শরীরের যে অংশটির বয়স সবচেয়ে দ্রুত বাড়ে
ODD বাংলা ডেস্ক: মানবদেহের সব অংশের বয়স কিন্তু একই হারে বাড়ে না। তবে এই তারতম্য অতি নগণ্য; আমলে না নিলেও চলে। তবু মাথায় রাখতে পারেন, শরীরের অন্যান্য অঙ্গের চেয়ে আপনার মাথার বয়স তুলনামূলক দ্রুত বাড়তে থাকে। পরিমাণটা এতই সামান্য যে ৭৯ বছর বেঁচে থাকলে তা এক সেকেন্ডের ৯ হাজার কোটি ভাগের একাংশের সমান হবে। অবশ্য এর মধ্যেও ‘কিন্তু’ আছে।
গবেষকেরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন আলবার্ট আইনস্টাইনের তত্ত্বের ওপর নির্ভর করে। আইনস্টাইন প্রথম দেখিয়েছিলেন, কেউ ২০ মাইল বেগে ছুটলে সময় যে হারে এগোবে, হামাগুড়ি দিয়ে চললে কিংবা এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলে সে হারে এগোবে না। অর্থাৎ গতির সঙ্গে বদলায় সময় এগোনোর হার।
আইনস্টাইন আরও বলেছিলেন, মহাকর্ষীয় কেন্দ্রের সঙ্গে দূরত্বের ওপরও সময় এগোনোর এই হার নির্ভর করে। পৃথিবীর ক্ষেত্রে এর কেন্দ্র থেকে যতটা দূরত্ব বাড়বে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যতটা উঁচুতে উঠবেন, সময় তত দ্রুত এগোবে। সে কারণেই মহাকাশে ধাবমান রকেটে সময় এগোনোর হার পৃথিবীর চেয়ে তুলনামূলক বেশি হবে।
তবে গবেষকেরা দূর মহাকাশের সঙ্গে পৃথিবীর বুকে চরে বেড়ানো মানুষের সময়ের তফাত তুলনা করেই সন্তুষ্ট থাকলেন না। তাঁরা পরীক্ষণের ক্ষেত্র ছোট করলেন। দেখালেন, এমনকি সিঁড়ির বিভিন্ন ধাপেও সময় এগোনোর হার ভিন্ন। অর্থাৎ সিঁড়ির পাঁচ ধাপ ওপরে থাকা মানুষের বয়সও তুলনামূলক দ্রুত বাড়বে।
২০১০ সালে ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে ব্যাপারটি তুলে ধরলেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজির ওই গবেষক দল। এ ধরনের কাজে অপটিক্যাল ঘড়ি ব্যবহার করা হয়। তাঁরা দেখান, দুটি ঘড়ির মধ্যে উচ্চতার পার্থক্য যদি এক ফুটও হয়, তবু সে দুটির চলার হারে সামান্য তারতম্য থাকে।
পরীক্ষণে ১৩ ইঞ্চি উচ্চতার ব্যবধানে দুটি অপটিক্যাল ঘড়ি স্থাপন করেন এনআইএসটির জেমস চিন-ওয়েন চু এবং তাঁর সহকর্মীরা। পৃথিবীর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র থেকে কিছুটা দূরে থাকায় ওপরের ঘড়িটিতে মহাকর্ষজ বলের প্রভাব তুলনামূলক কম ছিল। এতে ওপরের ঘড়িতে সময় পেরিয়েছে কিছুটা দ্রুত হারে। তবে ঘড়ি দুটির সময় এগোনোর পার্থক্য এতই সামান্য যে ৭৯ বছর ধরে এই পার্থক্য মাপলে সব মিলিয়ে তা ১ সেকেন্ডের ৯ হাজার কোটি ভাগের একাংশের সমান হবে।
আগেই বলেছিলাম, মাথা চুলকে পাগল হওয়ার দরকার নেই। সঙ্গে বলেছিলাম, আরও ‘কিন্তু’ আছে। কারণ, সময়ের পার্থক্যের পেছনে মূল কারণ উচ্চতার পার্থক্য। মাথা শরীরের বাকি অংশ থেকে উঁচুতে থাকে বলেই এমন কারণ। তবে কেউ যদি একজীবন বিছানায় চিত হয়ে কাটিয়ে দেন কিংবা হাতে হেঁটে জীবন পার করে দেন, তো ব্যাপারটি নিশ্চয়ই ভিন্ন হবে।
Post a Comment