রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ: দিনে কয়বেলা খান, কী কী খাবার খান?
ODD বাংলা ডেস্ক: ব্রিটেনের বর্তমান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার পাচক বা রাঁধুনি ছিলেন ড্যারেন ম্যাকগ্রেডি। দীর্ঘদিন রানির খাবার প্রস্তুত করা এ শেফ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রানি কী কী খাবার খেতে পছন্দ করেন, দিনে কয়বেলা খান এসব তথ্য। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক ব্রিটেনের বর্তমান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে-
ড্যারেন ম্যাকগ্রেডি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ব্যক্তিগত পাচক বা রাঁধুনি হিসেবে ১৫ বছর বাকিংহাম প্যালেসে কাজ করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় দুইবার রানির ভ্রমণের সময় তিনিও সঙ্গে গিয়েছিলেন। ফোর্ড, রিগ্যান, বুশ সিনিয়র, ক্লিনটন, ও বুশ জুনিয়র-এ পাঁচজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের ইংল্যান্ড ভ্রমণের সময় তাদের জন্যও রান্না করেছিলেন ড্যারেন ম্যাকগ্রেডি।
ইংল্যান্ডের রয়্যাল পরিবারের আরো অন্য সদস্যরাও ম্যাকগ্রেডির রান্না খেয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রিন্সেস ডায়ানা, এবং তার দুই পুত্র উইলিয়াম ও হ্যারি। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট ডায়ানার মৃত্যুর দিনও তার জন্য রান্না করেছিলেন এ শেফ। সেদিন প্রিন্সেসের জন্য রান্না সেরে খাবার প্রস্তুত করে বসেছিলেন তিনি, কিন্তু সে খাবার খেতে আর কখনো ফেরেননি প্রিন্সেস। নিজের লেখা বই 'ইটিং রয়্যালি: রেসিপিস অ্যান্ড রিমেমব্রেন্সেস ফ্রম আ প্যালেন কিচেন'-এ তিনি রানির খাদ্যাভাস, পছন্দ-অপছন্দের খাবার ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন।
দিনে কয়বেলা আহার করেন রানি?
ম্যাকগ্রেডি জানিয়েছেন, দিনে চারবেলা খাবার খান দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তবে প্রতিবেলাই খুব কম পরিমাণেই খাবার খান তিনি। ১৯৮২ ও ১৯৯৩ সালে ম্যাকগ্রেডি যখন রানির ব্যক্তিগত শেফ ছিলেন, তখন রানি সকালের জলখাবার, দুপুরের খাবার, বিকেলের চা, ও রাতের খাবার খেতেন। সকালের নাস্তায় রানি চা, বিস্কিট, ও এক বাটি সিরিয়াল খান। এরপর দুপুরের খাবারে তার পাতে থাকে গ্রিলড ফিশ, অল্প রান্না করা স্পিনিচ শাক বা কুরজেট। এছাড়া মাঝেমধ্যে গ্রিলড চিকেনও খান তিনি। এরপর বিকেলের চা পানের পালা। চায়ের সঙ্গে জ্যাম আর স্কোন উপভোগ করেন তিনি।
পৃথিবীর যে প্রান্তেই যান না কেন, বিকেলের চা না হলে চলেই না রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের- এমনটাই জানিয়েছেন শেফ ম্যাকগ্রেডি। ম্যাকগ্রেডি যখন প্রাসাদে রান্না করতেন, তখন সেখানে ২০ জন রাঁধুনি ছিলেন। রাজপ্রাসাদের নিয়ম অনুযায়ী, প্রধান রাঁধুনি সপ্তাহে দুইবার রানিকে একটি খাবারের তালিকা দিয়ে দিতেন। সেখান থেকে রানি খাবার পছন্দ করতেন। তবে কোনো খাবার খাওয়ার পরে ভালো না লাগলে সেটা শেফদের মুখের ওপর কখনো বলেননি রানি। ম্যাকগ্রেডি জানান, এরকম ক্ষেত্রে একটি নোটবুকে ছোট করে নোট লিখে রাখতেন রানি। 'এ খাবার আর খেতে চাই না'- এ ধরনের কথা লেখা থাকতো খাতাটিতে।
মশলাদার খাবার কম খেলেও মিষ্টি জাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে রানি বিশেষ বাছবিচার করেন না বলেই জানিয়েছেন ম্যাকগ্রেডি
মশলাদার খাবার কম খেলেও মিষ্টি জাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে রানি বিশেষ বাছবিচার করেন না বলেই জানিয়েছেন ম্যাকগ্রেডি
রানির প্রিয় খাবার কী কী?
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মোরকেম বে পটেড শ্রিম্প (চিংড়ি) আর টোস্ট খেতে ভীষণ পছন্দ করেন। চিংড়িগুলোকে মশলাদার মাখন দিয়ে রান্না করা হয়। এরপর গরম গরম টোস্টের সঙ্গে এগুলো খান তিনি। মশলাদার খাবার কম খেলেও মিষ্টি জাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে রানি বিশেষ বাছবিচার করেন না বলেই জানিয়েছেন ম্যাকগ্রেডি। শারবোনেল এট ওয়াকার, বেনডিক্স, প্রেস্টাট- ইত্যাদি চকলেট রানির দারুণ পছন্দের। ম্যাকগ্রেডির সময়কার দ্বিতীয় এলিজাবেথের আরেকটি প্রিয় খাবার ছিল ক্রোক মঁসিয়ে স্যান্ডউইচ। গ্রুইয়ের পনির, হ্যাম, ও ডিম সহযোগে এ স্যান্ডউইচ খেতে পছন্দ করতেন তিনি। দিনে চারবেলা স্বল্পাহারের পাশাপাশি খানিকটা মদও পান করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তুতো বোন মার্গারেট রোডসের তথ্যমতে, রানির পছন্দের পানীয় হচ্ছে জিন ও ডাবনেট বা শ্যাম্পেন।
রাজপ্রাসাদের প্রধান খাবার কোনটি?
ম্যাকগ্রেডির মতে, তার সময়ে সপ্তাহের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার ছিল শুক্রবারের মাছ ও চিপ। 'সবাই মাছ ও চিপ পছন্দ করতো। বাকিংহামের ৩০০-এর মতো কর্মী, সবাই শুক্রবারে লাঞ্চে মাছ ও চিপ খেত,' বলেন এ পাচক। হ্যালো! ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাকগ্রেডি জানিয়েছিলেন, 'রানির শেফ হিসেবে কাজ শুরু করার পর যেটি আমাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছিল তা হলো, আমাকে রাজপরিবারের সদস্যদের জন্য খাবার না বানিয়ে অন্যকিছু বানাতে হচ্ছিল। প্রতিদিন আমাকে রানির কুকুরদের জন্য গরু, কলিজা, মুরগি এসব কাটতে হতো। পরে জানতে পেরেছিলাম, রানির কাছে এটা দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাবারের আয়োজন ছিল।' এছাড়া চাকরিজীবনের প্রথমদিকে বালমোরাল দুর্গে কাজ করার সময় ঘোড়াদের জন্য গাজরও কেটেছিলেন শেফ ম্যাকগ্রেডি।
রানি কড়া গন্ধযুক্ত খাবার যেমন রসুন বা পেঁয়াজ পছন্দ করেন না। বাকিংহাম প্যালেসে কখনো রসুন ব্যবহার হয়নি বলে জানিয়েছেন ম্যাকগ্রেডি। রান্নার ব্যাপারে ম্যাকগ্রেডি বলেন, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনি কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্টে রান্না না, আপনি কেবল একজনের জন্য রান্না করছেন। তাই সে ব্যক্তির স্বাদটাই সবচেয়ে মুখ্য। প্রিন্স ফিলিপ প্রসুর রসুন ও মশলাসমৃদ্ধ খাবার খেতে পছন্দ করেন বলে জানিয়েছেন ম্যাকগ্রেডি। খাবারের ব্যাপারে বেশ রসিক প্রিন্স। কোথাও ভ্রমণে রাজপরিবারের সদস্যদের জন্য শেলফিশ বা রেয়ার মিট নিষিদ্ধ ছিল। কারণ এসব ভ্রমণের সময় কেউ যেন ফুড পয়জনিং-এর স্বীকার না হন, সেদিকটাও মাথায় রাখতে হতো।
ম্যাকগ্রেডির ভাষ্য অনুযায়ী, দারুণ রান্না করতে পারেন প্রিন্স ফিলিপ। রাজপরিবারের অন্য অনেক সদস্য যেমন উইলিয়াম, কেট, মেগান ও হ্যারি সবাইই রান্না করতে পছন্দ করেন। তবে পারতপক্ষে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ান না রানি। রানি কখনো ফাস্ট ফুড অর্ডার করেননি। অবশ্য রান্নাঘরে ২০ জন পাচক বা রাঁধুনি থাকলে আর কেনইবা ফাস্ট ফুড বাইরে থেকে আনানো লাগবে। রাজপ্রাসাদের সবচেয়ে বড় ভোজ হয় ক্রিসমাসের সময়। তবে তখন ঐতিহ্যবাহী খাবারদাবারেরই আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর একই রান্না করেন পাচকেরা। ক্রিসমাসে টার্কি রান্না করতে করতে একঘেয়েমি বোধ করতেন বলে জানিয়েছেন ম্যাকগ্রেডি। মা দিবসও বিশেষ উদযাপন করেন না রানি। তবে প্রায়ই সপ্তাহশেষে উইন্ডসর দুর্গে যান তিনি, সেখানে বিশেষভাবে বানানো ডিম দিয়ে নাস্তা করেন তিনি। ম্যাকগ্রেডি আরো নিশ্চিত করেছেন, বাকিংহামের সদস্যরা হ্যালোউইনও উদযাপন করেন না।
Post a Comment