দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের রূপকার মোহসীন এবার দাদাগিরিতে

 


ODD বাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশের দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের রূপকার হিসেবে পরিচিত মোহসীন-উল-হাকিম। পেশায় তিনি সাংবাদিক। কাজ করছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে। পেশাগত ব্যস্ততার পাশাপাশি দেশকে ভালোবাসার অংশ হিসেবে নিরন্তর তিনি চেষ্টা চালিয়েছেন সুন্দরবনকে দস্যুশূন্য করতে। অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সশস্ত্র দস্যুদের নিরস্ত্র ও দস্যুপনায় নিরুৎসাহিত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। তার এমন নির্ভীকতার কথা ছড়িয়েছে বাংলাদেশের বাইরেও। তাইতো এবার মোহসীন ডাক পেয়েছেন ‘দাদাগিরি’র মঞ্চে।

সুন্দরবনের জলে-জঙ্গলের দস্যুদের ডেরায় বছরের পর বছর ছুটে গিয়েছে মোহসীন-উল-হাকিম। ঘুরে রেড়িয়েছেন জলদস্যুদের সঙ্গে। তাদের আস্তানায়, তাদের ডেরায় কাটিয়েছেন দিনের পর দিন। তাদের নৌকায় ছুটে বেড়িয়েছে সুন্দরবনের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। কয়েকবার কোস্টগার্ডের গুলির মুখেও পড়েছেন। চেষ্টা চালিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় সুন্দরবনকে দস্যুশূন্য করতে। 


এমন কাজ কখনোই সহজ ছিল না। স্থানীয় কিছু সিণ্ডিকেট নিজেদের স্বার্থের জন্য কখনোই চায়নি সুন্দরবন দস্যু মুক্ত হোক। তারা বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে মোহসীনকে। কিন্তু নিজ লক্ষ্য থেকে একবিন্দুও টলেননি মোহসীন। তিনি কখনোই ভুলে যাননি নিজের পেশাদারিত্ব। ভুলে যাননি যে তিনি একজন সাংবাদিক।   


বেশ কাঠখড় পোড়ানো মোহসীন অবশেষে রক্ষা করতে পেরেছেন সুন্দরবনের সৌন্দর্য। ২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে সুন্দরবনের মোট ৩২টি বাহিনীর দস্যু সদস্যরা আত্মসমর্পণ করেছে। আর এ আত্মসমর্পণের নেপথ্যে সরকার ও জলদস্যুদের মাঝে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছেন সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম।


বিষয়টি আলোচিত হয়েছে পৃথিবীজুড়ে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের দাদা খ্যাত সৌরভ গাঙ্গুলি মোহসীন-উল-হাকিমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে দুই বাংলাতেই জনপ্রিয় ভারতীয় চ্যানেল জি বাংলার জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘দাদাগিরি’তে। ওই অনুষ্ঠানে হাকিমকে অভিহিত করা হয়েছে, ‘নিজের দেশকে জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত করার নায়ক’ হিসেবে। দাদাগিরির এই বিজ্ঞাপন কদিন ধরে চলছে জি-বাংলার নানা প্রচারমাধ্যমে। 


বিষয়টি প্রসঙ্গে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘দাদাগিরি’ থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বেশ আগে। কোভিডসহ নানা কারণে সময় মেলাতে পারছিলাম না। তবে শেষ পর্যন্ত সময় মিলেছে।’’


তিনি আরো বলেন, ‘ভারতীয় টেলিভিশনের অনুষ্ঠান হলেও বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে জনপ্রিয় ‘দাদাগিরি’। সম্মানসূচক এ আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছি। বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছি। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিত্ব করেছি। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের পথের নানা গল্প।’


কলকাতার রাজারহাটের ডিআরার স্টুডিওতে শ্যুটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে দাদাগিরির এই বিশেষ পর্বটি প্রচারিত হবে আগামী ৮ মে, বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায়।


মোহসীনের ছেলেবেলা কেটেছে নওগাঁতে। প্রাথমিকের হাতেখড়ি নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে। এরপর রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি মোহসীন তার দীর্ঘদীনের সুন্দরবনের অভিজ্ঞতা ও জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের ঘটনা নিয়ে 'জীবনে ফেরার গল্প' নামের একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া সুন্দরবনের জীবন নিয়ে তার তৈরি নানা ভিডিও কন্টেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.