বহরমপুরে, সোমবার সন্ধ্যায়। এই যুবকের নাম সুশান্ত চৌধুরী। যার বিরুদ্ধে সেই সময় রাস্তার উপরে প্রাক্তন প্রেমিকাকে খুন করার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কি কারণে এমন কাণ্ড ঘটাল সুশান্ত? এই নিয়ে চলছে আলোচনা। 

 

মালদহের ইংরেজবাজার থানা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন সুতপা চৌধুরী। এলাকার এয়ারভিউ অ্যাপার্টমেন্টে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। এই পাড়াতেই পিসির বাড়িতে থাকত সুশান্ত চৌধুরী। পাটনায় একটি কলেজে এমসিএ নিয়ে পড়াশোনা করছিল। পড়াশোনায় মেধাবী সুশান্তের সঙ্গে সুতপার দীর্ঘদিন ধরেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে পরিবার থেকে দাবি করা হয়েছে। এমনকী পাড়ার কিছু বাসিন্দারাও জানিয়েছেন সুশান্ত ও সুতপার মধ্যে একটা সম্পর্ক ছিল। 


পিসির বাড়িতে থাকলেও সুশান্ত-র আদি বাড়ি ছিল পুরাতন মালদার খুনি বাথানিতে। বাবা পুলিশে চাকরি করতেন। কিন্তু সুশান্ত ছোট থেকেই বাইরে বাইরে পড়াশোনা করেছে। স্কুলের গণ্ডী পেরিয়ে তিনি পিসির বাড়িতে পাকাপাকি থাকতে শুরু করেছিল। সেখান থেকেই পাটনায় পড়তে যান বলে খবর। পিসির বাড়িতে থাকার সময়ই সুতপার সঙ্গে সুশান্তের পরিচয় হয়েছিল। কিন্তু, সম্প্রতি সুশান্তের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছিলেন সুতপা। এরপর থেকেই সুশান্ত মানসিক হতাশায় ভুগতে শুরু করেছিল বলে পরিবারের দাবি। আপাত দৃষ্টিতে শান্ত স্বভাবের সুশান্তের মধ্যে চারিত্রিক পরিবর্তন হতে থাকে। কথায় কথায় রেগে যাওয়া থেকে শুরু করে কথা বলা বন্ধ করে দেওয়া- এমন সব আচরণ নাকি শুরু করেছিল সুশান্ত। এমনকী বাবার সঙ্গেও কথা বলতেন না। ফোনে একাধিক নম্বর ব্লক করে দিয়েছিলেন বলেও জানা গিয়েছে। 


অন্যদিকে, খুন হওয়ার ছাত্রী সুতপা চৌধুরীর বাবা-র অভিযোগ, প্রায়শই মেয়ে অভিযোগ করছিল যে সুশান্ত তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছে এবং হুমকি দিচ্ছে। এই নিয়ে বিতর্ক এতটাই বৃদ্ধি পায় যে ইংরেজবাজার পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রসেনজিৎ বোসের মধ্যস্থায় সুতপা এবং তাঁর বাবার সঙ্গে সুশান্ত ও তাঁর পরিবারের কথা হয়েছিল। সুশান্তকে সুতাপার থেকে দূরে থাকতে এবং ফোন না করার কথা নাকি জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। 


জানা গিয়েছে, কিন্তু সুতপার প্রতি আসক্তি কোনওভাবেই দূর করতে পারেনি সুশান্ত। ফেসবুকে এমন এমন সব পোস্ট করতেন যাতে সুতপার নাম না থাকলেও তাতে যথেষ্টই হুমকি এবং শাসানি থাকত। সুশান্তর অভিযোগ ছিল সুতাপা তাকে ব্যবহার করেছেন। একাধিক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে গিয়েছিলেন সুতপা, এমন অভিযোগও করেছিল সুশান্ত। এমনকী, সোমবার সন্ধ্যায় বহরমপুরের গোরাবাজারের সূর্য সেন স্ট্রিটে যখন সুতাপাকে খুন করে সুশান্ত তখন তাঁকে চিৎকার করে কিছু বলতে শোনা যায়। পরে, স্থানীয় কিছু মানুষের করা ভিডিও এবং সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় সুশান্ত বলছে,'ও আমাকে ফাঁসিয়েছিল। একসঙ্গে ৫টা ছেলের সঙ্গে প্রেম করত। ওর এমনই শাস্তি পাওয়া উচিত। ওর বাবা কোথায়। আমি তাকে ফোন করছি।' 


এদিকে, এই ঘটনায় বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকায় সূর্য সেন স্ট্রিটে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ভর সন্ধ্যায় এক কলেজ ছাত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যা সকলকেইউ নাড়িয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার সকালেই সূর্য সেন স্ট্রিটের যে মেসে সুতপা থাকতেন সেখানে থাকা বাকি ছাত্রীদের অভিভাবকরা চলে আসেন। তাঁরা নিজেদের মেয়েকে নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা লাগান। এইসব অভিভাবকরা জানান, সুতপার নৃশংস খুনে এমনিতে তাঁদের সন্তানরা আতঙ্কিত। তারপরে এই মেসে যে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা কোনওভাবেই স্বাভাবিক নয়। 


বহরমপুর গার্লস কলেজে বায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করতেন সুতপা। সোমবার বিকেলে তিনি স্থানীয় একটি মলে গিয়েছিলেন শপিং করতে। সেখান থেকে সন্ধ্যা নাগাদ ফিরে আসেন তিনি। মেসে ঢুকতেই সুতপার ফোনে একটা ফোন এসেছিল বলে জানা গিয়েছে। এই ফোনে কিছুক্ষণ কথা বলার পর সুতপা বাইরে বেরিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রাস্তায় বেরিয়ে কিছুটা এগোতেই পিছন থেকে সুতপার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে সুশান্ত। এরপর হাতে থাকা ধারাল অস্ত্রের এলোপাথাড়ি কোপ দিতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে রাস্তায় রক্তাক্ত হয়ে পড়ে যায় সুতপা। স্থানীয়রা সুতপার দিকে এগনোর চেষ্টা করতেই সুশান্ত ছুরি নিয়ে হুমকি দিতে থাকে। এরপর সে পিস্তল বের করে হুমকি দিতে দিতে এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। রাত ১০টা নাগাদ সুশান্তকে মুর্শিদাবাদের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে সামশেরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়ার সময় সে মোটরবাইকে করে মালদহের দিকে পালাচ্ছিল বলে জানা গিয়েছে। রক্তাক্ত সুতপাকে ততক্ষণে বহরমপুর মেডিক্য়াল কলেজের চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। বহরমপুর থানা থেকেও সুতপার বাবাকে ফোন করে অবিলম্বে মালদহ থেকে চলে আসতে বলা হয়েছিল। পরে পুলিশ জানায় সুশান্ত-র কাছ থেকে একটি ব্যাগ পাওয়া গিয়েছে। সেই ব্যাগে একটু ব্লেড ও রক্তমাখা ছুরি ছিল। এছাড়াও একটি খেলনা বন্দুক ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয়েছে।   

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.